Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দরজায় এসেও ঘরে না ঢুকে চিন্তা বাড়াচ্ছে বর্ষা

আশা জাগিয়েও ফের ধোঁকা দিল বর্ষা! মৌসম ভবন জানিয়ে দিয়েছে, আজ শুক্রবারেও সে কেরলে ঢুকবে না। ফলে ঠিক কবে যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু কেরলে ছোঁবে, তার পরে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে কবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঢুকবে, আবহবিদেরা তার কোনও আন্দাজ দিতে পারছেন না। এক মৌসম-কর্তা অবশ্য বৃহস্পতিবার জানান, কেরল-লক্ষদ্বীপে বৃষ্টি নেমেছে, যা প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি হলেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শনি-রবিবারের মধ্যে মৌসুমি বায়ু কেরলে ঢুকলেও ঢুকতে পারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৫ ০৩:৩৯
Share: Save:

আশা জাগিয়েও ফের ধোঁকা দিল বর্ষা! মৌসম ভবন জানিয়ে দিয়েছে, আজ শুক্রবারেও সে কেরলে ঢুকবে না।

ফলে ঠিক কবে যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু কেরলে ছোঁবে, তার পরে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে কবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঢুকবে, আবহবিদেরা তার কোনও আন্দাজ দিতে পারছেন না। এক মৌসম-কর্তা অবশ্য বৃহস্পতিবার জানান, কেরল-লক্ষদ্বীপে বৃষ্টি নেমেছে, যা প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি হলেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শনি-রবিবারের মধ্যে মৌসুমি বায়ু কেরলে ঢুকলেও ঢুকতে পারে।

কিন্তু এ বারের বর্ষার চালচলন দেখে তাঁরা যে নিশ্চিত কোনও পূর্বাভাস দিতে পারছেন না, কর্তাটি তা-ও জানিয়ে রাখছেন। আলিপুর হাওয়া অফিসের এক আবহ-বিজ্ঞানীর রসিকতা, ‘‘বর্ষা যেন রেলগাড়ি! এক বার দেরি করতে শুরু করলে রক্ষা নেই। লেট বাড়তেই থাকবে। কবে গন্তব্যে পৌঁছাবে, কেউ জানে না!’’

এ হেন লেটলতিফ বর্ষার মতি-গতি দেখে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক যারপরনাই চিন্তিত। উত্তর-পশ্চিম ভারতে মার্চ-এপ্রিলে অস্বাভাবিক বৃষ্টির জেরে এমনিতেই ডাল ও পেঁয়াজ চাষ বিস্তর মার খেয়েছে। এ বার জুলাইয়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না-হলে ধান-সহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য ও আনাজপাতির জোগানে টান ধরবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন একাধিক কৃষি-কর্তা। ওঁরা বলছেন, ‘‘আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নামতে হবে। নচেৎ ফের ওই তল্লাটে ফসল মার খাবে।’’

বর্ষার হাল-হকিকত জানতে মন্ত্রক থেকে ঘন ঘন ফোন যাচ্ছে হাওয়া অফিসে। মৌসম ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘উত্তর-পশ্চিমে ফেব্রুয়ারি-মার্চের বৃষ্টি, মার্চ-এপ্রিলে পূর্ব ভারতে একটাও পূর্ণাঙ্গ কালবৈশাখী না-হওয়া, মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমের কিছু অংশে মারমুখী তাপপ্রবাহ— সব মিলিয়ে দেশের প্রাক বর্ষার কৃষি-চিত্রকে যথেষ্ট উদ্বেগজনক করে তুলেছে।’’ তাই খাদ্যশস্য উৎপাদনে ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে এ বার ঠিক সময়ে ভাল বৃষ্টি একান্ত দরকার ছিল। অথচ তেমন আশা বুক ঠুকে কেউ করতে পারছেন না। কারণ, বর্ষার ধীর গতি। কিন্তু ট্রেন লেট করার তো নানাবিধ কারণ থাকে! বর্ষা যে এ ভাবে কেরলের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়ে রইল, তার পিছনে কী কারণ?

মৌসম ভবন আঙুল তুলছে আরবসাগরের ঘূর্ণাবর্তের দিকে। তাদের ব্যাখ্যা: কেরলের নীচে থাকা ঘূর্ণাবর্তটি আরও ঘনীভূত হয়ে মৌসুমি বায়ুকে নীচের দিকে টানছে। তাই বর্ষা কেরলের কাছে এসে থমকে গিয়েছে। বারবার স্থগিত হয়ে যাচ্ছে তার নির্ধারিত হাজিরা।

পরিণাম যা হওয়ার তা-ই। উত্তর-পূর্ব ও উত্তরবঙ্গের হিমালয় লাগোয়া অঞ্চলে ভাল বৃষ্টি হলেও দক্ষিণবঙ্গে অস্বস্তি পারদ ক্রমশ চড়ছে। এ দিন দুপুরে উত্তর শহরতলি ও কলকাতার একাংশে হাল্কা বৃষ্টি হলেও বিন্দুমাত্র সুরাহা হয়নি। আলিপুরের এক আবহবিদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘প্রাক বর্ষার বৃষ্টি ছাড়া রেহাই মিলবে না। বরং কেরলে বর্ষা ঢুকে মাঝপথে আটকা পড়লে আরও ঝামেলা। কেননা তখন বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকবে। তাপমাত্রাও সে ভাবে নামবে না।’’

অর্থাৎ, ভোগান্তিবৃদ্ধির বিলক্ষণ সম্ভাবনা। মৌসম ভবনের পরিসংখ্যান বলছে, গত দু’-তিন বছরে বর্ষা নির্দিষ্ট সময়ের (১ জুন) কিছুটা পরে কেরলে ঢুকলেও শেষমেষ পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে ঘাটতি অনেকটা পুষিয়ে দিয়েছে। এ মরসুমে ১২% ঘাটতি বৃষ্টির পূর্বাভাস ইতিমধ্যে দিয়ে রেখেছে মৌসম ভবন। ‘‘একমাত্র ভরসা, দেরিতে এসেও বর্ষা যদি এ বারও ভাল বৃষ্টি নামায়।’’— বলছেন এক কৃষি-কর্তা।

ওঁদের আশা মিটবে কি না, সেটাই এই মুহূর্তে কোটি টাকার প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

weather monsoon Delayed Mausam bhawan rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE