Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Beleghata ID

রাজ্যের প্রস্তাবে ‘সায়’ নেই দুই করোনা বিশেষজ্ঞের

গত জুলাইয়ে নবান্নে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালকে সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ‘উৎকর্ষ কেন্দ্র’ হিসাবে গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৩৭
Share: Save:

সংক্রমক রোগ নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের চিকিৎসা পরিকাঠামো কোথায় দাঁড়িয়ে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কোভিডের আগমন। যার প্রেক্ষিতে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালকে সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ‘উৎকর্ষ কেন্দ্র’ হিসাবে গড়ে তোলার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু গোড়াতেই সেই পরিকল্পনা হোঁচট খেল। পরিকাঠামো বৃদ্ধির জন্য ভিন রাজ্যে কর্মরত সংক্রামক রোগের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে আনার পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

কিন্তু শুক্রবার নিয়োগের তালিকায় থাকা দুই সিনিয়র কনসালট্যান্ট জানিয়েছেন, তাঁদের পক্ষে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে কাজে যোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না!

গত জুলাইয়ে নবান্নে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালকে সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ‘উৎকর্ষ কেন্দ্র’ হিসাবে গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে সংক্রামক রোগের জন্য ‘অ্যাডভান্সড মাইক্রোবায়োলজি’ বিভাগ তৈরি করে সেখানে গবেষণা এবং পড়াশোনার কাজে ছ’টি আসন তৈরি করার কথাও বলেছিলেন তিনি। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির পরামর্শ মেনে সেপ্টেম্বরে আইডি হাসপাতালে সংক্রামক রোগে দু’টি সিনিয়র কনসালট্যান্ট এবং একটি জুনিয়র কনসালট্যান্টের পদ তৈরি করা হয়। গত ১৪ অক্টোবর সেই তিনটি পদে রাজ্যপালের অনুমোদনক্রমে তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করে স্বাস্থ্য দফতর। দুই সিনিয়র কনসালট্যান্ট হলেন চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নীতীন গুপ্ত। দু’জনই এইমস থেকে সংক্রামক রোগে ডিএম করেছেন। একদা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কর্মরত চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ভ্যাকসিন গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। কর্নাটকে অবস্থিত কস্তুরবা মেডিক্যাল কলেজে সংক্রামক রোগে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে রয়েছেন চিকিৎসক নীতীন গুপ্ত।

দুই চিকিৎসকের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রস্তাবে গবেষণার সুযোগ থাকবে এই আশ্বাস পেয়ে রাজ্যের মানুষের জন্য কাজ করার প্রশ্নে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছিলেন দুই সংক্রামক বিশেষজ্ঞ। কিন্তু রাজ্যে ফিরতে হলে দু’বছরের চুক্তির ভিত্তিতে কনসালট্যান্ট পদে ফিরতে হবে জানার পরে তাঁরা পিছিয়ে যান। বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ জানান, ওই দুই চিকিৎসক অধ্যাপনার পাশাপাশি গবেষণার কাজে যুক্ত থাকতে চান। ‘উৎকর্ষ কেন্দ্র’ গড়ার জন্য স্বাস্থ্য দফতর যে পদ তৈরি করবে তাতে সেই সুযোগ থাকবে বলেই দুই চিকিৎসক নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু অক্টোবরে প্রকাশিত স্বাস্থ্য ভবনের বিজ্ঞপ্তি তাঁদের হতাশ করে।

এই মুহূর্তে কলকাতাতেই রয়েছেন সংক্রামক বিশেষজ্ঞ সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এখন যে সকল কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি তাতে সবকিছু ছেড়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না।’’ বাগবাজারে বড় হয়ে ওঠা চিকিৎসক নীতীন গুপ্ত বলেন, ‘‘এখন একটি স্থায়ী এবং অধ্যাপনার সুযোগ রয়েছে এমন চাকরিতে রয়েছি। স্থায়ী না হলেও অধ্যাপনার সুযোগ থাকলে কলকাতায় ফিরে কাজ করার ইচ্ছে ছিল।’’

বিজ্ঞপ্তি জারির একমাসের মধ্যে কাজে যোগ না দিলে সেটি বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। আজ, শনিবার শেষ হচ্ছে সেই মেয়াদ। জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে মনোনীত আরেক সংক্রামক বিশেষজ্ঞ দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা চিকিৎসক অনুপ আগরওয়াল একসময় আইসিএমআরে (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ) কনসালট্যান্ট ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘যোগ দেওয়ার ব্যাপারে এখনও মনস্থির করিনি। কী করব ভাবছি!’’

এদিন স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, শেষ পর্যন্ত কী হয় তা না দেখে তিন চিকিৎসক সরকারি প্রস্তাবে একেবারে রাজি হননি বলা ঠিক হবে না। ওই কর্তার কথায়, ‘‘রাজি না হলে ওই তিন পদে অন্য কোনও চিকিৎসককে নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Beleghata ID Covid-19 Coronavirus Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE