বাম ভোটের বড় অংশই এ বার রামে গিয়েছে। আগামী বিধানসভা ভোটের জন্য রাজ্যে তৃণমূলের সামনে শক্ত ‘চ্যালেঞ্জার’ হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। তৃণমূল যখন চাপে, সেই সময়ে বিজেপিকে কোনও ভাবেই ‘বন্ধু’ বলে ভেবে না নেওয়ার জন্য দলে হুঁশিয়ারি দিল সিপিএম।
লোকসভা ভোটে তৃণমূল এক ডজন আসন হারানোর পরেই নানা জেলায় সিপিএমের দখল হয়ে থাকা কার্যালয় ‘পুনরুদ্ধার’ শুরু হয়েছে। সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, তৃণমূল এখন কোণঠাসা বলেই কার্যালয় ফিরে পাওয়া তাঁদের পক্ষে সহজ হচ্ছে। কিন্তু বিজেপির প্রবল উত্থান এবং ভোটে পর্যুদস্ত হয়েও সিপিএমের কার্যালয় পুনরুদ্ধার— এই দুই সমকালীন ঘটনাকে এক জায়গায় এনে ফেলে যে প্রচার চলছে, তাতে ভুল বার্তা যাচ্ছে বলেই বাম নেতৃত্বের আশঙ্কা। হাজরা মোড়ের সভা থেকে মঙ্গলবারই যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, ‘‘সিপিএম বিজেপিকে ভোট ধার দিয়েছে। এখন তার সুদ হিসেবে পার্টি অফিস ফেরত পাচ্ছে!’’ এই প্রেক্ষিতেই সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে দলের নেতাদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, নিজেদের জোরে এবং মানুষের সমর্থনে কার্যালয় খুলতে পারলে খুলুন। কিন্তু বিজেপির ‘দয়া’য় তেমন কিছু করা মারাত্মক ভুল হবে!
দলের জেলা ও গণসংগঠনের নেতৃত্বের সামনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ব্যাখ্যা করেছেন, গত কয়েক বছরের স্বৈরাচারী কার্যকলাপ, নানা স্তরে দুর্নীতি, ভোট লুটের মতো কারণে তৃণমূলের প্রতি রাজ্যের বড় অংশের মানুষের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সেই ক্ষোভের ফায়দা লোকসভা ভোটে বিজেপি পেয়েছে। তার পরেও তৃণমূলের ‘অত্যাচারের প্রতিবাদ’ করার নামে গেরুয়া শিবির বাকি সকলের ‘সহানুভূতি’ আদায়ের চেষ্টা করছে। বাংলায় ক্ষমতায় এসে যে তৃণমূল বাম-সহ বিরোধীদের কার্যালয় ভাঙচুর ও দখল করেছিল, এখন বিজেপির হাতে সেই তাদেরই অফিস বেদখল হতে দেখে অনেকের আনন্দ হতে পারে। কিন্তু রাজ্য কমিটিতে সূর্যবাবু মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে বিজেপি আজ তৃণমূলের উপরে চড়াও হয়েছে, কাল তারা বামেদেরও নিশানা করবে। হাতের কাছে উদাহরণ ত্রিপুরা!
বিজেপি কোথায় কী ভাবে তৃণমূলকে ‘সবক’ শেখাবে, তার ভরসায় বসে না থাকার বার্তা নিয়ে এ বার জেলায় জেলায় দলের বৈঠকে যাবেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যেরা। একই সঙ্গে সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব বলছেন, এখনও পর্যন্ত বিজেপির মোকাবিলায় বলিষ্ঠ কোনও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তৃণমূলের তরফে দেখা যায়নি। তৃণমূল লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়লে গেরুয়া শিবিরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে বামেদেরই দাঁড়াতে হবে—তার জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি দরকার। আন্দোলন, সংগ্রাম ছাড়া কোনও ‘শটকার্ট’ পথে যা হবে না।
লোকসভা ভোটের সময়ে পরিস্থিতি যে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, তা অবশ্য কবুল করে নিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব। জেলারা নেতারাও আলিমুদ্দিনে রিপোর্ট দিয়েছেন, বিজেপি ও তৃণমূলকে হটানোর ডাকের মধ্যে অধিকাংশ সমর্থক দ্বিতীয়টাকেই প্রথম কাজ বলে মনে করেছেন। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতরাম ইয়েচুরি বলছেন, ‘‘আমাদের দলের কর্মীরা নিজেদের প্রার্থীকেই ভোট দিয়েছেন। কিন্তু বাম সমর্থক এবং সাধারণ ভোটারদের বড় অংশ, যাঁরা ৭-৮ বছরে তৃণমূলের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরা বিজেপিকে সমর্থন করেছেন। যাঁরা বিজেপিকে হারাতে চান, তাঁরা তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন। বিজেপি ও তৃণমূলের বাইরে কোনও বিকল্প তাঁরা পাননি। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy