Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ খুইয়ে বিজেপিতে যোগ

২০১৩ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৈরি হয় সিভিক ভলান্টিয়ার পদ। বর্তমানে রাজ্যে এক লক্ষ তিরিশ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০৩:৫৩
Share: Save:

লোকসভা ভোটের ফলাফল বেরোনো মাত্রই ‘পরিবর্তন’-এর আভাস প্রায় সর্বত্রই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সরকারি কর্মীদের সংগঠন থেকে শুরু করে আইনজীবী মহলেও দল বদলের ইঙ্গিত মিলেছে। দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে এ বার সিভিক ভলান্টিয়ারদের একাংশও গেরুয়া শিবিরে নাম লেখালেন। সোমবার রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে গিয়ে প্রায় ৪০০ জন কর্মচ্যুত সিভিক ভলান্টিয়ার ওই দলে যোগ দেন।

২০১৩ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৈরি হয় সিভিক ভলান্টিয়ার পদ। বর্তমানে রাজ্যে এক লক্ষ তিরিশ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছেন। সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিরাপত্তার স্বার্থেই তৈরি হয়েছিল সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিক পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন’। সংগঠনের সভাপতি সঞ্জয় পড়িয়া বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়ারদের সামাজিক সুরক্ষার দাবিতে ২০১৪ সালের ১০ জুলাই আমরা রানি রাসমণি রোডে সমাবেশ করেছিলাম। তার পরে তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।’’ সঞ্জয়বাবুর অভিযোগ, আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় সেই সমাবেশের পরে বেছে বেছে প্রায় ১০ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ারকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়। কাজ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছরেও কোনও সুরাহা না-হওয়ায় তাঁরা বাধ্য হয়ে বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন।

‘‘রাজ্যে সিভিক ভলান্টিয়ারেরা মুখ বুজে সব সহ্য করে চলেছেন। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে আমাদের। আন্দোলন করা গণতান্ত্রিক অধিকারের আওতায় পড়ে। অথচ তার জন্য আমাদের চাকরি চলে গেল। এ বার কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না,’’ বলেন সঞ্জয়বাবু।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, রাজ্যে বিভিন্ন থানায় পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী নেই। কনস্টেবল, এএসআই থেকে শুরু করে এসআই-পদও দিনে দিনে কমছে। সেই সব জায়গায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক, পুরুলিয়ায় কর্মরত এক সিভিক ভলান্টিয়ার বলেন, ‘‘সাড়ে আট হাজার টাকা বেতনে সংসার চালানো দুঃসাধ্য ব্যাপার। সেই বেতনও আবার নিয়মিত নয়। পুলিশকে সাহায্য করা এবং যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করাই আমাদের প্রধান কাজ। কিন্তু উঁচু তলার নির্দেশে অপরাধী ধরার অভিযান থেকে কর্তাদের বাংলো পাহারা— সবই করতে হয়।’’

পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে নানা ভাবে বঞ্চনার শিকার হতে হতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটের ফলাফল তাঁদের সেই ক্ষোভের আঁচ আরও উস্কে দিয়েছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বিষ্ণুপুর লোকসভায় ভাল ফল করেছে বিজেপি। পারিশ্রমিক ঠিকঠাক না-পাওয়ায় জঙ্গলমহল এলাকার সিভিক ভলান্টিয়ারদের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছিল। বাঁকুড়ায় কর্মরত এক সিভিক ভলান্টিয়ার বলেন, ‘‘আমাদের চাকরির কোনও নিয়োগপত্র নেই। চাকরি হারানোর ভয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করেছি। প্রতিবাদ করতে পারতাম না। উঁচু তলার কর্তারা যা করতে বলতেন, তা-ই করতাম। এ বার মুখ বুজে সব সহ্য করার দিন শেষ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Civic Volunteer BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE