Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিক্রমকে ধরার নির্দেশ, অনুব্রত নির্বিকার

পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিরোধীদের বোমা মারার হুমকি দিয়ে তিনি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। এ বার পুরভোটের আগেও বিপক্ষের প্রার্থীকে তুলে আনার হুমকি দিয়ে ফের পুলিশের খাতায় নাম তুললেন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

বিক্রম গুপ্ত, অনুব্রত মণ্ডল ও রবীন্দ্রনাথ ঘোষ

বিক্রম গুপ্ত, অনুব্রত মণ্ডল ও রবীন্দ্রনাথ ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিরোধীদের বোমা মারার হুমকি দিয়ে তিনি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। এ বার পুরভোটের আগেও বিপক্ষের প্রার্থীকে তুলে আনার হুমকি দিয়ে ফের পুলিশের খাতায় নাম তুললেন বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

শনিবারই রাজ্য নির্বাচন কমিশন হুগলির চাঁপদানি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা বিক্রম গুপ্তকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছে। কোচবিহারের তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিতর্কিত বক্তৃতাও এসেছে তাদের নজরে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখে কমিশন মনে করছে, রবীন্দ্রনাথবাবু নির্বাচন বিধি ভঙ্গ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঠিক কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা আমরা আলোচনা করে দেখছি।’’

অনুব্রতর বিরুদ্ধে এখনও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়নি। তবে বিজেপির যে প্রার্থীকে তিনি তুলে আনার কথা হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, সেই দীপক দাস শনিবার সকালেই সিউড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে মামলা রুজু করার আর্জি জানিয়েছেন। যদিও পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা রাত পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। বীরভূমের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার ফোন ধরেননি। দীপকবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চেয়ে মোবাইলে মেসেজ করা হলেও তিনি জবাব দেননি।

পুরভোটের প্রচার শুরু হতে না হতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় গণ্ডগোল পাকানো, হুমকি দেওয়া, সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল। গত রবিবার যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এক মোটরবাইক আরোহীকে ছাড়ানোর জন্য চাঁপদানি ফাঁড়িতে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। ওসি-সহ ন’জন পুলিশকর্মী জখম হন। রাতে পুলিশ ১৪ জন তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতার করলেও বিক্রম এখনও অধরা। হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি নির্দেশ পেয়েছি। বিক্রমের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’ তবে বিক্রমের দাবি, ‘‘একটা গণ্ডগোল শুনে আমরা ওখানে গিয়েছিলাম। হঠাৎই ভিড়ের মধ্যে একটা ইট উড়ে এসে পুলিশের মাথায় লাগে। লাঠিচার্জ শুরু হয়। আমিও মার খেয়েছি। এখন পুলিশ নিজেকে বাঁচাতে আমার নামে দোষ দিচ্ছে।’’

অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগপত্র হাতে সিউড়ি থানার বাইরে দীপক দাস। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

গত ৩ এপ্রিল কর্মিসভায় দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনেই কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ওরফে রবি ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘ভোটটা করার জন্য প্রশাসনিক এবং অন্য যে সব মদত প্রয়োজন হবে, প্রত্যেকটা করব। পঞ্চায়েতে করেছি, লোকসভায় করেছি। যে কোনও মদত করব। কিন্তু জিততে হবে। জেতার জন্য যা-যা দরকার তাই-তাই করতে হবে।’’ পরে সামাল দিতে গিয়ে পার্থবাবু অবশ্য জানিয়ে দেন, কোনও প্রশাসনিক মদত তাঁরা দেবেন না। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে শাসকদল গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করতে চাইছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলতে থাকেন। রবিবাবু অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘আমি কোনও চিঠি পাইনি। প্রচার নিয়েই ব্যস্ত আছি।’’

গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে নির্দল প্রার্থীর (আসলে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) বাড়ি ভেঙে জ্বালিয়ে দিতে, প্রয়োজনে পুলিশকে বোমা মারতে বলে সংবাদ শিরোনামে আসা অনুব্রতকে পুলিশ কখনই ধরেনি। ইদানীং তিনি কিছু দিন মোটামুটি চুপচাপই ছিলেন। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় সিউড়ির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সভা করতে গিয়ে ফের তিনি স্বমূর্তি ধারণ করেন। ওই ওয়ার্ডে বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছেন সদ্য তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া কাউন্সিলর দীপক ওরফে বাবন দাস। রাতে আনন্দপুরের সভায় তাঁকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে অনুব্রত বলেন, ‘‘আমি জানি, বাবন দাস আপনাদের ভয় দেখাচ্ছে। ভয় পাবেন না। ভয় দেখাবেন না। চার গুণ ভয় দেখাতে পারি! চোখ রাঙাবেন না। আপনাকে তুলে নিয়ে আসার ক্ষমতা আমি রাখি!’’

ঘটনা হল, জলপ্রকল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৃণমূল পরিচালিত সিউড়ি পুরসভার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেই দল ছেড়েছেন দীপক। যে ক’টি ওয়ার্ডে এ বার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে, ১৫ নম্বর তার অন্যতম। দীপকবাবুর দাবি, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হলে শাসক দলের দিকে জনসমর্থন থাকবে না। তাই সন্ত্রাস ও ভয় দেখানোর রাস্তায় হাঁটছেন অনুব্রত। পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে অনুব্রতর উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরে কী ঘটেছিল, তা সবার জানা।’’ পুলিশের একটি অংশের মতে, এমন প্ররোচনামূলক মন্তব্যের ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু হওয়ার কথা। তবে আপাতত অভিযোগটিকে জেনারেল ডায়েরি হিসাবে ধরে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হচ্ছে। বিজেপি-র জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা জানান, আগামী দু’দিনে পুলিশ কী ব্যবস্থা নেয়, তা দেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে। অনুব্রতর অবশ্য প্রায় মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বলেন, ‘‘কে কী অভিযোগ করছেন, তা নিয়ে আমি মোটেই চিন্তিত নই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE