কোথাও গ্রামবাসীরা জমি দিতে রাজি হননি, কোথাও জবরদখল উচ্ছেদ করা যায়নি, কোথাও বা সাত-আট বার দরপত্র চেয়েও কাজ করতে আগ্রহী ঠিকাদার মেলেনি। এমনই বিবিধ কারণে ৪০০ কিমি গ্রামীণ রাস্তা পাকা করার কাজ বাতিল করে দিল পঞ্চায়েত দফতর।
চার বছর বা তার বেশি সময় ধরে প্রকল্প পড়ে থাকায় ওই রাস্তাগুলি পাকা করার জন্য প্রস্তাবিত ২০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে না বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল কেন্দ্র। এত দিন ঝুলিয়ে রেখে রাজ্য শেষ পর্যন্ত প্রকল্পগুলি বাতিল করে দেওয়ায় স্পষ্ট— শুধু শহরাঞ্চলে নয়, জমির সমস্যায় এখন গ্রামেও পাকা রাস্তা তৈরি করা মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য প্রকল্প গুটিয়ে ফেলার দায় না নিয়ে আগের আমলকেই দুষছেন এ জন্য। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘ওই সব প্রকল্প সিপিএম আমলের। আমাদের সময়ে কোনও কাজ হাতে নেওয়ার পরে তা বাতিল করতে হয়নি।’’
কিন্তু প্রস্তাবিত কাজ বাতিলই বা করতে হল কেন? গ্রামীণ সড়ক যোজনার দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সত্যব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রামবাসীরা রাস্তার জন্য জমি দিতে রাজি হননি। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েও রাস্তার পাশ থেকে জবরদখল সরানো যায়নি। আবার কয়েকটি প্রকল্পে বার বার দরপত্র ডেকেও কোনও ঠিকাদারের সাড়া মেলেনি। ফলে প্রকল্পগুলি বাতিল করা ছাড়া উপায় ছিল না।’’
বাতিল রাস্তা
• দৈর্ঘ্য: ৪০০ কিমি
• সংখ্যা: ৯৬
• খরচ: ২০০ কোটি
• ক্ষতিগ্রস্ত: অন্তত ২০ লক্ষ
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় গ্রামের সব রাস্তা পাকা করার উদ্দেশ্য নিয়ে এই ‘প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা’ শুরু হয়েছিল। এই প্রকল্পে গ্রামের মাটি বা মোরামের রাস্তা সাড়ে সাত মিটার চও়ড়া করে পাকা রাস্তায় পরিণত করার কথা ছিল। পঞ্চায়েত কর্তারা জানাচ্ছেন, মাটি বা
মোরামের রাস্তা চওড়া করতে দু’পাশের কিছুটা করে জমি দরকার পড়ে। এর বেশির ভাগটাই খাস জমি। সরকার এই জমি কেনে না, অধিগ্রহণও করে না। গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে দানপত্র লিখিয়ে জমি জোগাড় করা হয়। কিন্তু যে ৪০০ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার প্রকল্প বাতিল করা হল, সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই কেউ জমি দিতে রাজি হননি। ভাঙড়ের ঘটনার পরে এ নিয়ে নতুন করে জোরাজুরি না করার নির্দেশ আসে। ফলে রাস্তা তৈরি থেকে পিছিয়ে আসে পঞ্চায়েত দফতর।
আরও পড়ুন: ব্যক্তিগত জীবনেও ‘অসমাপ্ত’ সম্পর্ক রয়েছে, রয়েছে খারাপ লাগাও
তাতেও দমছেন না পঞ্চায়েত মন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘৪০০ কিমি বাতিল হয়েছে তো কী হয়েছে? আমরা এ বছর ৪০০০ কিমি রাস্তা তৈরি করব। পুরনো রাস্তার বদলে আরও নতুন রাস্তা তৈরি করব!’’ কিন্তু জমি-সমস্যা মিটবে কী ভাবে? জবরদখল কি সরাবে সরকার? মুখে কুলুপ পঞ্চায়েত ভবনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy