Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভোট-লুঠ রুখতে পাল্টা জবাবের ডাক সূর্যদের

এখনও বাকি ৯১টি পুরসভার ভোট। সেই ভোটে ‘লুঠ’ বন্ধ করতে পথে নেমে শাসক দলের উপরে পাল্টা চাপ সৃষ্টির রাস্তায় গেল বামেরা। কলকাতার পুরভোটে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে সোমবার বিকেলে লালবাজার অভিযানের ডাক দিয়েছিল রাজ্য বামফ্রন্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৮
Share: Save:

এখনও বাকি ৯১টি পুরসভার ভোট। সেই ভোটে ‘লুঠ’ বন্ধ করতে পথে নেমে শাসক দলের উপরে পাল্টা চাপ সৃষ্টির রাস্তায় গেল বামেরা। কলকাতার পুরভোটে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে সোমবার বিকেলে লালবাজার অভিযানের ডাক দিয়েছিল রাজ্য বামফ্রন্ট। জমায়েতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র রীতিমতো হুমকির সুরে বলেন, ‘‘যে ভাষায় ওরা আক্রমণ করছে, সেই ভাষাতেই জবাব দিতে হবে। ভোট লুঠ করতে এলে প্রতিরোধ হবে।’’ ভো‌ট-লুঠ বন্ধ করতে লড়াইকেই ‘পাখির চোখ’ করার নির্দেশ দেন সূর্যবাবু।

কলকাতার পুরভোটের আগেও কর্মীদের প্রতিরোধের বার্তা দিয়েছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু ভোটের দিন কাউকে সে ভাবে প্রতিরোধ করতে দেখা যায়নি। সে জন্য বাকি পুরসভাগুলির ভোটের আগে ফের কর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করছেন সূর্যবাবুরা। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ থেকে বামেদের মিছিল লালবাজারের দিকে গেলে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের উপরে আটকে দেওয়া হয়। সেখানেই পথে বসে পড়েন বাম কর্মীরা। ছোট গাড়ির উপরে অস্থায়ী মঞ্চে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সভা করেন বাম নেতৃত্ব। সভা শেষে সিপিএম নেতা রবীন দেব বলেন, ‘‘বাকি ৯১ টি পুরসভার ভোটে যদি সন্ত্রাস বন্ধ না হয়, তা হলে আমরা বাংলা বন‌্‌ধের পথে যেতে পারি।’’ বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যেই বাম প্রার্থী ও কর্মীদের উপরে হামলা হচ্ছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আগামী ২৩ এপ্রিল বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ দিকে, কলকাতার পুরসভোটে সন্ত্রাস এবং পুলিশের ‘নীরব দর্শক’ ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আজ, মঙ্গলবার বিকেলে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিল করে লালবাজার অভিযান করবে কংগ্রেস। বামেরা এ দিন পুলিশের কাছে কোনও ডেপুটেশন না দিলেও কংগ্রেস কিন্তু ডেপুটেশন দেবে।

কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বামফ্রন্টের প্রার্থী, তাঁদের এজেন্ট এবং সমর্থকরা এ দিনের জমায়েতে এসেছিলেন। কয়েক হাজার মানুষের এই লালবাজার অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআইয়ের প্রবীর দেব, ফব-র হাফিজ আলম সৈরানি, আরএসপির মনোজ ভট্টাচার্য প্রমুখ। পুলিশ ব্যারিকেড করে মিছিল আটকে দিলে কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক দিলীপ সেন বলেন, ‘‘পুলিশ তৃণমূলকে ভোট লুঠে সাহায্য করেছে। তাই আমরা পুলিশের কাছে কোনও ডেপুটেশন দেব না। শুধু বলব, ছিঃ!’’ জমায়েত থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ছি! ছি!’ রব ওঠে।

কলকাতায় ‘ভোট-লুঠ’ হলেও কেন তাঁরা এখনই চরম প্রতিবাদের পথে যাচ্ছেন না, তা ব্যাখ্যা করে বিমানবাবু বলেন, ‘‘এখনও ৯১টি পুরসভায় ভোট বাকি আছে। আমরা নির্বাচন কমিশকে বলছি, অবাধ ভোটের ব্যবস্থা করুন। আমরা দেখতে চাই, কমিশন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’ এ দিনই রবীনবাবু কমিশনকে চিঠি দিয়ে কলকাতায় ৩৫টি ওয়ার্ডে সন্ত্রাস হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। শনিবার তৃণমূল শুধু বিরোধী নয়, পুলিশকেও রেয়াত করেনি, তা জানিয়ে বিমানবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের গুন্ডারা ভোট লুঠ করলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। এর পরেও তৃণমূলের লোকেরা পুলিশকে গুলি করছে! আর মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, পুলিশ ভাল কাজ করেছে!’’ এমন পরিস্থিতি অতীতে কখনও হয়নি, এই অভিযোগ করে বিমানবাবুর আশঙ্কা, বাকি ৯১টি পুরসভার ক্ষেত্রেও তৃণমূল একই পথে যেতে পারে। তাঁর আহ্বান, ‘‘রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ আমাদের রাস্তা।’’

কী করে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সামনেই ভোট-লুঠ করা হয়েছে, তা বাম নেতা ও প্রার্থীরা তুলে ধরেন। রবীনবাবু বলেন, ৯৭ বছরের বৃদ্ধ সাধন গুপ্তর ভোট থেকে আরম্ভ করে ১৮ বছর বয়সের নতুন ভোটার, এমনকী, মৃত ব্যক্তিদেরও ভোট দিয়েছে তৃণমূলের বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। জমায়েতে ভিড় হয়েছিল ভালই। কিন্তু সূর্যবাবু যতই জোর গলায় প্রতিরোধ করার কথা বলুন, অধিকাংশ বাম কর্মীদের গলায় ছিল আক্ষেপ! শেষ পর্যন্ত ২৫ এপ্রিল ভোট-লুঠ বন্ধ করা যাবে কি না, বাম নেতৃত্ব এখনও তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত রয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE