মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্র-বিরোধী সরকার গঠনে বাংলার মতো উত্তরপ্রদেশও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে শনিবার ইঙ্গিত দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূলের নেতৃত্বে বাংলাই কেন্দ্রে সরকার গড়বে বলে গত কয়েক দিন ধরে বারবারই মমতা দাবি করছেন। এ দিন হাওড়ার পাঁচলায় ভোটপ্রচারে তিনি আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ আর বাংলা মিলে সরকার গড়বে, এটাই আমার বিশ্বাস।’’ সব বিরোধী দলকে একজোট করলে বিজেপির বিরুদ্ধে সরকার গড়ার প্রয়োজনীয় সংখ্যা থাকবে বলেই মমতার আশা।
বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে বিজেপি-বিরোধী মঞ্চ তৈরিতে তৃণমূল নেত্রীই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিরোধী মঞ্চের একাধিক বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও ছিল তাঁর। এ বার এক এক দফা ভোট পেরোতে বিজেপি-বিরোধী শক্তির অবস্থান অনেকটা অনুকূল হচ্ছে বলে মমতা দাবি করছেন। সে জন্য দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির সম্ভাব্য আসন-পরিস্থিতি উল্লেখ করে তিনি বলছেন, ‘‘বিজেপি এ বার ক্ষমতায় ফিরবে না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে এসে একাধিক সভায় এসে আঞ্চলিক দলগুলির এই বিকল্পের ভাবনাকে কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দিন কয়েক আগে বীরভূমের ইলামবাজারের সভায় তিনি এমন মন্তব্যও করেছেন যে ২০,৩০,৪০টি আসন রয়েছে এমন রাজ্যও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কারও নাম না করে তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য সকলে পাড়ায় পাড়ায় ঘুঙুর বেঁধে তৈরি হয়েছে।’’
ভোট ঘোষণার কার্যত দু’তিন পর থেকেই মমতা বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির পরাজয়ের একটি পরিসংখ্যান দিচ্ছেন। এ দিনও তা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে ২৩টা আসন বিজেপি পাবে না, আজই খবর নিয়েছি। ওখানে মায়াবতী, অখিলেশরা জিতবেন। পঞ্জাবে অমরিন্দর সিংহ জিতবেন। কেরলে সিপিএম-কংগ্রেস আধাআধি করে জিতবে। কর্নাটকে আগের বার বিজেপি-জোট প্রায় ১০০% পেয়েছিল। এ বার ৬০-৪০ হবে। বিহারেও তাই। অন্ধ্রপ্রদেশেও গোল্লা পাবে। তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে পারবে না জিততে।’’
উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ-মায়াবতী জোট বাঁধায় বিজেপি সেখানে এ বার অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। সেই মতকে সামনে রেখেই মমতাও বলছেন, ‘‘আগের বার বিজেপি উত্তরপ্রদেশে ৮০টা আসনের মধ্যে ৭০টা পেয়েছিল। এ বার আর তা হবে না।’’ অখিলেশের মতো বিরোধী নেতাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যে ভাল, তা উল্লেখ করে তিনি এ দিনও বলেছেন, ‘‘সকলের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব আছে। এখানে ৪২-এ ৪২ পেলে জনগণের সরকার আমরাই গড়ব।’’
সে জন্য বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মমতা গেরুয়া শক্তিকে দেশের ‘বিপদ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বিজেপি ৪৪০ ভোল্ট। ৪৪০ ভোল্টের পাশে লেখা থাকে ডেঞ্জার, দেখেছেন তো। এরাও তেমনই বিপদ। ওরা দেশের সংহতির জন্য ৪৪০ভোল্ট। কেন্দ্রের এই সরকার কোনও কাজ করে না। খালি দাঙ্গা করে। আর দেশের কোথাও জিতবে না বুঝেই বারবার বাংলায় আসছে। এসো না, বাংলায় রসগোল্লা পাবে তোমরা। ছিলে দুই, হবে গোল্লা।’’
বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার জন্য আগেই এ রাজ্যের সিপিএম ও কংগ্রেসের কাছে আবেদন করেছেন মমতা। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি একজোট হয়ে এ রাজ্যে তৃণমূলকে পরাস্ত করতে উদ্যত বলেও তিনি প্রায়শই অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের সুর চড়িয়ে এ দিন মমতা মন্তব্য করেন, ‘‘সিপিএম এ রাজ্যে বিজেপিকে এনেছে। এখন মোদীর দয়ায় বেঁচে আছে। তৃণমূল মোদীর দয়ায় বেঁচে থাকবে না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগের জবাবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র পাল্টা বলেন, ‘‘মোদীর দয়ায় ওঁর(মমতার) দলের নেতা-মন্ত্রীরা জেলে না গিয়ে পাঁচ বছর কাটিয়ে দিলেন। ভোটের সময়ে মোদী এসে সারদার কথা বলেন। বাকি সময়ে তৃণমূলকে সাহায্য করেন।’’ বিজেপি-তৃণমূলের এই আঁতাঁত এখন স্পষ্ট বলে সূর্যবাবুর মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy