Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নির্যাতিতার পরিবার ফিরে দেখল দরজায় মোদীর ছবি

কৃষক বাবা অভিযোগ করেছিলেন, মেয়েকে গণধর্ষণ করে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল রেললাইনে। অভিযোগে তৃণমূল নেতাদেরও নাম ছিল। তবে কিছু দিন পরে অন্য একটি খুনের মামলায় ছাত্রীর বাবাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

পোস্টার: নির্যাতিতার পরিবারের বাড়িতে পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

পোস্টার: নির্যাতিতার পরিবারের বাড়িতে পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায় 
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫৭
Share: Save:

পরিপাটি করে নিকোনো উঠোন দেখে বোঝার উপায় নেই চার বছরে কারও পা পড়েনি। বেড়ার দরজা সরিয়ে ঢুকেই চোখে পড়ে বাঁশের বেড়ায় একটি লাল সাইকেল হেলান দিয়ে রাখা। সাইকেলের উপরে বিছানো রং উঠে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া একটা গামছা। গামছার মালিকের বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে, রাতের দিকে প্রায়ই বুকে ব্যথা হচ্ছে, ইদানীং সামনের দিয়ে একটু ঝুঁকেও পড়েছেন। অতিথিকে রাজবংশী প্রথা মেনে পান সুপুরি এগিয়ে দিয়ে বললেন, “সাইকেলটা আমার মেয়ের। দুপুরের রোদ পড়ছিল। তাই গামছাটা দিয়ে ঢেকে দিলাম।”

সেই মেয়ের কথা সারা রাজ্যই জেনে যায় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। অভিযোগ, পাম্পসেটের টাকা নিয়ে বিবাদ মেটাতে সে সময় সালিশি সভা হয়েছিল। সেখানে বাবাকে মারধরের প্রতিবাদ করে এই মেয়ে। তাকে তখন থুতু চাটার নির্দেশ দিলে সে হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে যায়। মাতব্বররা তাকে তাড়া করেছিল বলে অভিযোগ। পরদিন বাড়ির কিছু দূরে উদ্ধার হয়েছিল দশম শ্রেণির সেই ছাত্রী বিবস্ত্র ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ। কৃষক বাবা অভিযোগ করেছিলেন, মেয়েকে গণধর্ষণ করে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল রেললাইনে। অভিযোগে তৃণমূল নেতাদেরও নাম ছিল। তবে কিছু দিন পরে অন্য একটি খুনের মামলায় ছাত্রীর বাবাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কৃষক বলেন, “যে সাক্ষী দিলে মেয়ের খুনিরা শাস্তি পাবে, তাঁকে খুন করে উল্টো আমাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। তবু মামলা তুলিনি।” তবে মুখে নিজের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ির গোয়ালে গিয়ে উঠেছিলেন। চার বছর সেখানে কাটিয়ে বাংলা বছরের প্রথম দিন সোমবার ফিরে এলেন নিজের বাড়িতে। শুক্রবার মেজ মেয়ের বিয়ে দেবেন। ছাত্রীর বাবা বললেন, “এ বার বাড়িতেই থাকব। মারলে মরে যাব।”

উঠোনের ভিতরে ঘরের দেওয়ালে বিজেপির পোস্টার। ছাত্রীর বাবা বললেন, “জানি না কে লাগিয়েছে।” বাড়িতে তখন উপস্থিত বামপন্থী নেতা অলক দত্ত। তাঁকে দেখিয়ে ছাত্রীর বাবা বললেন, “মেয়ের বিচার চেয়ে লড়াইয়ে প্রথম থেকেই পাশে রয়েছেন অলকবাবুরা। তাঁদের সঙ্গেই থাকব। এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই।” ঘরে ঢোকার দরজার পাশেও লাগানো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি ছবিও। ছাত্রীর বাবার কথায়, কারা তাঁর ঘরের দরজায় মোদীর ছবি সেঁটেছে জানেন না। বিজেপি জানিয়েছে, তারা ওই পরিবারের পাশে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Poster BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE