ভোটের বলি: মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলায় নিহত কংগ্রেস কর্মী টিয়ারুল শেখ।
কংক্রিটের রাস্তাটা বাঁক নিয়ে স্কুলের সামনে এসেই থমকে গিয়েছে— বকুল গাছের তলায় জনা দশেক যুবকের থমথমে আড্ডা। ঘাম মুছতে মুছতেই কেউ বলছেন, ‘‘কুনোই মানে হয় না। একটা রোগাসোগা লোক, তাকে এ ভাবে কেউ কোপায়!’’
রাস্তাটা ডান দিকে খানিক গড়িয়ে গেলে সরকারপাড়া। টিয়ারুল শেখের টালি-ছায়া বাড়ির উঠোনে নিশ্চুপে ঘুরে বেড়াচ্ছে খান কয়েক মুরগি। ঘরের দরজা ঠেলে বেরিয়ে এসে টিয়ারুলের বড় ছেলে মহতাব শেখও সেই কথাটাই ফিরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘কোনও দরকার ছিল? নিরীহ সাতেপাঁচে না থাকা মানুষ, ছাপ্পা ভোটের প্রতিবাদ করল বলেই তাঁকে কোপাতে হবে!’’
রোদ্দুর মাড়িয়ে সরকার পাড়া দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে পুলিশ। সারা দুপুর জেগে থাকা গ্রাম কথা বলছে ফিসফিস করে। গ্রামের আটপৌরে মুদির দোকানের ঝাঁপ ফেলা।
স্কুলের দেওয়ালে শুকনো রক্তের দাগটা এখনও রয়ে গেছে। পাঁচিলে এখনও হেলান দেওয়া সজনের ডাল। খুনের যাবতীয় স্মৃতি আষ্টেপৃষ্টে লেপ্টে আছে বালিগ্রাম স্কুলের মাঠে।
জেলা প্রশাসনের বয়ানে অবশ্য তাদের ‘প্রাথমিক রিপোর্টের’ ছায়া মোছেনি। তাদের বয়ান— খুনটা নিছকই পারিবারিক বিবাদের জেরে এবং তা হয়েছে বুথের অনেক বাইরে।
মহতাব বলছেন, ‘‘পাড়া-পড়শি- পরিজন, খোঁজ নিয়ে দেখুন, কোনও পুরনো বিবাদই ছিল না। তা যদি থাকত, তা হলে গন্ডগোলের সূত্রপাত তো বাড়িতেই হত। তা না, বাবাকে ধরে পেটাতে থাকল বুথের মধ্যে।’’
মহতাবের সুরেই কংগ্রেসও দাবি করেছে— তৃণমূলের কামারুল শেখ ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের অশান্তির পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল। আর সে জন্যই স্কুল বাড়ির পিছনের ঝোপে সজনের ডাল, ভাঙা ইট জড়ো করে রেখেছিল তারা। টিয়ারুলকে যখন লালমহম্মদ আর তাহাজুল শেখ পেটাচ্ছিল তখনই ওই ঝোপের কাছ থেকেই কামারুল নিয়ে আসে দু’টো হাঁসুয়া, এমনই দাবি স্থানীয় কংগ্রেসের।
মহাতাব বলেন, ‘‘কমিশন নিজেরদের ব্যর্থতা ঢাকতে বলছে, বাবাকে তিনশো মিটার দূরে খুন করা হয়েছে। বলে চলেছে, পারিবারিক বিবাদের জেরে খুন। টিয়ারুলের স্ত্রী সাহানুর বেওয়া বলেন, ‘‘কোনও পারিবারিক সমস্যাই ছিল না। ও সবই বানানো কথা।’’
মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস প্রার্থী আবু হেনা এ দিনও বলেন, ‘‘একেবারেই রাজনৈতিক খুন। টিয়ারুল কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চাননি। বলেছিলেন, ‘না পুরনো দল ছাড়ব না’। আর তারই শাস্তি পেতে হল ওঁকে। ভাবা যায়!’’
ভাবা যে যায় না, তা সরকারপাড়ার আনাচকানাচে কান পাতলেই বোঝা যাচ্ছে। ক্ষোভটা শুধু যে কংগ্রেস মহলে এমন নয়, গ্রামের পড়শি তৃণমূল সমর্থকদেরও অনেককে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘কুনোই মানে হয় না!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy