জনসংযোগ: দাসপুরে প্রচার ভারতী ঘোষের। সোমবার। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
এ যেন ‘সাদা আমি-কালো আমি’-র লড়াই। বিরুদ্ধ প্রার্থী নয়, ভোটের মাঠে তাঁর নিজের অতীতই যে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ, প্রথম প্রচারে নিজেই সেই বার্তা দিলেন ভারতী ঘোষ।
জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার, বর্তমানে ঘাটাল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ভারতীর প্রচারের প্রথম দিন ছিল সোমবার। গোড়ায় ডেবরায় কর্মিসভা, তারপর মাদপুরের মনসা মন্দিরে পুজো ও দিনের শেষে সোনা-তালুক দাসপুরে জনসংযোগ— সর্বত্রই ঘুরেফিরে এল তাঁর দুই সত্তার সংঘাত।
বিজেপি-ও যে ভারতীর অতীত নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই, তা বোঝা গেল দলের রাজ্য সভাপতির কথায়। ভারতীকে পাশে বসিয়েই দিলীপ বললেন, “ভারতী ঘোষ যখন পুলিশ অফিসার ছিলেন, তখন সরকারের পাশাপাশি ওঁর বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ করেছিলাম। এখন উনি আমাদের দলের কর্মী, প্রার্থী। সরকারে থাকতে ওঁকে যা সহ্য করতে হয়েছে, উনিও সেটা লোককে বলবেন।” আর ভারতীর বক্তব্য, “এক জন পুলিশ সুপারের চাকরি জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে। পুলিশ সুপার হিসেবে যে ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার দরকার করেছি। প্রশ্ন উঠলে জবাব দেব।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার থাকাকালীন কখনও সবংয়ে ছাত্র খুন, কখনও পিংলায় বিস্ফোরণ বিতর্কে নাম জড়িয়েছিল ভারতীর। অভিযোগ ছিল, শাসক তৃণমূলের হয়ে মামলা সাজাচ্ছেন তিনি। ঘটনাচক্রে ভারতী যে লোকসভা আসনের প্রার্থী, সেই ঘাটালের মধ্যেই পড়ে সবং, পিংলা। তা ছাড়া যে দাসপুরের সোনা প্রতারণা মামলায় নাম জড়িয়ে ভারতী এখন প্রাক্তন আইপিএস, সেই দাসপুরও রয়েছে তাঁর কেন্দ্রে।
প্রচারে বিতর্কের বাউন্সার কী ভাবে সামলাবেন? ভারতীর জবাব, ‘‘এ সব মিথ্যা মামলা। অনেকের নামেই রয়েছে। মানুষকে সব বুঝিয়ে বলব।’’ প্রথম দিনের প্রচারেই তিনি ছুঁয়েছেন দাসপুরের চক চাঁইপাট ও রাধাকৃষ্ণপুর। এখানকার দুই বাসিন্দাই ভারতীর নামে সোনা প্রতারণার মামলা করেছিলেন। সেই সোনা তালুকে ঘোরার ফাঁকে ভারতীর আশ্বাস, ‘‘জিতলে ঘাটালের বন্যা রোধে মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করবই।’’
ভারতীর অতীত ছায়া ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা এ দিন বারবার সামনে এসেছে। ডেবরায় কর্মিসভায় তিনি বলেছেন, “আজ থেকে আপনাদের রেশন কার্ডের শেষে আমার নামটা লিখে রেখে দিন। যখনই কোনও প্রয়োজন হবে নির্দ্বিধায় আমাকে ফোন করবেন। আমি তো পরিবারেরই লোক।”
সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ দাসপুরের বেলতলায় পৌঁছন ভারতী। পুলিশের সুপারের নিরাপত্তার ঘেরাটোপ এখন অতীত। ভারতীও সে সব ভুলে পথচলতি লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। চলে যান চা দোকানে। চায়ে চুমুক দিয়ে বলে ওঠেন, ‘‘আমি আপনাদের ঘরের মেয়ে। আগেও ছিলাম, এখনও আছি।’’
তৃণমূলও অতীত কাঁটাতেই বিঁধছে ভারতীকে। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলছেন, ‘‘দস্যু রত্নাকরকেও ৬ হাজার বছর তপস্যা করে বাল্মীকি হতে হয়েছিল। আর উনি তো ভারতী ঘোষ। ওঁর কীর্তিকলাপ জেলার মানুষ জানেন। ফলে, চাইলেই উনি অতীত মুছতে পারবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy