Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সরকারি প্রকল্পের ঘরে পার্টি অফিস!

বুধবার দিনভর বিজেপির বিক্ষোভ, পঞ্চায়েতে ঘেরাও চলার পরে, ঘরের দেওয়ালে প্রকল্পের আইডি নম্বর (ডব্লিউবি১৬৮৫৩৩২), উপভোক্তার নাম লিখে দিল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ২ পঞ্চায়েত।

ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে উপভোক্তা শঙ্কর মাঝি।  নিজস্ব চিত্র

ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে উপভোক্তা শঙ্কর মাঝি। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
জামালপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০৪:১১
Share: Save:

ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া নীল-সাদা পার্টি অফিস, হয়ে গেল বাংলার আবাস যোজনার ঘর।

বুধবার দিনভর বিজেপির বিক্ষোভ, পঞ্চায়েতে ঘেরাও চলার পরে, ঘরের দেওয়ালে প্রকল্পের আইডি নম্বর (ডব্লিউবি১৬৮৫৩৩২), উপভোক্তার নাম লিখে দিল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ২ পঞ্চায়েত। যদিও ঘরটি তালাবন্ধ থাকায় ঢুকতে পারেননি ওই উপভোক্তা বৃদ্ধ শঙ্কর মাঝি।

প্রশাসনের দাবি, আপাতত দু’দিন ঘরটি পুলিশ পাহারা দেবে। শুক্রবার সব পক্ষকে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তৃণমূলের জামালপুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ পাল অবশ্য এ দিনও ঘরটিকে দলীয় কার্যালয় বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গত বছর ঘরটি তৈরি হয়েছে। ওটা দলের কার্যালয়। এখন পঞ্চায়েতের কিছু লোক আর বিজেপি মিলে ওটাকে দলীয় দফতর নয় বললে হবে না।’’ তবে দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “অভিযোগ যখন হয়েছে, তখন তদন্ত করলেই সত্যটা সামনে আসবে।’’ অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার।

খেত-জমির মধ্যে পাকা ঘর তাঁর নামে। অথচ, কাঠুড়িয়াপাড়ার বাঁধের উপরে অস্থায়ী ঠিকানায় রাত কাটে দিনমজুর শঙ্করবাবুর। এলাকার লোকজনের দাবি, ওই ঘরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, এলইডি টিভি রয়েছে। লোকসভা ভোটের সময় ছাদে তৃণমূলের পতাকা উড়ত, তৃণমূলের লোকজন নিয়মিত বৈঠকও করতেন। শঙ্করবাবুও বলেন, ‘‘প্রথমে কিছুই জানতে পারিনি। পরে এলাকার তৃণমূল নেতারা আমাকে ওই ঘরের সামনে দাঁড় করিয়ে পরপর তিন বার ছবি তোলান। এক নেতা জানান, আমার নামে ঘর তৈরির টাকা এসেছে। বাংলার আবাস যোজনার সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। কিন্তু ঘরও পাইনি, টাকাও দেখিনি।’’ ছবি তোলার বিষয়টি তিনি কথাপ্রসঙ্গে এলাকার এক বিজেপি নেতাকে বলেছিলেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘সোশ্যাল ইকোনমিক সেনসাস’ অনুযায়ী, ওই প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ হয়। ‘ওপেন পোর্টাল’ থেকে সেই তালিকা পান জেলাশাসক। তিনি পাঠান বিডিওদের। ব্লক প্রশাসন থেকে খবর পান উপভোক্তা। টাকা সরাসরি ঢোকে উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে।

শঙ্করবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। তাঁর দাবি, তিনি নিজে অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টাও করেননি। ফলে, তাঁর নাম ভাঁড়িয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে তৃণমূলের লোকজনই টাকা তুলে নিয়েছে, এমনই অভিযোগ বিজেপির।

বিজেপির যুব নেতা অজয় ডোকালের দাবি, “সোমবার প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘরে ঢুকিয়েও দেওয়া হয় শঙ্করবাবুকে। কিন্তু বুধবার তাঁকে বার করে দিয়ে ফের তালা ঝুলিয়ে দেয় তৃণমূল।’’

এর পরেই এ দিন দুপুরে বিজেপি ওই ঘরের মাথায় দলীয় পতাকা টাঙিয়ে ঘোষণা করে, শঙ্করবাবু না পাওয়া পর্যন্ত ঘরের দখল নিচ্ছে তারা। এই মর্মে তারা বিক্ষোভ দেখায়, জামালপুর ২ পঞ্চায়েতে গিয়ে কর্তাদের ঘেরাও করে। তার পরে পঞ্চায়েতের তরফে মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য লিখে দেওয়া হয় ওই ঘরের দেওয়ালে।

পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান উদয় দাস বলেন, “ওই সংসদে আমাদের দলের সদস্য সুবল গোড়াকে নিয়ে শুক্রবার আলোচনা করা হবে। দলের কাছে ওই ঘরটিকে পার্টি অফিস হিসেবে ব্যবহার করার কোনও বৈধ নথি আছে কি না, দেখা হবে তা-ও।’’

শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘ওরা যদি আমাকে ছবি তোলানোর জন্য না ডাকত, কিছুই জানতে পারতাম না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Party Office Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE