মিছিল: বাবরি ধ্বংসের প্রতিবাদে শহরের পথে বামেরা। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
রাস্তায় ভিড় হল ভালই। বড়সড় কলেবরের সেই মিছিল শেষে মেরুকরণের রাজনীতির জন্য বিজেপি আর তৃণমূলকে একই সঙ্গে নিশানা করল বামেরা।
বাবরি ধ্বংসের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘কালা দিবসে’ বুধবার ধর্মতলা থেকে পার্কসার্কাস পর্যন্ত প্রথমে মিছিলের ডাক দিয়েছিল ৬টি বাম দল। পুলিশের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত এ দিন মিছিল নিয়ে যাওয়া হয়েছে পার্ক সার্কাসের বদলে রাজাবাজার পর্যন্ত। সিপিএম, সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, এসইউসি, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন— এই ৬টি দলের সঙ্গেই মিছিলে যোগ দিয়েছিল বামফ্রন্টের বাকি শরিক দল ও তার বাইরের পিডিএস, আরজেডি এবং শরদ যাদবপন্থী জেডিইউ। রাজাবাজারে পৌঁছে বাম নেতারা যখন রাস্তার ধারের মঞ্চে, মিছিলের ল্যাজ তখনও লেনিন সরণি থেকে মৌলালি মোড় ঘোরেনি।
বাম, তৃণমূল যখন বাবরি ধ্বংসের বার্ষিকীতে বিজেপি-কে আক্রমণ করছে, গেরুয়া শিবির তখন বাবাসাহেব অম্বেডকরের মৃত্যুদিনে ‘অস্পৃশ্যতা-বিরোধী দিবস’ পালন করেছে। উত্তম মঞ্চে যেমন বিজেপি-র রাজ্য ওবিসি মোর্চার আয়োজনে অম্বেডকর স্মরণে কর্মসূচিতে ছিলেন চন্দন মিত্র ও রাহুল সিংহ। বেলা গড়াতেই অবশ্য গেরুয়া শিবিরের নানা সংগঠন উদযাপন শুরু করেছিল ‘শৌর্য দিবস’। যার প্রেক্ষিতে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের প্রণেতা অম্বেডকরের প্রয়াণ দিবসে বাবরি ভাঙা হয়েছিল সংবিধানের কাঠামোর উপরে আঘাত হানার জন্যই। তার পরে আবার কীসের শৌর্য?’’
প্রত্যাশিত ভাবেই বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রবোধ পণ্ডা, নরেন চট্টোপাধ্যায়, পার্থ ঘোষ, চণ্ডীদাস মুখোপাধ্যায়েরা বিজেপি-আরএসএসের সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির কড়া সমালোচনা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গেও যে সাম্প্রতিক কালে ধূলাগড়, হাজিনগর, দেগঙ্গা, বসিরহাটে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, তা মনে করিয়ে দিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবু বাম কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন, ‘‘এক দিন মিছিল-সম্প্রীতি করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। গরিব মানুষকে ধর্ম, জাতপাতের নামে যাতে ভাগ করে দেওয়া না যায়, তার জন্য বস্তিতে বস্তিতে বৈঠক করতে হবে। খাটিয়ায় বসে আলোচনা করে মানুষকে সতর্ক করতে হবে।’’
বাবরি ধবংসের দিনটি ‘সংহতি দিবস’ পালন করে এ দিনই গাঁধীমূর্তির নীচে সভা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এত দিন কোথায় ছিলেন? বাবরি ভেঙে ফেলার সময়ে এখনকার মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন। একটাও প্রতিবাদের কথা তো শোনা যায়নি! উল্টে বাবরি ধ্বংস এবং গোধরা-কাণ্ডের পরেও কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের মন্ত্রী থেকেছেন!’’ একই প্রসঙ্গ তুলে সেলিমের অভিযোগ, ‘‘কখনও হিজাব পরে, কখনও ইমাম ভাতা দিয়ে বিজেপি-র মতোই ধর্মকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করেন তৃণমূল নেত্রী। আরএসএস হিন্দু সাম্প্রদায়িকতায় থাকে, উনি মুসলিম মৌলবাদে উস্কানি দেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্রয়ে এখানে এক ‘শাহি ইমাম’ কী করে বেড়াতেন, মনে নেই?’’ সেলিমের মন্তব্য, প্রয়োজনে কাউকে ব্যবহার করে বিপদে পড়লেই তাঁর দায় ঝেড়ে ফেলেন তৃণমূল নেত্রী। ওই ইমামের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy