হাজতের গরাদে মাথা ঠোকার পরে ছড়ে গিয়েছে গৌতম কুণ্ডুর কপাল। জলপাইগুড়িতে। — নিজস্ব চিত্র
আদালতের লক-আপের গরাদে মাথা ঠুকে রক্ত ঝরালেন ‘রোজ ভ্যালি’র কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু। দাবি করলেন, তাঁর বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তি বিক্রি করে তিন মাসের মধ্যে আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। অবিলম্বে টাকা না ফেরালে দিলেন অনশনে বসে আত্মহত্যার হুমকিও। কিন্তু সোমবার জলপাইগুড়ি আদালতের এই ঘটনায় নাটকের গন্ধ পাচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
আদালতে এ দিন গৌতমবাবু দাবি করেন, ইডি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে বলে আমানতকারীদের টাকা ফেরাত দিতে পারছেন না। বলেন, ‘‘আমাদের ১১ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। বাজারে দেনা রয়েছে তিন হাজার কোটি টাকার। তা মিটিয়ে দেওয়াই যায়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি আমাদের সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের প্রাপ্য মিটিয়ে দিক। তিন মাসের মধ্যে তা করতে হবে। না হলে আমি অনশনে বসে আত্মহত্যা করব।’’
বলতে বলতে চশমা খুলে এক সহ-বন্দির হাতে ধরিয়ে দেন ওই ‘রোজ ভ্যালি’ কর্তা। শুরু করেন গরাদে মাথা ঠুকতে। সহ-বন্দিরা তাঁকে ঠেকান। তবে তত ক্ষণে কপাল ছড়ে রক্ত পড়তে শুরু করেছে। ঘটনার পরে গৌতমবাবুকে চিকিৎসার জন্য পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। তবে তাঁর আঘাত গুরুতর নয় বলে পুলিশের দাবি।
কিন্তু ‘রোজ ভ্যালি’ কর্তার দাবি অনুযায়ী, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া কি আদৌ সম্ভব? ইডি-র বক্তব্য, ‘না’। তাদের যুক্তি, বেআইনি লগ্নির তদন্তে তারা নেমেছে ‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট, ২০০২’ (পিএমএলএ) অনুযায়ী। ওই আইনে কোথাও বলা নেই, যে বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা ফেরত দেওয়া যাবে।
অভিজ্ঞ আইনজীবীরাও জানাচ্ছেন, ‘রোজ ভ্যালি’র আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হলে সংসদে পিএমএলএ-র সংশোধন করতে হবে, যা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাঁদের বক্তব্য, টাকা ফেরত দেওয়ার প্রশ্ন উঠবে আদালত মামলার রায় দেওয়ার পরে। অভিযুক্তদের সাজা ঘোষণার পরে সুপ্রিম কোর্ট যদি হস্তক্ষেপ করে জনস্বার্থে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়, তখন তার ভিত্তিতে নিলাম করা যেতে পারে বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তি।
ইডি-র তরফে রয়েছে অন্য যুক্তিও। বেআইনি অর্থ লগ্নির মামলায় ধরপাকড় ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কাজ চললেও এখনও পর্যন্ত আদালতে এই মামলার নিয়মিত শুনানি শুরুই হয়নি। ইডি তদন্ত করে কিছু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। সিবিআই এই মামলার প্রেক্ষিতে প্রভাবশালীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে। ইডি-র এক অফিসারের কথায়, ‘‘মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে সম্পত্তি বিক্রির প্রশ্ন উঠবে। আগে সম্পত্তি বিক্রি হল, পরে দেখা গেল গৌতমবাবু নির্দোষ! তখন তো উনিই সম্পত্তি ফেরত চাইবেন।’’
কিন্তু গৌতমবাবুই তো বলছেন, তাঁর সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা ফেরত দিতে? ইডি-র অফিসারদের যুক্তি, ‘‘সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ার আগে উনি নিজেই তা করতে পারতেন। গরাদে মাথা না কুটে, আইনজীবী মারফত আদালতকেও এ কথা জানাতে পারতেন। এখন বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তির মালিক কেন্দ্র সরকার। গৌতমবাবু যা করলেন, তা নাটকের মতো ঠেকছে।’’ অফিসারেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অন্য এক অভিযুক্ত অর্থ লগ্নি সংস্থা এমপিএস-ও নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে চায় বলে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেছিল। আদালত সে আবেদন মানেনি।
জলপাইগুড়ি আদালতে এ দিন জামিনের আবেদন খারিজ হয় গৌতম কুণ্ডুর। তাঁকে নিয়ে বিকেলে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয় ইডি। আদালত চত্বরে হাজির থাকা ‘রোজ ভ্যালি’র আমানতকারীদের একাংশকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আত্মহত্যা করবেন, বললেই হল! টাকা ফেরত দেবে কে আমাদের?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy