Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
তত্ত্ব ষড়যন্ত্র

বন্দি মাওবাদীদের দেখা পাবেন না বন্ধুরা

জেলে বসেই কিছু মাওবাদী শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের নিকেশ করার ছক কষছে বলে রাজ্য সরকারের আশঙ্কা। গোয়েন্দা-তথ্যের ভিত্তিতে প্রশাসনের এ-ও অনুমান, বন্দি মাওবাদীরা জেল পালানোর চেষ্টা করতে পারে। এমতাবস্থায় বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদী বন্দিদের গতিবিধির উপরে নজরদারি বাড়াচ্ছে কারা দফতর।

অত্রি মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০৩:২০
Share: Save:

জেলে বসেই কিছু মাওবাদী শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের নিকেশ করার ছক কষছে বলে রাজ্য সরকারের আশঙ্কা। গোয়েন্দা-তথ্যের ভিত্তিতে প্রশাসনের এ-ও অনুমান, বন্দি মাওবাদীরা জেল পালানোর চেষ্টা করতে পারে। এমতাবস্থায় বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদী বন্দিদের গতিবিধির উপরে নজরদারি বাড়াচ্ছে কারা দফতর।

এবং এরই অঙ্গ হিসেবে বাইরের লোকের সঙ্গে মাওবাদী বন্দিদের সাক্ষাতে রাশ টানা হচ্ছে। এমনিতে আত্মীয় বা উকিল বাদ দিয়ে বন্ধুরা ইচ্ছে করলে কয়েদির সঙ্গে দেখা করে আসতে পারেন। কিন্তু কারা দফতর সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, এখন মাওবাদী বন্দির সঙ্গে কোনও ‘বন্ধু’ দেখা করতে পারবেন না। পারবেন শুধু ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও আইনি পরামর্শদাতারা। তাঁদেরও যথেষ্ট আগে আবেদন করতে হবে।

কিন্তু জেলে তো কয়েদিদের চুরি-ডাকাতি কিংবা খুন-ধর্ষণের আসামি হিসেবে চিহ্নিত করার চল নেই! কারও গায়ে ‘মাওবাদী’ তকমাও লাগানো নেই। যার বিরুদ্ধে যে ধারায় মামলা চলছে বা সাজা হয়েছে, জেলে সেটাই তার পরিচয়। তা হলে কড়াকড়ি কার্যকর হবে কী ভাবে?

স্থির হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ প্রযোজ্য কিংবা যারা দেশদ্রোহিতায় অভিযুক্ত, তাদের ক্ষেত্রে নতুন সাক্ষাৎ-বিধি বলবৎ হবে। এডিজি (কারা)-র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ‘রাজনৈতিক বন্দি’র মর্যাদাপ্রাপ্তেরাও এর আওতায় পড়বেন। এই ধরনের কয়েদির সঙ্গে দেখা করতে হলে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা উকিলকেও অন্তত সাত দিন আগে আবেদন করতে হবে। পুলিশের কাছ থেকে আবেদনকারীর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরে জেল-কর্তৃপক্ষ সাক্ষাতের অনুমতি দেবেন।

এখানেই শেষ নয়। বন্দির সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রার্থীর কী কথা হল, তা-ও প্রশাসন নজরে রাখতে চায়। তাই কথাবার্তার সময়ে গোয়েন্দা দফতরের এক প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। ওই সময়ে তেমন কাউকে পাওয়া না গেলে সাক্ষাৎপর্বই যে বাতিল হয়ে যেতে পারে, বিজ্ঞপ্তিতে তারও ইঙ্গিত রয়েছে।

ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা কেন?

শীর্ষ প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য: বাম আমলে জঙ্গলমহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি বারবার তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেবেন। কিন্তু তৃণমূল জমানায় বন্দিমুক্তি দূরের কথা, জঙ্গলমহলের তিন জেলায় এখনও ৩৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন। ‘‘ফলে মাওবাদীদের রোষের মুখে পড়েছে শাসকদল।’’— বলছেন এক আধিকারিক।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর: সরকারে আসার পরেও কিছু দিন তৃণমূলের সঙ্গে মাওবাদী-সহ জনগণের কমিটির সুসম্পর্ক বজায় ছিল। যার সুবাদে কমিটির বেশ কয়েক জন নেতা তৃণমূলে যোগ দেন। সুচিত্রা মাহাতো, জাগরী বাস্কের মতো কয়েক জন মাওবাদী আত্মসমর্পণও করেন। কিন্তু যে কিষেণজি মমতাকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে দেখতে চেয়েছিলেন, মমতা-জমানাতেই যৌথ বাহিনীর হাতে তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় ছবিটা বেবাক পাল্টে গিয়েছে। দু’পক্ষে দূরত্ব বেড়েছে। উপরন্তু ছত্রধর মাহাতোর মতো কিছু কমিটি-নেতার সাম্প্রতিক সাজা ঘোষণায় তা আরও বাড়ার আশঙ্কা। বস্তুত ঝাড়খণ্ড-ওড়িশা লাগোয়া পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ায় মাওবাদীরা ফের একজোট হচ্ছে বলেও গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটেই প্রশাসনের সতর্কতা। এক কারা-কর্তার কথায়, ‘‘গোয়েন্দারা জেনেছেন, মাওবাদীরা জেলে বসেই শাসকদলের কয়েক জন বড় দরের নেতা-মন্ত্রীকে মারার ছক কষছে। ‘বন্ধু’দের হাত ঘুরে সেই পরিকল্পনা বাইরে আসছে।’’ গোয়েন্দা-সূত্রের দাবি, মাওবাদী বিভিন্ন গণ-সংগঠনের কর্মীরাই ‘বন্ধু’ পরিচয়ে জেলে ঢুকে খবরাখবর দেওয়া-নেওয়া করছে।

অতএব, কোনও ‘বন্ধু’র সঙ্গে মাওবাদী বন্দির সাক্ষাৎ করানোর ঝুঁকি নিতে সরকার আর রাজি নয়। যদিও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, সিদ্ধান্তটি অবৈধ। রাজ্য গণতান্ত্রিক অধিকাররক্ষা সমিতির তরফে রণজিৎ শূরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এরা রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তার বদলে এখন চরম অমানবিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE