Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Jagdeep Dhankhar

রাজ্যের কোভিড তথ্য নিয়ে ফের মমতাকে তোপ ধনখড়ের

রাজ্যপাল যে প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যকে আক্রমণ করেছেন, তার উৎস  কেন্দ্রকে রাজ্যের পাঠানো একটি চিঠি ও তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া পরিসংখ্যান।

নিজস্ব স‌ংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২০ ১৭:১০
Share: Save:

করোনাভাইরাস নিয়ে রাজ্য তথ্য গোপন করছে বলে অভিযোগ তুললেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। টুইটারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে এ নিয়ে সরাসরি তোপ দেগেছেন তিনি। রাজ্যপালের বক্তব্য, কোভিড-১৯ নিয়ে তথ্য ধাপাচাপা দেওয়ার বদলে মুখ্যমন্ত্রী স্বচ্ছ ভাবে সব কিছু প্রকাশ করুন। পাল্টা প্রতিক্রিয়া এসেছে তৃণমূলের তরফ থেকেও। রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘ওঁর মেরুদণ্ড নেই। এর পর থেকে অশোক স্তম্ভের বদলে রাজ্যপালের পদ্মফুল ব্যবহার করা উচিত।’’

করোনার পরিসংখ্যান নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে গরমিলের অভিযোগ তুলে শনিবার টুইটারে রাজ্যপাল লেখেন, ‘‘৩০ এপ্রিল স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে ৫৭২ জন সক্রিয় করোনা আক্রান্তের উল্লেখ ছিল। আবার কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে, রাজ্যে ৯৩১ জন আক্রান্ত। মৃত এবং রোগমুক্তদের ধরলেও ৫৭২ এবং ৯৩১ এর মধ্যেকার এই ব্যবধান মেলানো সম্ভব নয়। ১ মে কোনও বুলেটিনই দেওয়া হয়নি।’’

রাজ্যপাল যে প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যকে আক্রমণ করেছেন, তার উৎস কেন্দ্রকে রাজ্যের পাঠানো একটি চিঠি ও তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া পরিসংখ্যান। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদান করোনা মোকাবিলায় কোন রাজ্যের কোন জেলা কোন জোনের অন্তর্ভুক্ত— তার তালিকা প্রত্যেক রাজ্যের মুখ্যসচিবকে পাঠান। এর পরেই এ রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবকে একটি চিঠি পাঠান। প্রশ্ন তোলেন, কেন্দ্রীয় তালিকা নিয়ে। চিঠিতে লেখেন, ওই তালিকা ত্রুটি পূর্ণ। কারণ রাজ্যের ৪টি জেলা রেড জোনে আছে, ১০টি নয়। ওই চিঠির সঙ্গে তিনি রাজ্যের কোন জেলায় কত জন এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন, তার একটা তালিকাও জুড়ে দেন। আর সেখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত।

রাজ্যপালের টুইট।

আরও পড়ুন: খারাপ ও কম জিনিস দেওয়ার অভিযোগে রেশন ডিলারের বাড়িতে হামলা-আগুন মুর্শিদাবাদে​

বিবেকের পাঠানো ওই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রেড এবং অরেঞ্জ জোন মিলিয়ে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৯৩১টি করোনা কেস রিপোর্ট হয়েছে। তার আগে বৃহস্পতিবার যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত মেডিক্যাল বুলেটিনে বলা হয়, রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭২। চিকিৎসার পর ছাড়া পেয়েছেন ১৩৯ জন। কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই পরিসংখ্যান নিয়েই বিতর্ক দেখা দেয়। প্রশ্ন ওঠে, মোট আক্রান্ত, মৃত এবং রোগমুক্ত সংখ্যাগুলির সম্মিলিত যোগফল হয় ৭৪৪। বিশেষ অডিট কমিটির কাছে যে ১০৫ জনের মৃত্যুর কারণ যাচাই করতে পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে সরাসরি করোনার জন্য মারা যান ৩৩ জন। বাকি ৭২ জনের মৃত্যু হয় কো-মর্বিডিটির কারণে। এই ১০৫ জনকে ধরলেও করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৮১৬। তাহলে ৯৩১ জনের হিসাব কোথা থেকে আসছে?

শুক্রবার সন্ধ্যায় নবান্নের তরফে বলা হয়, বিবেককুমারের চিঠিতে কিছু তথ্যে ভুল রয়েছে। তা সংশোধন করে আসল পরিসংখ্যান জানানো হবে। কিন্তু শনিবার বিকাল ৪টে পর্যন্ত নবান্নের তরফে সংশোধিত পরিসংখ্যান জানানো হয়নি। শুধু তাই নয়, শুক্রবার রাজ্য সরকারের তরফে প্রতি দিনের মতো করোনা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের টুইটার হ্যান্ডলেও করোনার প্রতি দিনের বুলেটিন দেওয়া হয়নি। শুক্রবার রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটটি ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ দেখাচ্ছিল। প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সেটি খোলা যাচ্ছিল না।

আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্র থেকে ফিরে উত্তরপ্রদেশে করোনা আক্রান্ত সাত পরিযায়ী শ্রমিক​

এ সব নিয়ে এ দিন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ শানালেন রাজ্যপাল। যদিও নবান্নের এক শীর্ষ আধিকারিকের দাবি, সামান্য একটা অনিচ্ছাকৃত ভুলকে হাতিয়ার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিতর্ক তৈরির করার চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল। বিষয়টি আদৌ সে রকম নয়। এ যাবৎ করোনা তথ্যের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে রাজ্য সরকার। যথা সময়ে সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হবে।

রাজ্যপালের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘এর পর থেকে অশোক স্তম্ভের বদলে রাজ্যপালের পদ্মফুল ব্যবহার করা উচিত। ১৯৫০ সালে ভারতীয় সংবিধান তৈরি হওয়ার পর কোনও রাজ্য এ রকম কেন্দ্রের আজ্ঞাবহ রাজ্যপাল দেখেনি, যিনি জাতীয় বিপর্যয়ের সময় তাঁর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নামে কুৎসা করতে ব্যস্ত থাকেন।’’ রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে শান্তনু আরও বলেন, ‘‘ওঁর মেরুদণ্ড সোজা নয়। তাই কেন্দ্রীয় সরকারকে জিজ্ঞেস করার সাহস নেই, কেন ত্রুটিপূর্ণ কিট পাঠানো হল? কেন ১৪৫ শতাংশ লাভ করা হল? র‍্যাপিড টেস্ট আবার কবে চালু হবে? কেন ভিটিএম বা আরএনএ এক্সট্র্যাক্টর পাঠাচ্ছে না? কেন রাজ্যের ন্যায্য পাওনা দিচ্ছে না?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE