Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
শহর থেকে শহরতলি, বৈদ্যুতিন আবর্জনায় বেড়ে চলেছে ই-ভাগাড়
State News

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কী ভাবে, নেই উত্তর

বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বছরে ২০ লক্ষ টন ই-বর্জ্য তৈরি হয় ভারতে। তার মধ্যে মাত্র ৪.৩৮ লক্ষ টন সঠিক পদ্ধতিতে ‘রিসাইকল’ বা পুনর্ব্যবহার করা হয়।

স্তূপীকৃত: পুরনো বৈদ্যুতিন সামগ্রীতে ভরেছে চাঁদনি চকের ফুটপাত। —নিজস্ব চিত্র

স্তূপীকৃত: পুরনো বৈদ্যুতিন সামগ্রীতে ভরেছে চাঁদনি চকের ফুটপাত। —নিজস্ব চিত্র

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৮ ০২:৩৭
Share: Save:

তিন বছর আগেই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল রাজ্যে ই-বর্জ্য বা বৈদ্যুতিন বর্জ্য ‘রিসাইকল’ করার প্রকল্প তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় অনুদান। রাজ্য পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, এর পরে আর রাজ্যে সংগঠিত কোনও ই-বর্জ্য কেন্দ্র তৈরি হয়নি। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের মোট ই-বর্জ্যের ৯.৮ শতাংশ তৈরি হচ্ছে এ রাজ্যে, যে ই-বর্জ্যের সংস্পর্শে লাগাতার থাকলে স্নায়ু, মস্তিষ্ক, ফুসফুস, যকৃত-সহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়।

বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বছরে ২০ লক্ষ টন ই-বর্জ্য তৈরি হয় ভারতে। তার মধ্যে মাত্র ৪.৩৮ লক্ষ টন সঠিক পদ্ধতিতে ‘রিসাইকল’ বা পুনর্ব্যবহার করা হয়। ভারতের কোনও রাজ্যেই এ ধরনের যথেষ্ট সংখ্যক ‘রিসাইক্লিং’ কেন্দ্র নেই।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে নেই একটিও সংগঠিত ‘রিসাইক্লিং’ কেন্দ্র। পুরোটাই পৌঁছে যায় অসংগঠিত ক্ষেত্রে। সেখানে কোনও রকম সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই ই-বর্জ্য থেকে ব্যবহারযোগ্য জিনিস পৃথক করা হয়।

ই-বর্জ্য কাকে বলে?

• ফেলে দেওয়া ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, মোবাইল, টেলিভিশন, ফ্রিজ, ক্যামেরা, প্রিন্টার-সহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম।

• এর মধ্যে থাকে প্লাস্টিক, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, তামা,পারদ, দস্তা, ক্যাডমিয়াম।

• দেরাদুনের ইউনিভার্সিটি অব পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এনার্জি স্টাডিজের সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতে প্রতি বছর ২৫ শতাংশ হারে বাড়ছে ই-বর্জ্য।

পরিবেশ দফতরের অবশ্য দাবি, বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে কলকাতা শহরের ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ ভবনে ই-বর্জ্যের জন্য নির্দিষ্ট ‘ওয়েস্ট বিন’ রাখার ব্যবস্থা। এই তালিকায় রয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ, ভারতীয় জাদুঘর, সায়েন্স সিটি, পরিবেশ ভবন ইত্যাদি। এ সব জায়গায় ‘বিন’ রাখলে ক’জন সাধারণ মানুষ তার সুবিধা পাবেন? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য পাওয়া যায়নি। অসংগঠিত ক্ষেত্রে যাঁরা ই-বর্জ্য নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের সচেতন করার দায়িত্বই বা কে নেবে? উত্তর নেই এ প্রশ্নেরও।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানান, এ ধরনের কেন্দ্র গড়তে কেউ এগিয়ে এলে প্রয়োজনীয় অনুমোদন শর্তসাপেক্ষে দেয় পর্ষদ। কিন্তু তা চালানোর কাজ পর্ষদের নয়। এ ধরনের প্রকল্পে পর্ষদ সহায়কের ভূমিকায় থাকে।

দেশের মোট ই-বর্জ্যের প্রায় ২০ শতাংশ তৈরি করে এক নম্বরে রয়েছে মহারাষ্ট্র। রিসাইক্লিং কেন্দ্র রয়েছে ৩২টি। অন্য দিকে কর্নাটকে তুলনায় কম (৮.৯ শতাংশ) ই-বর্জ্য তৈরি হলেও ৫৭টি ‘রিসাইক্লিং’ কেন্দ্র রয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু ও গুজরাতে রয়েছে যথাক্রমে ২২, ১৬, ১৪ ও ১২টি করে কেন্দ্র। নতুন তৈরি রাজ্য তেলঙ্গানায় রয়েছে ৪টি। আর পশ্চিমবঙ্গে শূন্য।

এ রাজ্যের এই দশা কেন?

বিশেষ়জ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সমস্যা রয়ে গিয়েছে গোড়াতেই। প্রায় তিন বছর ধরে ই-ওয়েস্ট (ই-বর্জ্য) বা বৈদ্যুতিন বর্জ্য প্রকল্প নিয়ে গড়িমসি করার ফলে ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পের সময়সীমাই ফুরিয়ে যায়। সামান্য দুই থেকে তিন একর জমির অভাবে রাজ্যে তৈরি করা হয়নি ই-বর্জ্য হাব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

E-Waste Environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE