Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জমি-কারবারি খুনে কি বন্দি রমেশের হাত

ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। আর রমেশ মাহাতো শ্রীঘরে গেলেও...! তবে, ধান ভাঙা রমেশের কাজ নয়। তার পেশা জমি ‘দখল’। ছলেবলে না হলে, কৌশলে। আর তাতেও কাজ না হলে? বেমালুম পথের কাঁটা সাফ করা। এমনটাই দাবি হুগলি জেলা পুলিশের।

রমেশ মাহাতো

রমেশ মাহাতো

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
গুড়াপ শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ০৩:২৮
Share: Save:

ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। আর রমেশ মাহাতো শ্রীঘরে গেলেও...!

তবে, ধান ভাঙা রমেশের কাজ নয়। তার পেশা জমি ‘দখল’। ছলেবলে না হলে, কৌশলে। আর তাতেও কাজ না হলে? বেমালুম পথের কাঁটা সাফ করা। এমনটাই দাবি হুগলি জেলা পুলিশের।

এ হেন ‘জমি-মাফিয়া’ এখন শ্রীঘরে। দিন কয়েক আগে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু তার পরেও ডানকুনির এক জমি-কারবারি খুনের ঘটনায় সেই রমেশই জড়িত বলে ইঙ্গিত দিলেন নিহতের পরিবারের লোকেরা। সত্যিই খুনের পিছনে রমেশের হাত রয়েছে কিনা, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

ডানকুনি পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর সুভাষ পল্লির বাসিন্দা সুরজিৎ গুপ্ত নামে ওই জমি-কারবারি গত শনিবার বর্ধমানের জামালপুরে গিয়ে আর ফেরেননি। রবিবার সকালে বর্ধমান সীমানা লাগোয়া হুগলির গুড়াপের শিয়াপুরের একটি ধানখেতের পাশ থেকে তাঁর নলিকাটা দেহ উদ্ধার
করে পুলিশ। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, এক জমি-মাফিয়াই সাকরেদদের মাধ্যমে ‘কাঁটা’ সরিয়েছে। যদিও তাঁরা রমেশ বা তার দলবলের বিরুদ্ধে থানায় এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। ফের অনর্থের আশঙ্কা থেকেই তাঁরা সেই সাহস পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সুরজিৎবাবু কিছুদিন আগে ডানকুনিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া দশ কাঠা জমি এক জনকে কিনিয়ে দেন। তা ভাল ভাবে নেয়নি রমেশের দলবল। সুরজিৎবাবুকে হুমকির মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। আতঙ্কে সুরজিৎবাবু নিয়মিত বাড়ি ফিরছিলেন না। আবার বাড়িতে থাকলে রাতে সচরাচর বেরোচ্ছিলেন না। সেই জমি সংক্রান্ত বিষয়েই তিনি শনিবার জামালপুরে যান। ফেরার পথে খুন হন।

হুগলির পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘এই খুনের তদন্তের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। তল্লাশি চলছে। খুব শীঘ্রই পুরো বিষয়টি জানা যাবে। এখনই এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’’

পুলিশ জানায়, রমেশের অবাধ ‘কর্মক্ষেত্র’ হাওড়ার বালি-বেলুড় থেকে হুগলির উত্তরপাড়া থেকে চন্দননগর, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ও দিল্লি রোডের দু’ধার এবং বর্ধমানও। কয়েক বছর আগে হুগলির ‘ত্রাস’ হুব্বা শ্যামল খুনের পর তার ‘ডান হাত’ হিসেবে পরিচিত রমেশই জমি-কারবারের মূল মাথা হয়ে ওঠে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটাদের গাড়ি প্রকল্পের শুরু থেকেই ডানকুনি থেকে শুরু করে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারের জমির দাম আকাশ ছোঁয়। বাম আমলে সেই জমি হাতাতে শাসকদলের স্থানীয় কেষ্ট-বিষ্টুরা ময়দানে নেমেছিল ঠিকই। কিন্তু সরকারি স্তরে কিছুটা রাশ থাকায় ‘জমি-কারবার’ ততটা গতি পায়নি।

কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পরেই সরকারি রাশ আলগা হয়ে যায় বলে অভিযোগ। এমনকী, জমির হাতবদলে পুলিশ, দুষ্কৃতীদের পাশাপাশি ভূমি দফতরের এক শ্রেণির আমলাদেরও জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে বারবার। ডানকুনি শিল্পাঞ্চলে জমি-কারবারে দলের লোকেদের জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জেলা নেতৃত্বকে সতর্ক করেছিলেন।

বছর কয়েক আগে পরিস্থিতি এমনই হয়, প্রশাসনের দরজায় কড়া নেড়ে সুফল না পেয়ে ডানকুনির কিছু চাষি জমি দখল হয়ে যাওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে হুগলি জেলা প্রশাসন সেই সব কৃষিজমি বাঁচাতে উদ্যোগী হয়।

কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির তেমন বদল হয়নি। রমেশের সঙ্গে শাসক দলের নেতাদের যোগসাজশের অভিযোগও উঠেছিল। মাসকয়েক আগে রমেশের দুই মেয়ের বিয়েতেও শাসক দলের জেলা নেতৃত্বের অনেককে দেখা গিয়েছিল। জেলার জমি-কারবারিদের অনেকেই মনে করেন, ডানকুনি শিল্পাঞ্চলের পাশাপাশি হাওড়া-হুগলির অন্যত্রও ‘টিম রমেশকে’ টপকে কেউ জমির কাজ করলে তাঁর সুরজিৎবাবুর মতো পরিণতি হতে পারে।

বছর কয়েক আগেও রমেশ জেলবন্দি থাকার সময়ে তার অঙ্গুলি-হেলনেই উত্তরপাড়ার ঘড়িবাড়ি মাঠ এবং সংলগ্ন পুকুর দখল করে আবাসন নির্মাণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। আন্দোলনে নামেন একটা বড় অংশের সাধারণ মানুষ।

এ বার সুরজিৎবাবু খুনের ঘটনায় ফের একবার রমেশ মাহাতোর ‘জমি-কারবারের’ কথা সামনে এল। এখন দেখার তদন্ত কোন পথে এগোয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ramesh mahato hooliganism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE