২০১৪ সাল। কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রধান শৃঙ্গ জয়ের পরেই একই অভিযানে কাঞ্চনজঙ্ঘা ওয়েস্ট অথবা ইয়ালুংখাং -এর পথে পা বাড়িয়েছিলেন ছন্দা গায়েন। তখনই হয় ছন্দপতন। দু’জন শেরপাকে নিয়ে সেই পাহাড়ে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান বাঙালি এই পর্বতকন্যা। সেই ঘটনার দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে কাঞ্চনজঙ্ঘার পথে ফের পা বাড়াতে চলেছেন বাঙালি পর্বতারোহীরা।
ভোটের মরসুমের মধ্যেই এ বার বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রধান (৮,৫৮৬ মিটার) শৃঙ্গের লক্ষ্যে রওনা দিচ্ছেন চার এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদার, বিপ্লব বৈদ্য, কুন্তল কাঁড়ার এবং শেখ সাহাবুদ্দিন। প্রথমে কাঠমান্ডু থেকে ভারতপুর হয়ে তাপলেজুং। সেখানে থেকে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পায়ে হেঁটে দুরূহ এই শৃঙ্গের বেসক্যাম্পে পৌঁছনো। এর পরে আস্তে আস্তে উপরের ক্যাম্পে ওঠা। গোটা অভিযানে সময় লাগবে প্রায় দু’মাস। ১৯৫১ সালে নেপালের দিক থেকে এভারেস্ট অভিযাত্রী দলের একমাত্র বাঙালি সদস্য গোপেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতিতে এই অভিযান উৎসর্গ করছেন রুদ্র-বিপ্লবেরা।
কেন কাঞ্চনজঙ্ঘা? রুদ্রপ্রসাদ জানাচ্ছেন, আর-পাঁচটা বাঙালির মতো ছোট থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রতি আকর্ষণ থাকলেও এভারেস্ট জয়ের আগে এই অভিযানের জন্য স্পনসর জোটানো সম্ভব ছিল না। তিনি বলছেন, ‘‘মানুষ কখনও দু’নম্বরকে বেশি গুরুত্ব দেয় না। তাই মন চাইলেও আগে এই অভিযান করার উপায় ছিল না।’’ তা ছাড়াও, নেপালের এই শৃঙ্গে অভিযান চালানোর পরিকাঠামো তেমন উন্নত নয়। তাই কোনও বছরে ২০-৩০ জন পর্বতারোহী ওই শৃঙ্গের অভিযানের জন্য আবেদন করলে তবেই সে বছরে কাঞ্চনজঙ্ঘার অনুমতি দেয় নেপাল সরকার। রুদ্রপ্রসাদের কথায়, ‘‘গত বছর পুণের একটি পর্বতারোহী দলের পাঠানো ই-মেল থেকে জানতে পারি, ওরা ২০১৯-এ কাঞ্চনজঙ্ঘা যাচ্ছে। তখনই মনে হয়েছিল, কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানের এটাই সুবর্ণ সুযোগ। গত এক বছর ধরে তারই প্রস্তুতি নিয়েছি।’’
এখনও পর্যন্ত মাত্র ছ’জন বাঙালি এই শৃঙ্গে সফল আরোহণ করেছেন। তৃতীয় উচ্চতম হলেও কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান এভারেস্টের চেয়েও কঠিন হতে চলেছে, তা বিলক্ষণ জানেন এই অভিযাত্রীরা। তবু বয়সের কারণে পিছিয়ে যেতে নারাজ ২০১৪ সালের এভারেস্টজয়ী, ৪৮ বছরের বিপ্লব। বলছেন, ‘‘বয়সটা কোনও বাধা নয়। ইচ্ছে থাকতে হবে, আর সুস্থ থাকলেই হল।’’ তাই প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে। বিপ্লব ভরসা রাখছেন পা-কোমর-কাঁধের মাস্ল ট্রেনিং এবং ওয়েট ট্রেনিংয়ের উপরে। এ ছাড়াও গত বছরে হিমাচল প্রদেশের মুলকিলা ৪ শৃঙ্গে অভিযানও যে আসলে কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রস্তুতিরই অঙ্গ ছিল, তা-ও
জানাচ্ছেন তিনি।
তবে অভিযানের আগে পাহাড়-প্রমাণ খরচের চাপ যে আরও বেশি, তা এ বারেও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন অভিযাত্রীরা। কলকাতা পুলিশে কর্মরত রুদ্রপ্রসাদের অভিযানের পুরো খরচ (প্রায় সাড়ে ১৭ লক্ষ) দিচ্ছে তাঁর অফিস। তবে বাকিদের পক্ষে টাকা জোগাড় করা এতটাও সহজ ছিল না। কেউ ব্যাঙ্ক ঋণ তো কেউ বন্ধুদের থেকে ধার করে কোনও ক্রমে টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করছেন।
তবে শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযাত্রীরাই নন, এই মরসুমে হিমালয়ের বিভিন্ন আট-হাজারি শৃঙ্গে অভিযানে যাচ্ছেন একাধিক বাঙালি পর্বতারোহী। এ বছরের একমাত্র বাঙালি হিসেবে এভারেস্ট অভিযানে বেরোচ্ছেন চন্দননগরের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক পিয়ালি বসাক। বিশিষ্ট পর্বতারোহী ও এভারেস্টজয়ী দেবাশিস বিশ্বাসের এ বারের লক্ষ্য বিশ্বের ষষ্ঠ উচ্চতম শৃঙ্গ চো ইউ (৮২০১ মিটার)। আর এভারেস্ট-সহ একাধিক শৃঙ্গে সফল অভিযান চালানো দীপঙ্কর ঘোষের গন্তব্য বিশ্বের পঞ্চম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাকালু (৮৪৮১ মিটার)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy