Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
COVID-19 Infection

কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের কাপ জনতার হাতেই

রাজ্যে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রতি দিন তিন হাজার নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম ‘কোবাস’ যন্ত্র রয়েছে নাইসেডে।

ফাইল চিত্র।।

ফাইল চিত্র।।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৫৮
Share: Save:

দু’সপ্তাহ আগে সংযমের পরীক্ষায় বসেছিলেন বঙ্গবাসী। মণ্ডপ ফেরত সমীক্ষা ভাইরাসের মোকাবিলায় জনতাকে এগিয়ে রেখেছিল। শেষ পর্যন্ত বঙ্গে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ‘উৎসব কাপ’ নিয়ে গেল জনতাই। যার প্রেক্ষিতে দীপাবলিতে সতর্ক থাকার কথা স্মরণ করিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কথা শুনলে সুফল মেলে!

ঘটনাচক্রে, এ দিন‌ই রাজ্যে সুস্থতার হার এই প্রথম নব্বই শতাংশের (৯০.১১) গণ্ডি অতিক্রম করেছে।প্রতি বছরের মতো এ বছরও পুজো পরিক্রমা স্বমহিমায় বজায় থাকলে আক্রান্তের সংখ্যা কোথায় পৌঁছবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রের চিকিৎসক-সহ নাগরিক সমাজের বড় অংশ। চিকিৎসকদের আবেদন, হাইকোর্টের রায়ে কতটা কাজ হবে তা জানতে ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কারণ, মানবদেহে ভাইরাস প্রবেশ করার পরে তার লক্ষণ ফুটে ওঠার প্রশ্নে ১৪ দিন সময়কে ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’ ধরা হয়। বিহার ভোটের ফলাফল ঘোষণার দিনই শেষ হয়েছে বঙ্গের ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’। এই ক’দিনে চার হাজারের নীচে রয়েছে প্রতি দিনের আক্রান্তের সংখ্যা। সংক্রমণের রেখচিত্র পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের তরফে পুণ্যব্রত গুণ বলেন, ‘‘প্রচুর মানুষ চিকিৎসকদের কথা শুনেছেন। হাইকোর্ট কোন প্রেক্ষিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করেছেন।

আরও পড়ুন: ছটে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা ​

ফলে যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা এড়ানো গিয়েছে।’’ বেসরকারি হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক শিবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লকডাউনের থেকেও সংযমী হয়ে সাধারণ মানুষ সংক্রমণের ঢেউকে প্রতিহত করেছেন।’’ তবে পুজোর সাফল্যের সূত্র ধরেই দীপাবলি-কালীপুজোতে বাজির ব্যবহার নিয়ে সচেতন মনে পরিচয় দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। কার্ডিওথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকারের কথায়, ‘‘ঝাঁজ কমানো গিয়েছে বলতেই হবে। তবে তা যেন আত্মতুষ্টিতে পরিণত না হয়।’’

আরও পড়ুন: তোলা হল মোশারফের নিরাপত্তারক্ষী ​

এখানেই প্রতি দিনের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা যে সন্তোষজনক নয় তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কুণালবাবুর মতে, প্রতি দিন যে গড়ে পঁয়তাল্লিশ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যেও চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সরকারি আধিকারিক-কর্মীদের নমুনা আছে। সেই সকল রোগীরাও রয়েছেন, যাঁদের চিকিৎসা করার আগে আশ্বস্ত হতে পরীক্ষা করানো হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক শিবব্রতবাবু বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের মধ্যেও নমুনা পরীক্ষা করানোর প্রশ্নে অনীহা রয়েছে।’’

রাজ্যে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রতি দিন তিন হাজার নমুনা পরীক্ষা করতে সক্ষম ‘কোবাস’ যন্ত্র রয়েছে নাইসেডে। কিন্তু কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থায় রাজ্য আগের মতো নমুনা পাঠাচ্ছে না। নাইসেড অধিকর্ত্রী শান্তা দত্ত বলেন, ‘‘প্রথম বার ডেঙ্গি হওয়ার পরে দ্বিতীয় বার ডেঙ্গির সেরোটাইপ বদলালে খারাপ। প্রশ্ন হল, করোনার ক্ষেত্রে কী হবে?

সে বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত সিদ্ধান্তে আসতে দ্বিতীয় বার কেউ সংক্রমিত হচ্ছেন কি না জানতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে নমুনা পরীক্ষা না করালে তা কী ভাবে সম্ভব!’’ স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে। নমুনা পরীক্ষার নিরিখে রাজ্যে আক্রান্তের হার নিম্নমুখী। সংক্রমণের পরিসংখ্যানে বৃদ্ধি ঘটলে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ শেষে সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য ভবনের মূল লক্ষ্য স্পষ্ট করে তিনি জানান, বাড়িতে থাকা বয়স্ক মানুষদের যথাসময়ে হাসপাতালে আনার প্রশ্নে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন। তাঁর কথায়, ‘‘অ্যাক্টিভ রোগীদের মধ্যে প্রতি দিন গড়ে চার হাজার মানুষকে ফোন করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে ১০০-১৫০ জন আক্রান্ত পাওয়া যাচ্ছে, যাঁদের অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলানো প্রয়োজন। ১৫০ জনের মধ্যে ৩০-৪০ জনকে বাড়িতে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE