একশো টাকার বিদ্যুৎ বেচে গড়ে ৭০ টাকা ঘরে তোলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। ৩০ টাকা থেকে যাচ্ছে লোকসানের খাতায়। বিদ্যুৎকর্তারা দেখেছেন, দুর্বল পরিকাঠামোর কারণে গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর আগেই মাঝপথে অনেকটা নষ্ট হয়। তার জেরে যে পরিমাণে লো-ভোল্টেজ হচ্ছে, তার খেসারত দিচ্ছে আমজনতা। তাই উপায়ন্তর না দেখে ফের কেন্দ্রের অনুদানে বিদ্যুৎ পরিবহণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে চাইছে রাজ্য। কিছু টাকা ঢালবে বণ্টন সংস্থাও। কিন্তু তাতেও কি লাভ করা যাবে? কর্তারা সে আশাও করছেন না। ক্ষতি কমানোই তাঁদের লক্ষ্য।
বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর, কেন্দ্রের কাছে এই খাতে দফায় দফায় ৩০০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। তাতে ১৮টি জেলার ১২১টি ছোট শহরে কাজ হবে। ইতিমধ্যে মালদহ, বাঁকুড়া, নদিয়া ও উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জন্য ১০৬৯ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্র। এক বিদ্যুৎকর্তা বলেন, ‘‘ওই টাকায় নতুন সাবস্টেশন হবে। হাইটেনশন লাইনের লোড কমানো, লাইনের লোড ভাগ করে দেওয়া, নতুন ট্রান্সফর্মার বসানো, মাটির নীচে কেবল লাইন পাতা ও উন্নত প্রযুক্তির মিটার বসানোর মতো কাজগুলিও সেরে ফেলা যাবে। বণ্টনকর্তাদের আশা, এতে মাঝপথে বিদ্যুৎ নষ্ট অনেকটাই কমবে। ভাল মানের বিদ্যুৎও পৌঁছবে গ্রাহকের ঘরে।
কিন্তু চুরি-ই যদি আটকানো না যায়, তা হলে পরিবহণ ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে কী লাভ হবে, সেই প্রশ্নও উঠছে।
মে-জুনের প্রচণ্ড গরমেও বণ্টন সংস্থা রাজ্যের বিদ্যুৎ চাহিদা মিটিয়েছে। এমনও হয়েছে এক দিনে ছ’হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। কিন্তু পাশাপাশি তার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। সম্প্রতি বিধানসভায় বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তর কাছে বিরোধী দলের বিধায়কেরা লো-ভোল্টেজ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিরোধীদের অভিযোগ, জেলার বহু এলাকায় বিদ্যুতের হাল এমনই যে গরমে দিনে পাখা ঘোরে না, রাতে সবই ঝাপসা। লো-ভোল্টেজের জেরে বহু পর্যটন কেন্দ্রে সন্ধের পরে হোটেলে এসি পর্যন্ত চলে না।
বণ্টনকর্তাদের অবশ্য দাবি, কিছু এলাকায় ভোল্টেজ খারাপ হলেও আগের চেয়ে বিদ্যুতের মান অনেকটাই ভাল হয়েছে। বণ্টন সংস্থার হিসেবে, পরিকাঠামোগত উন্নতির কারণেই ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে যেখানে ক্ষতি ছিল ৩৪.৪৩%, সেখানে ২০১৪-১৫ সালে তা কমে হয়েছে প্রায় ২৯%। এ বার যে ৩০০০ কোটি টাকা খরচ করা হবে, তাতে ২০২২-এর মধ্যে ক্ষতির বহর ২১%-এ নেমে আসবে বলে আশাবাদী বণ্টনকর্তারা।
সাধারণত বণ্টন সংস্থাগুলিকে সাড়ে ১৭% পর্যন্ত আর্থিক লোকসান অনুমোদন করে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। এই পরিমাণ লোকসান হলে বণ্টন সংস্থাগুলি মাসুলের মাধ্যমে তা গ্রাহকদের কাছ থেকে তুলে নিতে পারে। কিন্তু ক্ষতি এর চেয়ে বেশি হলে তার দায় বণ্টন সংস্থাগুলির ঘাড়েই পড়ে। সেই হিসেবে ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার যে ২৯% আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তাতে টাকার অঙ্কে লোকসান হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এই ক্ষতির অঙ্কই আগামী সাত বছরে কমিয়ে ২৫০ কোটির কাছাকাছি নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy