Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাছ, শুশুক বাঁচানোর উদ্যোগ

মুর্শিদাবাদ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ পর্যন্ত এ রাজ্যে গঙ্গার বিস্তৃতি। বন দফতর সূত্রের খবর, গঙ্গার দু’পারে জেলাগুলির ডিএফও, বনপাল ও মুখ্য বনপালদের নিয়ে কমিটি তৈরি হয়েছে। কী ভাবে এই জীববৈচিত্রকে রক্ষা করা যায়, তার সবিস্তার পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩২
Share: Save:

দূষণের জেরে জলের গুণমান খারাপ হওয়ায় বিপন্ন ইলিশ, শুশুক, কচ্ছপের মতো মাছ ও জলজ প্রাণীরা। তাই গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার পাশাপাশি তাদের বাঁচানোয় উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি এ রাজ্যেও ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পে সেই কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে গঙ্গায় দূষণের উৎসগুলিকে চিহ্নিত করা হবে। পাশাপাশি মাছ ও প্রাণীদের উপরে সমীক্ষাও করা হবে। তার পর এক-একটির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংরক্ষণ পদ্ধতি নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বনকর্তারা।

মুর্শিদাবাদ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ পর্যন্ত এ রাজ্যে গঙ্গার বিস্তৃতি। বন দফতর সূত্রের খবর, গঙ্গার দু’পারে জেলাগুলির ডিএফও, বনপাল ও মুখ্য বনপালদের নিয়ে কমিটি তৈরি হয়েছে। কী ভাবে এই জীববৈচিত্রকে রক্ষা করা যায়, তার সবিস্তার পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ‘ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া’র বিশেষজ্ঞরা এসে এই প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। ভবিষ্যতে পরিবেশপ্রেমী ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাদের এ কাজে যুক্ত করা হতে পারে।

রাজ্যের এক বনকর্তা বলছেন, ‘‘গঙ্গার সঙ্গে যেখানে শাখানদী ও উপনদী সংযুক্ত হয়েছে, সেই এলাকাগুলিকেও এই প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। নদীর পা়ড়ে বসবাসকারী প্রাণীদেরও গুরুত্ব দেওয়া হবে। কারণ, ওরাও গঙ্গার বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত।’’

ইলিশ মাছ বাংলার জীববৈচিত্র এবং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তেমনই গাঙ্গেয় শুশুক জাতীয় জলজ প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত। ঘড়িয়াল তো রয়েইছে, তার উপরে সম্প্রতি মালদহে গঙ্গার চরে দেখা মিলেছে মিঠে জলের কুমিরেরও। কিন্তু গত কয়েক দশকে গঙ্গায় মাত্রাতিরিক্ত দূষণের জেরে তাদের অবস্থা নিয়ে বন দফতরের কাছে নির্দিষ্ট তথ্য নেই।

কয়েক বছর আগে পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ‘ডব্লিউডব্লিউএফ’য়ের সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, ডায়মন্ড হারবার থেকে ফরাক্কা— এই এলাকায় গাঙ্গেয় ডলফিন বা শুশুকের বসতি বিপন্ন হয়ে পড়ছে। একমাত্র হুগলি ও বেহুলা নদীর সঙ্গমস্থলে সবুজদ্বীপে শুশুকের ঝাঁক নজরে এসেছে। প্রবীণ সমুদ্রবিজ্ঞানী অমলেশ চৌধুরী বলছেন, ‘‘গঙ্গায় আগে কত রকমের মাছ পাওয়া যেত। এখন তো সে সব কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে!’’

প্রাণীবিশেষজ্ঞদের মতে, চোরাশিকার এবং দূষণের জেরে বিপন্ন গাঙ্গেয় ‘সফট শেল’ এবং ‘ফ্ল্যাপ শেল’ কচ্ছপেরাও। রাজ্য বন দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘কচ্ছপেরা হচ্ছে নদীর সাফাইকর্মী। ওদের সংখ্যা কমে গেলে নদীর দূষণ বাড়বে। সেই দূষণে বাকি জীববৈচিত্রের ক্ষতি হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE