—ফাইল চিত্র।
তিন বছরে এক এক করে ১৭ জন বিধায়ক দল ছেড়ে পা বাড়িয়েছেন তৃণমূলে। পঞ্চায়েত, পুরসভার মতো স্থানীয় প্রশাসনে পায়ের তলায় জমি হারিয়েছে সর্বত্র। সংগঠন ভাঙা, চোখে পড়ার মতো আন্দোলনও নেই। অথচ লোকসভা ভোটের আগে সব ধরনের জনমত সমীক্ষাই বাংলায় কংগ্রেসকে তিন থেকে চারটি আসন জয়ের আশা দেখাচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে, লোকসভা ভোটের মুখে কংগ্রেস কী করে নাইট রাইডার্সের আন্দ্রে রাসেলের মতো মারকাটারি ব্যাটিং করার জায়গায় চলে গেল! ব্রিগেড ময়দান উপচে পড়া ভিড় করে, সিঙ্গুর থেকে রাজভবন পর্যন্ত পদযাত্রায় চোখ টেনেও বামেদের কোনও আসন জয়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে না সমীক্ষা। সাংগঠনিক দুর্বলতা কবুল করেই ব্রিগেডের মতো বড় সমাবেশ আয়োজনের চেষ্টা করেনি কংগ্রেস। বামেদের চেয়ে ধারে-ভারে অনেক পিছিয়ে থেকেও আসন জয়ের সম্ভাবনায় বাংলায় কংগ্রেস তা হলে এগিয়ে গেল কী মন্ত্রে?
রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশের মতে, এই রহস্যের উত্তর আসলে এ রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্র এবং ভোটের পাটিগণিতে নিহিত। সোজা হিসেবে দেখলে, কংগ্রেসের ভোট সাকুল্যে চারটি জেলার ৭টি লোকসভা আসনে কেন্দ্রীভূত। তাই সার্বিক ভোটপ্রাপ্তির হারে রাজ্যে বামেদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থেকেও নির্দষ্ট কিছু এলাকায় তাদের পক্ষে আসন জেতা সম্ভব। আর বামেদের ভোট পাহাড় বাদে রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে। তাই ভোটের শতাংশে তারা অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারলেও (সমীক্ষার ইঙ্গিতও তেমনই) সেই ভোট একক ভাবে বামেদের কোনও আসন জয়ের পক্ষে যথেষ্ট না-ও হতে পারে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পাঁচ বছর আগের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ৯.৫৮% ভোট পেয়েও কংগ্রেস চারটি আসন জিতেছিল। অথচ বামেরা ২৯.৭১% ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিল দু’টি আসনে। ভোট আনতে তৃণমূল স্তরে সাংগঠনিক যন্ত্রের কাজ করে যে পুরসভা বা পঞ্চায়েত, গত পাঁচ বছরে তার প্রায় সবই হাতছাড়া হয়েছে কংগ্রেসের। মালদহের চাঁচলে একটি মাত্র পঞ্চায়েত সমিতি আছে শিবরাত্রির সলতের মতো! কিন্তু কংগ্রেস নেতাদের আশা, লোকসভা নির্বাচনে দেশে সরকার গড়ার লক্ষ্যেই সর্বভারতীয় দল হিসেবে তাঁরা ভোট পান, যা অন্যান্য নির্বাচনের প্রবণতার সঙ্গে মেলে না। উপরন্তু, এ বার নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের হাত থেকে ‘পরিত্রাণ’ পেতে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরের সংখ্যালঘু মানুষের সিংহভাগের সমর্থন তাদের দিকে আসবে বলে কংগ্রেসের আশা।
সুজাপুরের বিধায়ক এবং মালদহ উত্তর লোকসভা আসনে কংগ্রেস প্রার্থী ঈশা খান চৌধুরী যেমন বলছেন, ‘‘তৃণমূল তো মুখে মুখে বলেই আমাদের সাইনবোর্ড করে দিয়েছে! কিন্তু চাঁচলে রাহুল গাঁধীর সভা প্রমাণ করে দিয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে মানুষ আছেন।’’ রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সির মতেও, ‘‘বিজেপিকে হারিয়ে এটা কংগ্রেসের নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সরকার গড়ার ভোট। এই সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটেই মানুষ কংগ্রেসকে সমর্থন করবেন।’’
বিগত লোকসভার পরিসংখ্যান বলছে, রায়গঞ্জ, মালদহ উত্তর ও দক্ষিণ, জঙ্গিপুর, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ ও পুরুলিয়া— এই ৭ আসনেই কংগ্রেসের ভোট ছিল ২০ থেকে ৫০%। বাকি বহু আসনেই ১০%-এর নীচে। এ বারও দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ আসনে ফল নিয়ে কংগ্রেসের নেতারা কোনও বাজিই ধরছেন না! কিন্তু নির্দিষ্ট এলাকার (পরিভাষায় ‘পকেট’) পুঁজি থেকেই খাতা খোলা রাখার আশা করছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের কথায়, ‘‘আমরা ভোট শতাংশে কম হতে পারি কিন্তু লোকসভা আসন জিতব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy