Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শ্রমিকদের বকেয়া মেটাতে প্রথম লোক আদালত রাজ্যে

শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাগন্ডা মেটাতে রাজ্যে প্রথম লোক আদালত বসল হুগলির চন্দননগরে। দীর্ঘ দিন ধরেই শ্রমিকদের বকেয়া গ্র্যাচুইটি নিয়ে নানা জুটমিল ও অন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠছিল। তা নিয়ে দেশের নানা মহল থেকে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানানো হয়। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশেই শনিবার বসল এই লোক আদালত।

চন্দননগরে লোক আদালতে শ্রমিকেরা। ছবি: তাপস ঘোষ।

চন্দননগরে লোক আদালতে শ্রমিকেরা। ছবি: তাপস ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০১
Share: Save:

শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাগন্ডা মেটাতে রাজ্যে প্রথম লোক আদালত বসল হুগলির চন্দননগরে। দীর্ঘ দিন ধরেই শ্রমিকদের বকেয়া গ্র্যাচুইটি নিয়ে নানা জুটমিল ও অন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠছিল। তা নিয়ে দেশের নানা মহল থেকে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানানো হয়। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশেই শনিবার বসল এই লোক আদালত।

রাজ্যের বিভিন্ন জুটমিল ও অন্যান্য সংস্থায় অন্তত ৩০ হাজার শ্রমিকের গ্র্যাচুইটি পাওনা রয়েছে। বিশেষ করে হুগলি, হাওড়া, নদিয়া ও দুই ২৪ পরগনায় এই সংখ্যাটা খুবই বেশি। বহু মানুষ সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের অসহায়তার কথা জানিয়েছেন। এ দিন লোক আদালতের চেয়ারম্যান ছিলেন আর্তি শর্মা দাস। তাঁকে সহায়তা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী শুভেন্দু ভট্টাচার্য। ৩৭টি মামলার শুনানি হয়। এর মধ্যে ৩৪টিই গোন্দলপাড়া জুটমিলের। একটি ভিক্টোরিয়া জুটমিল এবং বাকিগুলি অন্যান্য সংস্থার।

রাজ্যের শ্রমিক সংগঠনগুলি আদালতের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। বিষয়টিকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করেছে বিভিন্ন সংগঠন, যারা দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের বকেয়া মেটাতে আইনি সহায়তা দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে। চন্দননগর শ্রমিক আইনি সহায়তা কেন্দ্রের কর্ণধার বিশ্বজিত্‌ মুখোপাধ্যায় বলেন, “মালিকের কাছে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা রয়েছে অথচ তিনি বিনা চিকিত্‌সায় অন্ধ হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। রাজ্যের শ্রমিক মহল্লাগুলিতে এই জাতীয় মামলা লড়তে-লড়তে আমরা ক্লান্ত। সে ক্ষেত্রে নতুন এই পদক্ষেপে আমরা উজ্জীবিত। শ্রমিকেরা তাঁদের ন্যায্য বকেয়া পাবেন।” তবে এ দিন আদালতে মালিকদের তরফে উপস্থিত প্রতিনিধিরা যথারীতি অনমনীয় ছিলেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাঁরা প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে আবেদন করার কথাও তোলেন।

গত কয়েক বছর ধরেই শ্রমিকদের বকেয়া আদায়ের জন্য কখনও মামলা করছে, কখনও শ্রম দফতরে দরবার করে আসছে আইনি সহায়তা কেন্দ্র। তাতে প্রশাসন কিছুটা সক্রিয় হয়। সম্প্রতি চন্দননগরের মহকুমাশাসক কয়েকটি জুটমিলের অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে শ্রম দফতর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে। এতে শ্রমিকেরা কিছু বকেয়া পেয়েছিলেন। কিন্তু স্থায়ী ভাবে তা কার্যকর হয়নি। পরে সব ফের ঢিলেঢালা হয়ে গিয়েছে।

রাজ্যের ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমিকেরা জানেন না, তাঁদের বকেয়া আদায়ের জন্য কোন পথে যেতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠনগুলির ভূমিকাও ইতিবাচক নয়। এখন দেখার, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত শ্রমিকেরা কোনও সুরাহা পান কি না।” প্রাক্তন সাংসদ তথা সিটু নেতা শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শ্রমিকেরা বহু ক্ষেত্রেই তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত। আমরা সংগঠনগত ভাবে বারাবার দাবি জানিয়েছি। আদালত হস্তক্ষেপ করায় কিছুটা সুরাহা হবে বলেই বিশ্বাস।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE