মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অসমে তৃণমূল প্রতিনিধি দলকে বাধা দেওয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবারই দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই তিনি বিজেপির প্রবল সমালোচনায় সরব হলেন। দেশে ‘সুপার এমার্জেন্সি’ চলছে বলে মন্তব্য করলেন তিনি। শিলচর বিমানবন্দর ছেড়ে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল নড়বে না, রাতভর সেখানেই অবস্থান চলবে। এমন ইঙ্গিতও দিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন।
অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনায় সরব হয়েছেন মমতা। এনআরসি-র খসড়াটি প্রকাশিত হওয়ার পরে প্রথম প্রতিক্রিয়াতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তৃণমূলের তরফ থেকে প্রতিনিধি দল পাঠানো হতে পারে অসমে। এর পরে দিল্লি চলে যান মমতা। সেখানে একাধিক কর্মসূচিতে তিনি এনআরসি-র বিরুদ্ধে সরব হন এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। বিজেপি তথা কেন্দ্র ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে দেশে বিভাজনের রাজনীতি করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সংসদেও তুমুল হইহট্টগোল জুড়ে দেয় তৃণমূল।
বৃহস্পতিবার আর সংসদে নয়, তৃণমূল সাংসদরা হইহট্টগোল জুড়ে দিলেন অসমের শিলচর বিমানবন্দরে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতোই তৃণমূলের প্রতিনিধি দল এ দিন শিলচর পৌঁছয়। সুখেন্দুশেখর রায়, কাকলি ঘোষদস্তিদার, রত্না দে নাগ, অর্পিতা ঘোষ, মমতাবালা ঠাকুর,নাদিমুল হক— এই ৬ সাংসদ রয়েছেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দলে। সঙ্গে রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং বিধায়ক মহুয়া মৈত্র। অসমের পরিস্থিতি দেখতে এবং সেখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে তৃণমূল এই প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে বলে বাংলার শাসক দলের দাবি। কিন্তু অসমের বিজেপি সরকার সে কথা মানতে নারাজ। অসমের পরিস্থিতিকে অশান্ত করতেই বরাক উপত্যকায় ঢুকতে চাইছেন তৃণমূল নেতারা, অভিযোগ বিজেপির। তৃণমূলের প্রতিনিধিরা পৌঁছনোর আগে থেকেই শিলচরে ১৪৪ ধারা জারি করে রেখেছিল প্রশাসন। সেই ১৪৪ ধারার দোহাই দিয়েই বাংলার মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কদের বিমানবন্দরে আটকে দেয় পুলিশ। তৃণমূলের প্রতিনিধিরা জোর করে বিমানবন্দর থেকে বেরনোর চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। অসমের পুলিশ তৃণমূল সাংসদদের মেরেছে এবং মহিলা সাংসদরাও রেহাই পাননি, অভিযোগ করছে তৃণমূল। শিলচর বিমানবন্দরে অবস্থানও শুরু করেছেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন, মুসলিমে ‘না’, অন্যদের স্বাগত সঙ্ঘ ও বিজেপির
এ দিন কলকাতায় ফিরেই এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন তৃণমূলনেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন দিল্লি থেকে প্লেনে উঠছি, তখনই খবর পেয়েছি যে, শিলচরে আমাদের প্রতিনিধি দলকে হেনস্থা করা হয়েছে এবং পুলিশ বর্বরের মতো আচরণ করেছে।’’ সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের বিরুদ্ধে কথার খেলাপের অভিযোগ আনেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছিলেন, অসমে কাউকে হেনস্থা করা হবে না। তার পরেও আমাদের প্রতিনিধি দলকে ওখানে হেনস্থা করা হল, বিমানবন্দর থেকে বেরোতে দেওয়া হল না। এমনকি, বিমানবন্দরের ভিতরেও তাঁদের মারা হয়েছে।’’
অসম সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন মমতা। সেখানে মানুষ আতঙ্কে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। মানুষের আতঙ্কের খবর চাপা দিতেই তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘সরকার সুপার এমার্জেন্সি জারি করেছে। অত্যন্ত খারাপ আচরণ করছে। আমি এই নিন্দা করছি।’’ বিজেপি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে বলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন মন্তব্য করেন। ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে ৪০ লক্ষ মানুষকে দেশের বাইরে বার করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলে মমতা এ দিন অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন, অসমে আর নয়, যদি বিদেশি বলে!
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য অসম সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন। এনআরসি ইস্যু নিয়ে এবং রাজ্যের প্রস্তাবিত নতুন নামকরণের বিরোধিতা করে বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন দিলীপ ঘোষ। রাজভবন থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অসমে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত সেখানকার প্রশাসন নিয়েছে, তাকে আমি একশো বার সমর্থন করছি। কিছুতেই ওঁদের ঢুকতে দেওয়া উচিত নয়। ওঁদের নেত্রী গৃহযুদ্ধের হুমকি দিচ্ছেন। তাই ওঁরা ঢুকলে শান্ত অসম অশান্ত হবে।’’ তৃণমূলকে কটাক্ষ করে দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, ‘‘বিমানবন্দরে আটকে রেখে অসমের চা খাইয়ে পুলিশ ওঁদের ফেরত পাঠিয়ে দিক।’’
আসালসোলে সাম্প্রদায়িক অশান্তির পরে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি পরিস্থিতি দেখতে ঘটনাস্থলে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁকে অনুমতি দেয়নি। অভিযোগ করেন দিলীপ। ধূলাগড়ে বা বসিরহাটে অশান্তির পরে বিজেপির প্রতিনিধি দলকে সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি বলে দিলীপ মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, অসমে যা হল, তা তৃণমূলের পাওয়াই ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy