Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
India-China

রাজেশের মুখ দেখে জ্ঞান হারালেন মা, বোনও

বিপুল এবং রাজেশের দেহ বৃহস্পতিবার রাতেই পৌঁছে গিয়েছিল নিকটবর্তী সেনা ছাউনিতে। রাজেশের দেহ ছিল পানাগড়ে

আলিপুরদুয়ারে জওয়ান বিপুল রায়ের কফিনবন্দি দেহের সামনে ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা । শুক্রবার।

আলিপুরদুয়ারে জওয়ান বিপুল রায়ের কফিনবন্দি দেহের সামনে ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা । শুক্রবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার ও মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২০ ০৫:৩৭
Share: Save:

তখন সন্ধ্যা হচ্ছে। বিন্দিপাড়ার রায়বাড়িতে এসে ঢুকল সামরিক গাড়ি। ভিতরে বিপুল রায়ের কফিনবন্দি দেহ। মেরঠ থেকে দীর্ঘ যাত্রা শেষে ততক্ষণে বাড়ি পৌঁছে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী রূম্পা এবং পাঁচ বছরের মেয়ে তামান্না। কফিনের ঢাকনা সরিয়ে বিপুলের মুখ দেখা দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন রূম্পা। কফিনের উল্টো দিকে তখন বাবা নীরেন রায়, হাত বাড়িয়ে একবারের জন্য ছুঁতে চাইছেন বড় ছেলের মুখ। মাথার কাছে বসে ভাই বকুল দাদার মাথার নীচে হাত দিয়ে তুলে ধরতে চাইছেন। এই সব থেকে কিছুটা দূরে বসে রয়েছে তামান্না। ক্লান্ত, অবসন্ন। পিতৃবিয়োগের কিছুই বুঝতে পারছে না। কথা বলছে না কারও সঙ্গে।

প্রায় একই দৃশ্য দেখেছে রাজেশ ওরাংয়ের গ্রাম বেলগড়িয়া। বীরভূমের মহম্মদবাজারের এই গ্রামে তাদের ছেলের দেহ আসে সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ, একই ভাবে সেনাবাহিনীর গাড়িতে চেপে। কফিনে ছেলের দেহ দেখে রাজেশের মা মমতা ও বোন শকুন্তলা এক সময়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বাবা সুভাষ কান্নায় ভেঙে পড়েন।

আরও পড়ুন: গালওয়ান থেকে চিনকে হটানোই মূল চ্যালেঞ্জ

বিপুল এবং রাজেশের দেহ বৃহস্পতিবার রাতেই পৌঁছে গিয়েছিল নিকটবর্তী সেনা ছাউনিতে। রাজেশের দেহ ছিল পানাগড়ে। বিপুলের দেহ রাখা হয় হাসিমারায়। রাজেশের শেষকৃত্য এ দিন সকালেই শেষ হয়ে যায়। সামরিক গাড়িতে কফিন বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরে ১ মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান বাহিনীর লোকজনেরা। রাজেশকে দেখতে কেউ ১৫ কিলোমিটার, কেউ ৫০ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছিলেন বেলগড়িয়ায়। পানাগড় থেকে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত গোটা পথের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অজস্র মানুষ। যেখানে রাজেশকে সমাধি দেওয়া হয়, সেখানে ভিড় উপচে পড়ছিল। স্লোগান উঠছিল সমানে, ‘রাজেশ ওরাং অমর রহে’। শেষকৃত্য শেষে তাঁর মায়ের হাতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয় রাজেশের টুপি, বেল্ট, পোশাক ও ব্যাচ। সঙ্গে সেনার পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকার চেক। রাজেশকে শেষ বারের জন্য দেখতে এসে একই পংক্তিতে চলে আসেন লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী, তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।

সতীর্থদের কাঁধে বাড়ি ফিরল জওয়ান রাজেশ ওরাং-এর দেহ। বীরভূমের বেলগড়িয়া গ্রামে তখন মানুষের ঢল।

বিপুলের শেষযাত্রায় কিন্তু এ দিন তৃণমূল এবং বিজেপি নেতাদের মধ্যে কিছুটা রেষারেষি দেখা যায়। সেটা হাসিমারা বিমানঘাঁটি থেকে শুরু হয়। বিন্দিপাড়ার বাড়িতে গাড়ি ঢোকার পরেও তা চলতে থাকে। রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেব বা তৃণমূলের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীদের সঙ্গে ‘অদৃশ্য’ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন বিজেপি আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লারা। বিপুলের বাড়ির সামনে দু’দল পাল্লা দিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। একসময়ে সেখানে আসেন বিজেপির কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকও।

আরও পড়ুন: লাদাখে সীমান্ত পেরিয়ে ঢোকেইনি কেউ, সর্বদল বৈঠকে মোদী

নিহত রাজেশ ওরাংয়ের কফিনে মাল্যদান করছেন অধীর চৌধুরী। পাশে অনুব্রত মণ্ডল, কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

বাড়ির কাছে মঞ্চে মিনিট কুড়ি রাখা হয় বিপুলের দেহ। তার পরে গান স্যালুটে তাঁকে শ্রদ্ধা জানায় সেনা। শেষে মঞ্চ থেকে নামিয়ে মরদেহ বাড়ির পাশেই গদাধর নদীর পাড়ে শ্মশানে নিয়ে যান সেনারা। সন্ধ্যা ছাপিয়ে তখন রাত নেমেছে।

ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নারায়ণ দে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India-China India China Death Ladakh Border
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE