Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাড়িতে বিস্ফোরণ, মৃত তৃণমূল নেতার দুই ভাই

নানুর, লাভপুর, ইলামবাজার, খয়রাশোল। তালিকাটা লম্বা হচ্ছে। বীরভূমে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার তালিকা। কী বাম জমানা, কী তৃণমূলের সময়—বোমা তৈরির ‘আঁতুড়ঘর’ তকমা কিন্তু সেঁটেই থাকছে বীরভূমের গায়ে।

বিস্ফোরণের পরে। শুক্রবার খয়রাশোলে দয়াল সেনগুপ্তের তোলা ছবি।

বিস্ফোরণের পরে। শুক্রবার খয়রাশোলে দয়াল সেনগুপ্তের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৬
Share: Save:

নানুর, লাভপুর, ইলামবাজার, খয়রাশোল। তালিকাটা লম্বা হচ্ছে। বীরভূমে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার তালিকা।

কী বাম জমানা, কী তৃণমূলের সময়—বোমা তৈরির ‘আঁতুড়ঘর’ তকমা কিন্তু সেঁটেই থাকছে বীরভূমের গায়ে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে খয়রাশোল থানার আহম্মদপুর গ্রামে বোমা বিস্ফোরণে দু’জনের মৃত্যু যেন সে কথাকেই ফের প্রতিষ্ঠিত করল। ঘটনায় নাম জড়াল শাসকদলেরও। কারণ, বিস্ফোরণ হয়েছে তৃণমূলে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য শেখ জাবিরের পাকা বাড়িতে। মারা গিয়েছেন জাবিরেরই দুই ভাই শেখ হাফিজুল (৩৭) ও শেখ তারিক হোসেন (২৮)।

গত কয়েক বছরে একাধিক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে এই জেলার মাটি। প্রাণহানিও হয়েছে অনেক। বোমা ফেটে টিনের চাল উড়ে যাওয়া বা বাড়ির ছাদ উড়ে যাওয়ার খবর এখন আর নতুন নয় নানুর, খয়রাশোল কিংবা লাভপুরের মতো তল্লাটের বাসিন্দাদের কাছে। বীরভূমের রাজনৈতিক ইতিহাসও বলছে, বিশেষ করে ভোটের আগে বোমা মজুত বা বোমা তৈরি করার বাড়বাড়ন্ত থাকে এখানে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের

আগেও হাজার হাজার বোমা উদ্ধারের খবরে শিরোনামে থেকেছে এই

জেলা। তখন তৃণমূল বলত, রাজ্য বারুদের স্তূপে বসে রয়েছে। খয়রাশোলের ঘটনার পরে সিপিএম, কংগ্রেস-সহ বর্তমান বিরোধীরা একই কথা বলছেন।

এলাকা সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হঠাৎ-ই বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে পাঁচড়া পঞ্চায়েতের ওই মহল্লা। বিস্ফোরণের অভিঘাতে শেখ জাবিরের পাকা বাড়িটির ঢালাই ছাদও ভেঙে পড়ে। গুঁড়িয়ে যায় বাড়ির একটি অংশ। জাবিরের দুই ভাইকে উদ্ধার করে সিউড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানোর আগেই মৃত্যু হয় তাঁদের। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার, ‘‘আমাদের অনুমান, ওখানে দেশি বোমা বানানো হচ্ছিল বা মজুত করা ছিল। কী মতলবে বোমা ছিল ওখানে আমরা দেখছি। ঘটনাস্থল থেকে কেরোসিনের গন্ধ মাখা সুতলি, জালকাঠি পাওয়া গিয়েছে। সে সব নমুনা ফরেন্সিক পাঠানো হবে। কোনও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক ছিল না বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে।’’

তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের অবশ্য দাবি, বাইরে থেকে ছোড়া বোমা ফেটেই ঘটনাটি ঘটেছে। জাবির বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ হাফিজুল এসেছিল। বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগেই, রাত দশটা নাগাদ তারিক বাড়ি ফেরে। সে বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরে ভাগ্নির বিয়ের জন্য গিয়েছিল। তখনই বাইরে থেকে কেউ বা কারা বোমা ছোড়ে। আমরা সবাই বাড়ি থেকে ছুটে বেরোই। দেখি, ঘর ভেঙে পড়েছে। চারদিক অন্ধকার। ধোঁয়া আর বারুদের গন্ধ।’’

জাবির যাই দাবি করুন না কেন, বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের আগে সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য তৃণমূল বোমা মজুত করছিল। কংগ্রেসের বর্ষীয়ান বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার বক্তব্য, ‘‘খয়রাশোলের ঘটনায় প্রমাণ হল, এ রাজ্য বারুদের স্তূপের উপর রয়েছে। এর আগে খাগড়াগড়, পিংলায় বিস্ফোরণ হয়েছিল। এখানে পুলিশ-প্রশাসন কার্যত বিপর্যস্ত।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের দাবি, এ রাজ্যে এখন শাসক দলের নেতা-কর্মীরাও নিরাপদ নন! সিঙ্গুর থেকে শালবনি পদযাত্রার শেষে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। দু’জনের প্রাণ গিয়েছে। এই ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে, রাজ্যটা কী অবস্থায় আছে! শুধু বামপন্থীরাই আক্রান্ত, তা নয়। যে দল আক্রমণ করছে, তাদের কর্মী, নেতা বা আত্মীয়েরাও নিরাপদ নন।’’ বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের দাবি, ‘‘তৃণমূল দলটা উগ্রপন্থী আর সমাজবিরোধীতে ছেয়ে গিয়েছে। যেখানেই বোমা বিস্ফোরণ, সেখানেই তৃণমূল! খয়রাশোলের ঘটনা এটা আবার প্রমাণ করল।’’

তৃণমূলের বীরভূমের পর্যবেক্ষক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের অবশ্য দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর দলের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি পুলিশ দেখছে। আইন আইনের পথে চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE