Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফলের ফল? দেবের গ্রামে সিপিএম পার্টি অফিস ফিরিয়ে দিল তৃণমূলই

পরে সেই কার্যালয় ফিরিয়ে দেওয়া হল সিপিএমকে। যদিও বামেরা এখনই সেখানে লাল ঝান্ডা তুলছে না। আপাতত শুধু কার্যালয়ের গায়ে দলের নাম লেখা হবে।

ভোলবদল: কেশপুরের সেই পার্টি অফিস।

ভোলবদল: কেশপুরের সেই পার্টি অফিস।

বরুণ দে
কেশপুর শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০৩:০১
Share: Save:

নিজেদের কার্যালয় থেকে দলের পতাকা, ফেস্টুন, ফ্লেক্স খুলে ফেলছিলেন তৃণমূল কর্মীরাই। তার পরে শুরু হল চুনকাম। ধীরে ধীরে মুছে ফেলা হল দেওয়ালে আঁকা ঘাসফুল, দলের নামও!

পরে সেই কার্যালয় ফিরিয়ে দেওয়া হল সিপিএমকে। যদিও বামেরা এখনই সেখানে লাল ঝান্ডা তুলছে না। আপাতত শুধু কার্যালয়ের গায়ে দলের নাম লেখা হবে।

ঘটনাস্থল কেশপুরের মহিষদা। তৃণমূলের তারকা সাংসদ দেবের দেশের বাড়ির গ্রাম এই মহিষদা। কেশপুর এ বারও প্রায় ৯২ হাজারের লিড দিয়েছে দেবকে। ঘাটাল কেন্দ্রে জিতে ফের সাংসদ হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। মহিষদাও ভূমিপুত্রকে এগিয়েই রেখেছে। গ্রামের তিনটি বুথ মিলিয়ে তৃণমূল পেয়েছে ১,৬২৮ ভোট, বিজেপি ৭১০ ভোট। আর বামেরা পেয়েছে ১৫৯ ভোট।

তা হলে কেন পার্টি অফিসের ভোলবদল?

স্থানীয় সূত্রে খবর, বাম জমানায় ওই কার্যালয় সিপিএমেরই ছিল। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল হয়। সে বছরও এন্তাজ আলিদের কেশপুরে সিপিএম জিতলেও মহিষদার এই পার্টি অফিস হাতছাড়া হয়েছিল। কার্যালয়টির দখল নিয়েছিল তৃণমূল। এ বার লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরে ওই কার্যালয়ের কাছেই পদ্ম-পতাকা উড়তে দেখা যায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার মহিষদায় বিজেপির পতাকা দেখার পরে প্রমাদ গোনেন এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। শনিবারই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, ওই কার্যালয় সিপিএমকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তার পরে রাতারাতি দেবের ভোট প্রচারের ফ্লেক্স নামিয়ে, তৃণমূলের পতাকা খুলে দেওয়াল চুনকাম করে দেওয়া হয়।

এটাই ছিল তৃণমূলের পার্টি অফিস।

মহিষদাতেই দেশের বাড়ি সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের। তিনি মানছেন, ‘‘ওই কার্যালয়টি আমাদেরই ছিল। তৃণমূল দখল করে নিয়েছিল।’’ এখন কার্যালয় ফেরত দিল কেন? তরুণবাবুর জবাব, ‘‘রাজ্যের নানা জায়গায় ভোটে হেরে তৃণমূল বোধহয় এ বার গণতান্ত্রিক সৌজন্যের মর্ম বুঝতে পারছে।’’

এ বার ভোট প্রচারের গোড়া থেকে রাজনৈতিক সৌজন্যের বার্তা দিয়েছেন দেব। তবে তাঁর দেশের বাড়ির গ্রামে সিপিএমকে পার্টি অফিস ফেরানোর ক্ষেত্রে অবশ্য সৌজন্য নয়, রাজনৈতিক অঙ্কের ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে। লোকসভায় ভরাডুবির পরেও দিকে দিকে সিপিএম পার্টি অফিস পুনরুদ্ধার শুরু করায় রাজনৈতিক মহলে মূলত দু’টি সম্ভাবনা নিয়ে চর্চা চলছে। প্রথমত, তৃণমূলকে রুখতে রাম-বাম সন্ধির তত্ত্ব। দ্বিতীয়ত, বিজেপিকে ঠেকাতে সিপিএম অফিস খোলাচ্ছে তৃণমূলই। মহিষদার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সম্ভাবনাই সামনে আসছে।

তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান বলেন, ‘‘মহিষদার ওই ঘটনা আমি শুনেছি। আসলে ব্লক থেকে আমরা কিছু করিনি। এটা স্থানীয়রাই করেছেন।’’ সঞ্জয় খোলসা না করলেও মহিষদার স্থানীয় এক তৃণমূলকর্মী মানছেন, ‘‘আমরা নজর রাখব সিপিএম কার্যালয় যেন সিপিএমেরই থাকে। যদি দেখি ওটা বিজেপির হয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা ফের ওখানে বসতে শুরু করব।’’ আর বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘এ ভাবে সিপিএমকে আঁকড়ে তৃণমূল বাঁচতে পারবে না।’’

রাতারাতি ভোল বদলানো পার্টি অফিসে গ্রিলে অবশ্য এখনও লেখা টিএমসি, গ্রিলের নকশায় উঁকি দিচ্ছে ঘাসফুল।

ছবি: কিংশুক আইচ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE