Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

বন্দি হয়ে ‘বিদ্যাসাগর’ হাতবদল অন্য প্রার্থীর কাছে!

এ দিন নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক আগেই কৃষ্ণ পৌঁছে যান ৭০/২/১ সেলিমপুর রোডে, ভোটের জন্য বিজেপির তৈরি দলীয় অফিসে।

সেলিমপুরে বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ে ‘বন্দি’ বিদ্যাসাগরের সাজে কৃষ্ণ বৈরাগী। নিজস্ব চিত্র

সেলিমপুরে বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ে ‘বন্দি’ বিদ্যাসাগরের সাজে কৃষ্ণ বৈরাগী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০৪:৪১
Share: Save:

ভেবেছিলেন ভোটের বাজারে ‘মোদী’ সাজতে হতে পারে। কিনে রেখেছিলেন তার পোশাকও। ডাকও এল। তবে ‘মোদী’ নয়। বাগুইহাটির কৃষ্ণ বৈরাগী ডাক পেলেন ‘বিদ্যাসাগর’ সাজার জন্য। বিজেপির পক্ষ থেকেই সে ডাক এল।

তার পর? যিনি ডাকলেন, তিনি ‘শিল্পীসত্তা’ দেখানোর সুযোগ শেষ পর্যন্ত দেননি বলেই দাবি। কৃষ্ণ ‘বিদ্যাসাগর’ বেশে কয়েক ঘণ্টা ঘরবন্দি হয়ে থাকার পর হাতবদল হয়ে গেলেন অন্য প্রার্থীর কাছে!

বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বসুর প্রচারে প্রতীকী বিদ্যাসাগরকে হাজির করানো হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল আগের দিন রাতেই। বিদ্যাসাগরের সাজে কৃষ্ণ বৈরাগীর ছবি-সহ মেসেজ ঘুরতে থাকে সংবাদমাধ্যমের কাছে। জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ সেলিমপুরে কৃষ্ণ বৈরাগীকে পদ্মের মালা পরিয়ে সম্মান জানাবেন চন্দ্র।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এ দিন নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক আগেই কৃষ্ণ পৌঁছে যান ৭০/২/১ সেলিমপুর রোডে, ভোটের জন্য বিজেপির তৈরি দলীয় অফিসে। ‘বিদ্যাসাগর’কে দেখতে ভিড় জমায় সংবাদমাধ্যমও। কিন্তু ‘বিদ্যাসাগর’ কই? পদ্মের মালা এসেছে, ‘বিদ‌্যাসাগর’ নিজেও ‘রেডি’ বলে শোনা গিয়েছে। তবু দর্শন মিলল না। চন্দ্র বসু বললেন, তিনি নাকি এমন পরিকল্পনার কথা জানতেনই না!

দোতলার একটি ঘরে তখন প্রায় বন্দিদশা ‘বিদ্যাসাগর’-এর! কৃষ্ণর কথায়, ‘‘ওঁরা আমাকে একটি ঘরে আটকে রাখলেন। পরে টাকা দিলেন। কিন্তু নিজের শিল্পীসত্তা দেখাতে পারলাম না। এটাই আফশোস।’’

তা হলে সাজপোশাক কোনও কাজেই লাগল না? তা অবশ্য নয়। কৃষ্ণকে দুপুর পৌনে একটা নাগাদ সকলের চোখের আড়ালে বের করে তুলে দেওয়া হয় যাদবপুরের গাড়িতে! সেলিমপুরে না হোক, যাদবপুরে মালা পান ‘বিদ্যাসাগর’।

কী ভাবে সেটা সম্ভব হল? ‘বিদ্যাসাগর’ বসে রয়েছেন, এই খবর চলে গিয়েছিল যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরার কাছে। কৃষ্ণর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। সেলিমপুর থেকে যাদবপুর ৮বি-র মোড়, একটি মাইলফলকেরও কম দূরত্ব পেরিয়ে চলে আসেন ‘বিদ্যাসাগর’। তবে এখানে পদ্ম নয়, রজনীগন্ধার মালাতেই সম্মানিত হন তিনি। মালা দিয়ে অনুপম বলেন, ‘‘বাঙালির প্রথম হাতেখড়ি হয় বর্ণপরিচয় দিয়ে। একজন অধ্যাপক হিসেবে বিদ্যাসাগরের প্রতি আমার দুর্বলতা রয়েছে, থাকবে।’’

কিন্তু দক্ষিণ কলকাতার প্রার্থী আগাম ঘোষণা করেও শেষ পর্যন্ত ‘বিদ্যাসাগর’-কে মালা দিলেন না কেন? বিজেপির একাংশের দাবি, দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব থেকে নির্দেশ এসেছিল— দল আর বিদ্যাসাগর-বিতর্কে জড়াতে চায় না। বিজেপির দক্ষিণ কলকাতার ভোট প্রচারের দায়িত্বে থাকা নিতিন পটেলও দাবি করেন, প্রতীকী বিদ্যাসাগর হাজির করানোর কোনও পরিকল্পনাই দলের তরফে হয়নি। সাংবাদিকদের সামনে নিজের মিডিয়া ম্যানেজার অমিত রায়কে স্বয়ং চন্দ্র বসু বলেন, বিদ্যাসাগর-রূপী কৃষ্ণকে প্রচারে আনার বিষয়টা তিনি জানতেন না! পাশের ঘরেই যে কৃষ্ণবাবু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছেন তা-ও তাঁর অজানা!

তা হলে কৃষ্ণবাবুকে ডাকল কে? দলীয় কর্মীদের একাংশের দাবি, চন্দ্রবাবুর অনুমতি নিয়েই তাঁর মিডিয়া ম্যানেজার কৃষ্ণ বৈরাগীকে আসতে বলেছিলেন। পরে নেতৃত্বের নির্দেশ আসতে পরিকল্পনা বদল হয়।

কৃষ্ণ বৈরাগী পেশাদার শিল্পী। মেলায়, উৎসবে মনীষীর বেশ ধারণ করেই তাঁর পেট চলে। ডাক পান ভোট মরসুমেও। এই ভোটেই রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, নেতাজি সাজা হয়ে গিয়েছে। বললেন, ‘‘টাকার বদলে যে যা সাজে ডাকেন, সেই সাজেই হাজির হই। এ দিন ডাক পেয়েও তার পর যে কী হল!’’ তবে আক্ষেপ করার বেশি সময় নেই তাঁর হাতে! বিকেলেই ‘বিদ্যাসাগরের’ ডিউটি বাগুইহাটিতে! প্রার্থী? তৃণমূলের সৌগত রায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE