Advertisement
১১ মে ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

সাংবিধানিক ক্ষমতাই প্রয়োগ করেছি, অভিযোগ দুর্ভাগ্যজনক, মমতাকে পাল্টা চিঠি কমিশনের

এক নির্দেশে রাতারাতি সিপি-এসপি বদলি নিয়ে শনিবার নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লেখেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরা। —ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরা। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:০০
Share: Save:

নির্বাচনের সময় চাইলেই কোনও অফিসারকে বদলি করা যেতে পারে। সেই সাংবিধানিক অধিকার তাদের রয়েছে।সিপি-এসপি বদলি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা চিঠির জবাবে জানিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। তাতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের ঘোষণা হওয়ার পর কমিশনকে রিপোর্ট করেন অফিসাররা। কমিশন চাইলে তাঁদের নতুন জায়গায় পোস্টিং দিতে পারে। আবার সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে অন্যত্র।

এক নির্দেশে রাতারাতি সিপি-এসপি বদলি নিয়ে শনিবার নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লেখেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন তিনি। তার জবাবে শনিবারই ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার চন্দ্রভূষণ কুমার পাল্টা চিঠি লেখেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে। তাতে বলা হয়, ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২৮-এ ধারায় স্পষ্ট বলা রয়েছে, রাজ্য সরকার যে অফিসারকে নির্বাচন সামলানোর দায়িত্ব দেবে, নির্বাচন কমিশনকে রিপোর্ট করতে হবে তাঁকে। নির্বাচন কমিশনের হয়ে আইন-শৃঙ্খলা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সামলাবেন তিনি।

১৯৯৪ সালে কেরল হাইকোর্টের নির্দেশ উদ্ধৃত করে কমিশন জানায়, সংবিধানের ৩২৪ (৬), ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১৩ সিসি এবং ১৯৫১ সালের ২৮-এ ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের হাতে বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। যার আওতায়, নির্বাচনী আচরণ বিধি চালু হয়ে যাওয়ার পর, কমিশন চাইলে কোনও অফিসারকে নতুন জায়গার দায়িত্বে বসাতে পারে। আবার চাইলে তাঁকে বদলিও করতে পারে অন্যত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা নির্বাচন কমিশনের চিঠি।

গতকাল নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে খামখেয়ালি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতদুষ্ট বলে উল্লেখ করেছিলেন মমতা। তা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। তাঁর কথায়, সংবিধানের ৩২৪ নম্বর অনুচ্ছেদে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোট করানোর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। তবে এই দায়িত্ব শুধু মাত্র নির্বাচন কমিশনের একার নয়। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির উপরেও সেই দায়িত্ব বর্তায়। পাল্টা একধাপ সুর চড়িয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এ ধরনের অভিযোগের উত্তর দিয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করা অত্যন্ত অসম্মানজনক বলে মনে করে কমিশন।

আরও পড়ুন: অনুজ-জ্ঞানবন্তদের বদলি নিয়ে কমিশনকে কড়া চিঠি মমতার, অভিযোগ পক্ষপাতিত্বের​

বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশেই বাংলার পুলিশ প্রশাসনিক ব্যবস্থায় রদবদল ঘটানো হয়েছে বলেও গতকাল অভিযোগ তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন জানায়, গত ৩১ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি, দু’দিন ধরে কলকাতায় রাজ্যের নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে দেখে নির্বাচন কমিশন। মুখ্যসচিব, ডিজি-সহ প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হয়। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ খতিয়ে দেখে মার্চের মাঝামাঝিও একবার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা হয়। আনা হয় বিশেষ পর্যবেক্ষকও। তবে শুধুমাত্র বাংলাই নয়, নির্বাচনের আগে ঝাড়খন্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরা, অরুণাচলপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানার মতো রাজ্যেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাই বেছে বেছে শুধু বাংলাকেই নিশানা করা হয়েছে, এমন নয়। ডেপুটি নির্বাচন কমিশনারের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই ওই চার অফিসারকে বদলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে, গত শুক্রবার রাতে কলকাতা এবং বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার-সহ চারজন আইপিএস অফিসারকে বদলির নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। তাঁদের জায়গায় আনা হয় নতুন অফিসারদের। অনুজ শর্মার জায়গায় কলকাতা পুলিশের নয়া কমিশনার হিসাবে নিযুক্ত করা হয় রাজেশ কুমারকে। আগে যিনি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এডিজি ছিলেন। অনুজ শর্মাকে নিয়োগ করা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়রাজ্য পুলিশের এ়়ডিজি (অপারেশনস) পদে। বিধাননগরের সিপি জ্ঞানবন্ত সিংহকে সরিয়ে সেই জায়গায় আনা হয় রাজ্য পুলিশের এডিজি (অপারেশনস) নটরাজন রমেশ বাবুকে। জ্ঞানবন্ত সিংহকে অর্থনৈতিক অপরাধ সংক্রান্ত শাখার অধিকর্তার নিয়োগ করা হয়। অর্থনৈতিক অপরাধ সংক্রান্ত শাখার অধিকর্তা পদ থেকে সরিয়ে এনে জয়ন্তকুমার বসুকে দেওয়া হয় এডি়জি এস্টাবলিশমেন্টের দায়িত্ব।

আরও পড়ুন: সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস দিলেন নতুন সিপি

ডায়মন্ড হারবারের এসপি এস সেলবামুরুগানের জায়গায় নিয়ে আসা হয় কলকাতা সশস্ত্র পুলিশের তৃতীয় ব্যাটেলিয়নের ডিসি শ্রীহরি পাণ্ডেকে। এস সেলবামুরুগানকে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর ৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসার পদেবসানো হয়। বিধাননগরের ডিসি (এয়ারপোর্ট ডিভিশন) আভারু রবীন্দ্রনাথকে আনা হয় বীরভূমের এসপি শ্যাম সিংহের জায়গায়। শ্যাম সিংহকে দেওয়া হয় রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর ১৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসার পদটি। কমিশনের নির্দেশ মতোই রাতারাতি বদলি কার্যকর হয়। তার জন্য চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে ধন্যবাদও জানান চন্দ্রভূষণ কুমার।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(খবরটি প্রথম প্রকাশিত হওয়ার সময় ভুলবশত ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার চন্দ্রভূষণ কুমারকে এ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE