Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মমতা কী বলেন, নজর আজ পর্যালোচনা বৈঠকে

বিজেপির কাছে তৃণমূলকে কেন এত বেশি আসন খোয়াতে হল, কোথায় কী ত্রুটি হয়েছিল এবং এই ক্ষয় মেরামত হবে কী ভাবে, সব নিয়েই এই বৈঠকে পর্যালোচনা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রের খবর।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৯ ০৩:০৭
Share: Save:

ফল ঘোষণা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই টুইট করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করে তবেই যা বলার বলবেন। আজ, শনিবার সেই পর্যালোচনা বৈঠক। তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে ডাকা হয়েছে সব জেলার দলীয় সভাপতি এবং পর্যবেক্ষকদের। থাকবেন জোড়াফুলে জেতা ২২ সাংসদের পাশাপাশি পরাজিত প্রার্থীরাও।

বিজেপির কাছে তৃণমূলকে কেন এত বেশি আসন খোয়াতে হল, কোথায় কী ত্রুটি হয়েছিল এবং এই ক্ষয় মেরামত হবে কী ভাবে, সব নিয়েই এই বৈঠকে পর্যালোচনা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রের খবর।

ফলপ্রকাশের ২৪ ঘণ্টা পরে শুক্রবার আরও একটি টুইট। সেটি হল বাংলা, ইংরাজি ও হিন্দিতে লেখা কবিতা— ‘সাম্প্রদায়িকতার রঙ আমি বিশ্বাস করি না।/...যারা বিশ্বাস করেন সহনশীলতায়/ আসুন জাগরিত করুন একসাথে আসুন সবাই।’

এ সব দেখে দলের অন্দরে অনেকের ধারণা, রাজ্যে তৃণমূলের আসন-ক্ষয় এবং বিজেপির বিপুল অগ্রগতির পিছনে তৃণমূলনেত্রী হয়তো ধর্মীয় মেরুকরণকেই বড় করে দেখছেন। কিন্তু দলীয় অন্তর্ঘাত, পঞ্চায়েতে ভোট দিতে না পারা মানুষের ক্ষোভ থেকে শুরু করে দলে ‘নব্য’ এবং ‘আদি’, দুই শ্রেণীর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজনের মতো বিষয়গুলিও যে ভোটের মেশিনে ছাপ ফেলেছে, তা আলোচনায় আসবে কি না, এখনও সেটা খুব স্পষ্ট নয়।

লোকসভার ফল খতিয়ে দেখা যাচ্ছে, অনেক দাপুটে নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক নিজেদের কেন্দ্রে হেরে গিয়েছেন। কিছুদিন আগে হাজার হাজার ভোটে জেতা জেলা পরিষদের সদস্যরাও নিজেদের জায়গায় দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে পারেননি। এর সঙ্গে দলের নব্যদের সঙ্গে আদি তৃণমূলের ‘সংঘাত’ যে ইতিমধ্যেই বড় ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে, তা-ও জনান্তিকে স্বীকার করে নিচ্ছেন অনেক নেতাই। তাঁরা মনে করেন, এগুলি বিপদসঙ্কেত এবং ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে এগুলির সমাধান না হলে বড় বিপর্যয় এড়ানো কঠিন। এ সবের পরিপ্রেক্ষিতে সাংগঠনিক রদবদলের জল্পনাও ঘুরছে।

শুক্রবারই মুর্শিদাবাদে ডোমকলের ব্লক সভাপতি হাজিকুল আলমের ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে লেখা হয়েছে, ‘‘দলের ছোট-বড় নেতারা জনগণের টাকা খেয়ে নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া চলতে পারে না। তাদের দল থেকে এখনই তাড়ানো দরকার।’’ তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর ফেসবুক হ্যাক করা হয়েছে। তবে এই পোস্ট ইতিমধ্যেই ভাইরাল।

দলে অন্তর্ঘাত বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের লক্ষণ দলীয় নেতৃত্বের কাছে ধরা পড়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ দিন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ সব দলের সাংগঠনিক বিষয়। দলনেত্রী এ ব্যাপারে নিজেই শনিবার পর্যালোচনা করবেন।’’ তবে দলের ফলাফলকে বিপর্যয় বলতে নারাজ পার্থবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘দল তো পিছিয়ে যায়নি। দল গত বারের থেকেও বেশি ভোট পেয়েছে। ভোটের হার গত লোকসভার ৪০% থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৩%। আসন ৩৪ থেকে কমে ২২ হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদ থাকবে তৃণমূলেরই। তবে এত উন্নয়নের পরেও কেন এবং কোথায় কোথায় মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। দলের ত্রুটি পর্যালোচনা করা হবে।’’

‘আদি-নব্য’র সংঘাত নিয়ে দলের মধ্যে অস্বস্তি যে রয়েছে, তা নিয়ে বহুবার দলীয় বৈঠকে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন স্বয়ং মমতাই। এ নিয়ে পার্থবাবু কোনও মন্তব্যে রাজি হননি। যদিও শাসক দলের অন্দরে কান পাতলে এক তরুণ নেতার ‘ব্যবহার’ ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলের একাধিক জেলায় দলের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা ওই নেতা জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে নিজের মতো চলতেন বলেও অভিযোগ উঠছে দলেই। ঘটনাচক্রে, সেই সব জেলায় দলের ফল শোচনীয়। দলের আদি নেতাদের সঙ্গে ওই নেতার ব্যবহারও ‘মধুর’ নয় বলেও দলের মধ্যে অভিযোগ ঘোরাফেরা করছে। এমনকী, বহু ক্ষেত্রে ওই নেতার ‘পছন্দে’ যাঁদের প্রার্থী করা হয়েছিল, তাঁরাও প্রায় কেউই জিততে পারেননি বলে দলীয় মহলে শোনা যাচ্ছে।

এই ধরনের বিষয়গুলি আজকের বৈঠকে আলোচিত হবে কি না, বা ভবিষ্যতের জন্য মমতা দলকে কোনও নির্দেশ দেবেন কি না, সে সম্পর্কে দলের শীর্ষস্তরে অন্য কারও কোনও ধারণা নেই। তবে ক্ষোভ-অভিমান সত্ত্বেও দলের কর্মীদের শান্ত থাকার আবেদন জানিয়ে দলের মহাসচিব পার্থবাবু বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যেমন একসঙ্গে শান্তভাবে ছিলাম, আমরা সেভাবেই থাকব। কেউ কোনও উত্তেজনায় মাথা গরম করবেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE