Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মাঝে একদিন, জোড়া ফলে টেনশন দাদু-নাতির

লোকসভার ভোট প্রচারে ছুটে বেড়িয়েছেন কাঁথি, রামনগর, খেজুরি, পটাশপুর সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।

খোশমেজাজে: নাতনির সঙ্গে শিশির অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।

খোশমেজাজে: নাতনির সঙ্গে শিশির অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ০০:২৯
Share: Save:

ফল জানা যাবে আগামী ২৩ মে। তার দুদিন আগেই আবার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল। তাই খুবই টেনশনে অধিকারী বাড়ির দাদু ও নাতি। ফল নিয়ে চলছে দাদু-নাতির খুনসুটি। একজন জেলায় তৃণমূলের পুরনো সৈনিক কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শিশির অধিকারী। অন্যজন অধিকারী পরিবারের বড় ছেলে কৃষেন্দুর ছেলে এ বারার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দেবজিৎ অধিকারী।

লোকসভার ভোট প্রচারে ছুটে বেড়িয়েছেন কাঁথি, রামনগর, খেজুরি, পটাশপুর সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। রবিবার ভোটপর্ব মিটেছে। ভোট ঘোষণার দিন থেকে দীর্ঘ প্রায় দু’মাস লড়াইয়ের পর আশি ছুঁইছুঁই শিশিরবাবু কার্যত এদিন নাতির ‘পরীক্ষা’র মুতে পড়েন। সোমবার সকাল থেকে বাড়িতে ছিলেন শিশিরবাবু । সঙ্গী ছিল নাতি দেবজিৎ ও নাতনি ছোট্ট তিয়ান (দিব্যেন্দু অধিকারীর মেয়ে)। পরীক্ষার ফলে কে কাকে টেক্কা দিতে পারেন তা নিয়ে দাদু-নাতির খুনসুটিও হয়েছে। বাড়িতে খোশ মেজাজে থাকা শিশিরবাবু বলেন, ‘‘ভোট খুব ভাল হয়েছে। জয় নিশ্চিত । গতবারের চেয়েও বেশি ব্যবধান হবে।’’ এরপরেই হেসে শিশিরবাবুর সংযোজন, ‘‘আমার ফল বেরোনের আগে অবশ্য নাতির মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বের হবে। নাতির চ্যালেঞ্জ, সে ভাল ফল করবে। দেখা যাক কার ফল ভাল হয়।’’

দাদু-নাতির পাশাপাশি অধিকারী বাড়ির আরেক সদস্য তথা তমলুক লোকসভার প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী অবশ্য এ দিন ঘুম থেকে কিছুটা দেরিতে ওঠেন। তবে রুটিন বদলায়নি। সকালে প্রাতঃরাশ সেরে পৌঁছে যান কাঁথি পুরসভার অফিসে। কাউন্সিলর হিসেবে কাজকর্ম সেরে বাড়ি ফিরে দুপুরের খাওয়া সেরে বিশ্রাম। দিব্যেন্দু বলেন, ‘‘ভোটের লড়াই শেষ হলেও কাউন্সিলর হিসেবে অন্যদিনের মতো কাজ করেছি। তবে জয় নিয়ে আমার চিন্তা নেই।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

দিব্যেন্দুর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী সিদ্ধার্থ নস্কর এদিন সারাদিন ব্যস্ত ছিলেন ভোটের দিন তৃণমূলের ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কাছে নালিশ জানাতে। এদিন ঘুম থেকে উঠে প্রাতঃরাশ সেরে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র হাইস্কুলের ভোটগণনা কেন্দ্রে যান। প্রশাসনের ডাকা স্ক্রুটিনি বৈঠকে যোগ দেন। সেখানেই নালিশ জানান রবিবার ভোটে অনিয়ম নিয়ে। সিদ্ধার্থর কথায়, ‘‘ভোট মিটলেও বিশ্রামের অবকাশ নেই। হলদিয়া ও নন্দীগ্রামের বহু বুথে রাজ্য পুলিশের পাহারায় তৃণমূল ছাপ্পা ভোট দিয়েছে। তাই হলদিয়া, নন্দীগ্রামে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি কমিশনের কাছে।’’

তমলুক লোকসভার বামপ্রার্থী ইব্রাহিম আলিও এদিন ব্যস্ত ছিলেন রবিবার ভোটগ্রহণে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে। ছিলেন কোলাঘাটের গণনা কেন্দ্রে স্ক্রুটিনি বৈঠকে। ইব্রাহিম বলেন, ‘‘ভোটের আগে নির্বাচন কমিশন কত প্রতিশ্রুতি দিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত হলদিয়া, নন্দীগ্রামের বহু মানুষ তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতেই পারল না। তাই কমিশনের কাছে নালিশ জানালাম।’’

তমলুকের কংগ্রেস প্রার্থী সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের সময় কাটছে নিজের হাতে গড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। হলদিয়া ও নন্দীগ্রামে ভোটগ্রহণে অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেন নির্বাচন কমিশনে। লক্ষ্মণবাবুর অভিযোগ, ‘‘হলদিয়া ও নন্দীগ্রামের বহু বুথে রাজ্য পুলিশ দিয়ে তৃণমূলকে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। কমিশনের কাছে হলদিয়া ও নন্দীগ্রামে পুর্নর্নিবাচনের দাবি জানিয়েছি।’’.

কাঁথির বিজেপি প্রার্থী দেবাশীষ সামন্ত সারাদিনই বিভিন্ন এলাকার থানায় গিয়ে ভোট পরবর্তী হিংসা থেকে দলের কর্মীদের সুরক্ষার দাবি জানিয়েছেন। আর বামপ্রার্থী পরিতোষ পট্টানায়েক এ দিন সকাল থেকে ভোট গণনার জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করে দেন। দলের কাউন্টিং এজেন্ট কারা হবেন, তাঁদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া থেকে গণনা সংক্রান্ত যাবতীয় নথি স্ক্রুটিনিতেই দিনভর ব্যস্ত ছিলেন তিনি।

ভোট মিটলেো বিশ্রামে নারাজ কাঁথির কংগ্রেস প্রার্থী দীপক দাশ। সারাদিন ধরে ব্যস্ত থাকলেন কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। জানালেন, ‘‘বুথস্তরে সব কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছি। ভোটের দিন কারও কোনও অসুবিধা হয়েছিল কিনা খোঁজ নিচ্ছি।’’

দিনভর প্রায় কমবেশি কাজে থাকলেও সকলেই অপেক্ষায় ২৩ মে’র জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE