Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

স্থানীয় অভিভাবকই ‘ধর্ষক’, যাবজ্জীবন সাজা গবেষকের

তিনি তখন বিশ্বভারতীর গবেষক। বাংলাদেশের নাগরিক। সে দেশ থেকেই বিশ্বভারতীর পাঠভবনে পড়তে আসা এক ছাত্রীর তিনি ছিলেন স্থানীয় অভিভাবকও। সেই সফিকুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল সিউড়ির বিশেষ আদালত। দিল, ওই ছাত্রীকেই দিনের পর দিন ধর্ষণের দায়ে!

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০৩:৪৬
Share: Save:

তিনি তখন বিশ্বভারতীর গবেষক। বাংলাদেশের নাগরিক। সে দেশ থেকেই বিশ্বভারতীর পাঠভবনে পড়তে আসা এক ছাত্রীর তিনি ছিলেন স্থানীয় অভিভাবকও। সেই সফিকুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল সিউড়ির বিশেষ আদালত। দিল, ওই ছাত্রীকেই দিনের পর দিন ধর্ষণের দায়ে!

বীরভূম জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটির রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে এ দিন বিশেষ আদালতে উপস্থিত ছিলেন আর এক সরকারি আইনজীবী সমিদুল আলম। তিনি জানান, সিউড়ির বিশেষ আদালতের বিচারক মহানন্দ দাস সফিকুল ইসলামকে বুধবার দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। এ দিন তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। পাশাপাশি নির্যাতিতার পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশে দিয়েছেন।

ঢাকা থেকে বিশ্বভারতীর পাঠভবনে পড়তে এসেছিল দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। বাংলাদেশেরই সিরাজগঞ্জের দাদপুরের বাসিন্দা সফিকুল তখন বিশ্বভারতীর পল্লি সংগঠন বিভাগে গবেষণা করছেন। পাঠভবনের ছাত্রীটির পরিবারের পূর্ব পরিচিতও ছিলেন সফিকুল। ছাত্রীটির পরিবারের সদস্যেরা তাই বিশ্বাস করে সফিকুলকেই তাঁদের বাড়ির মেয়ের স্থানীয় অভিভাবকের স্থান দেন। কিন্তু, সফিকুলই যে এ ভাবে তাঁদের বিশ্বাসে আঘাত করবেন, তা তাঁরা ভাবতে পারেননি! নির্যাতিতার অভিযোগ, শান্তিনিকেতনের গুরুপল্লি এলাকায় যে ভাড়া বাড়িতে সফিকুল থাকতেন, সেখানে ডেকে তাকে একাধিক বার ধর্ষণ করেছেন। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের ছবি তুলে রেখে মেয়েটিকে টানা ব্ল্যাকমেলও করেছেন সফিকুল। শেষে ২০১৪ সালের ৫ ডিসেম্বর, শান্তিনিকেতন ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ করে নির্যাতিতা।

সমিদুল জানিয়েছেন, পরের দিন গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। ওই গবেষকের বাড়ি থেকে পুলিশ উদ্ধার করে ল্যাপটপ, পেনড্রাইভ, সিমকার্ড-সহ একাধিক জিনিসপত্র। ঘটনার খবর জানাজানি হতে নড়েচড়ে বসেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষও। সফিকুলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে বিশ্বভারতী। নির্যাতিতা নাবালিকা হওয়ায় মামলা যায় সিউড়ির বিশেষ আদালতে। শিশুদের যৌন নির্যাতন রোধে আইন বা পকসো-র আওতায় মামলার বিচার শুরু হয়।

সমিদুল বলেন, “নির্যাতিতার বন্ধু, শিক্ষিকা-সহ মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে আদালত। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীত ভাবে দোষ প্রমাণিত হয়েছে। সে জন্যই তার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে।’’ সাজাপ্রাপ্তের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, অভিযোগকারিণী নাবালিকা ও বিদেশিনি হওয়ায় এত কঠোর সাজা হয়েছে। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্তের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আদালত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছে। স্থানীয় অভিভাবক হওয়ার সুযোগ নিয়ে আর কেউ যাতে এমন না করতে পারে, এই শাস্তি সেই বার্তাই দেবে বলে আমাদের আশা।’’ এ দিন আদালতে নির্যাতিতার পরিবারের কেউ ছিলেন না।

তবে, বিশ্বভারতীতে ছাত্রীদের উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আগেও উঠেছে। তবে, এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তের শাস্তি স্বস্তির বার্তা এনেছে অন্য নির্যাতিতার পরিবারেও। তেমনই এক জন সিকিম থেকে অনেক আশা নিয়ে কলাভবনে পড়তে এসেছিলেন দু’বছর আগে। ২০১৪ সালে অগস্টে প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল ‘সিনিয়র’ তিন ছাত্রের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তেরা এখন জামিনে মুক্ত। আর নির্যাতিতা মাঝপথে পড়া ছেড়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সিকিমে তাঁর পরিবারের সঙ্গে রয়েছেন। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, মেয়েদের সর্বনাশ যারা করে, তাদের এমনই শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু, তাঁরা বিচার কবে পাবেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Molestation Rape Researcher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE