ফাইল চিত্র
রাজ্য সরকারের বুলেটিন বলছে, পূর্ব বর্ধমানে ১৩ জনের করোনাভাইরাস মিলেছে। অথচ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, রবিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত আট জন। তার মধ্যে আউশগ্রামের গঙ্গারামপুরের যুবকের করোনা ‘পজ়িটিভ’ নিয়ে চিন্তা বেড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। তাঁর কোনও কলকাতা যোগও নেই। এই পরিস্থিতি গোষ্ঠী সংক্রমণের ইঙ্গিতবাহী কি না, তা জানতে সমীক্ষা শুরু হয়েছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, “গোষ্ঠী সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে কি না জানার জন্য ‘সেন্টিনেল সার্ভেল্যান্স’ করা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে দু’শো জনের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।’’ এতে শুধু গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়ানো হয়, করোনা পরীক্ষার হারও বাড়বে, মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর।
যদিও জেলাশাসক বিজয় ভারতীর দাবি, “জেলা থেকে ব্লক সব জায়গাতেই নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে। করোনা পরীক্ষার হার বেড়ে গিয়েছে।’’ জেলা প্রশাসনের তরফে নমুনা সংগ্রহের বিষয়টির তত্ত্বাবধান করছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক রজত নন্দ। তাঁর দাবি, “বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০-৪০০টি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, গত ১০ দিনে জেলায় চার হাজারের মতো নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মানুষজনের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। খণ্ডঘোষ ছাড়া সব জায়গাতেই আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা মানুষজনের রিপোর্ট এখনও পর্যন্ত ‘নেগেটিভ’ এসেছে, জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ভিন্রাজ্যের নার্সরা ফিরে যাওয়ায় সঙ্কট, নয়া নিয়োগের বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) করোনা সংক্রমণকে চারটি ধাপে ভাগ করেছে। এর মধ্যে একটি ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’। যেখানে সংক্রমণের উৎস আর খুঁজে পাওয়া যাবে না অর্থাৎ, সংক্রমণ গোষ্ঠীতে ছড়াবে। পূর্ব বর্ধমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় আপত্তি জানিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেখানে দাবি করা হয়েছে, বুলেটিন অনুয়ায়ী, জেলায় অত করোনা-আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি। বরং একটি ঘটনায় ‘নেগেটিভ’ বলে চিহ্নিত যুবককে ‘পজ়িটিভ’ বলে ই-মেল করা হয়েছে। আবার পশ্চিম বর্ধমানে আক্রান্তকে পূর্বের বাসিন্দা বলে চিহ্নিত হয়েছে। এ ছাড়া, তিনটে করোনা-আক্রান্তের সব সূত্রই কলকাতা। অথচ ঠিকানা দেখে তাঁদের জেলার তালিকায় যোগ করা হয়েছে বলেও জেলা প্রশাসনের দাবি।
স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) ‘সেন্টিনেল সার্ভেল্যান্স’ সমীক্ষার পরামর্শ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ‘হাই-রিস্ক’ (বেশি ঝুঁকিপূর্ণ) এবং ‘লো-রিস্ক’ (কম ঝুঁকিপূর্ণ) এই দু’টি ক্ষেত্র থেকে নমুনা সংগ্রহ হবে। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। কম ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছেন প্রসূতি-সহ অন্য রোগীরা। ঠিক হয়েছে, ওই সমীক্ষার জন্য দু’টি ক্ষেত্রে থেকে একশো জন করে প্রতি সপ্তাহে দু’শো জনের লালারস সংগ্রহ করে নাইসেডে পাঠানো হবে। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রের মধ্যে থাকবেন ২০ জন চিকিৎসক, ২০ জন নার্স, ২০ জন এএনএম, ৩০ জন আশাকর্মী এবং অনান্য স্বাস্থ্যকর্মী ১০ জন। কম ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রের মধ্যে ৫০ জন প্রসূতি ও ৫০ জন অন্য রোগী। তবে অন্য রোগীর মধ্যে কোনও ভাবেই ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস’ বা ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস’-এর রোগী থাকবেন না। কারণ, এঁদের করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা এমনিতেই বেশি।
জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা মনে করছেন, উপসর্গ থাক বা না থাক, সমস্ত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে থাকা মানুষজনের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করলে, গোষ্ঠী সংক্রমণ রোখার সম্ভাবনা বাড়ে। ওই পরীক্ষায় কেউ যদি সংক্রমিত না হন, তা হলে প্রাথমিক ভাবে ধরে নেওয়া যায় জেলায় গোষ্ঠী সংক্রমণ হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: যাতায়াত সহজ না হলে দোকানপাট খুলে হবেটা কি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy