চার মূর্তি, কৃষ্ণনগর।
বীজ পুঁতেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোক্ষম সময়ে তার ফলও পাচ্ছে তাঁর দল তৃণমূল।
গ্রামীণ চিকিৎসক, যাঁরা বাম আমলে মূলত ‘হাতুড়ে চিকিৎসক’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তৃণমূল ক্ষমতায় এসে নির্দেশিকা জারি করে তাঁদের সরকারি প্রশিক্ষণ-কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করে। মেলে ‘গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবক’-এর সম্মানজনক পরিচয়।
সেই গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবকদের একটি বড় অংশ এ বার তৃণমূলকেই ভোট দেবেন বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি পাঠিয়েছেন ৬ এপ্রিল। গ্রামীণ চিকিৎসকদের বৃহৎ সংগঠন প্রোগ্রেসিভ রুরাল ফিজিশিয়ান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে: বর্ধমান, হুগলি, কোচবিহার, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো জেলায় নিয়মিত সভা-সমাবেশ করে তারা সব গ্রামীণ চিকিৎসককে তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিতে বলছে। তৃণমূল সরকারের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজের ফিরিস্তি দিয়ে মা-মাটি-মানুষের সরকারের পক্ষ ভোট দিতে ‘অনুপ্রাণিত’ করা হচ্ছে ওই সব চিকিৎসকের রোগীদেরও।
রাজ্যে কমবেশি আড়াই লক্ষ গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবক, তাঁদের বাড়ির লোক ও রোগী মিলিয়ে ভোটারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। গ্রামে ওই সব চিকিৎসকের যথেষ্ট প্রভাব এবং তাঁদের মতামতের মূল্য রয়েছে।
পত্রপ্রেরক সংগঠনের প্রথম সারির নেতা দিলীপকুমার পান অবশ্য বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণ শিবিরে আমাদের মৌখিক ভাবে বলা হচ্ছে যে, আমরা মুমূর্ষু রোগীকে স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন দিতে পারব না, সদ্য প্রসূতির নাড়ি কাটতে পারব না, স্টিচ করতে পারব না, অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারব না। তা হলে আমরা কী চিকিৎসা করব?’’ তাঁর প্রশ্ন, গ্রামীণ চিকিৎসকদের তা হলে উন্নতিটা হল কোথায়? লোকে যাবে কেন তাঁদের কাছে? কী করে সংসার চলবে ওই চিকিৎসকদের? গভীর রাতে সদ্য প্রসূতির নাড়ি কেটে বাঁচিয়ে গ্রামীণ চিকিৎসককে শো-কজের মুখে পড়তে হচ্ছে, ভর্ৎসনা শুনতে হচ্ছে। দূরদূরান্তের গ্রামে প্রশিক্ষিত ডাক্তারও নেই। তাই মানুষও এই ব্যবস্থায় অসন্তুষ্ট বলে দিলীপবাবুর অভিযোগ।
আবার ওই সংগঠনেরই সভাপতি মনোজ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, আগের সরকারের আমলে গ্রামীণ চিকিৎসকদের অবস্থা অপরাধীদের মতো ছিল। পুলিশ যখন-তখন হেনস্থা করত। ওঁরা চোরের মতো থাকতেন। এখন ওঁদের একটা সম্মান হয়েছে। সরকার মেনে নিয়েছে। ‘‘তবে ওঁরা যদি ভেবে থাকেন যে, প্রশিক্ষণ পেয়ে ডাক্তারদের মতো প্র্যাক্টিস করবেন, সেটা অন্যায়। এটাই ওঁদের বোঝানো হচ্ছে। ওঁরা প্রাথমিক শুশ্রূষা করে রোগীকে উপযুক্ত জায়গায় রেফার করতে পারবেন,’’ বলেন মনোজবাবু।
এই ‘পারা’ বা ‘না-পারা’র হিসেবকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ চিকিৎসক শিবিরে আড়াআড়ি ফাটল দেখা দিয়েছে। ভোটের বাজারে সেই ফাটলের ফসল তুলতে মরিয়া বিজেপি। গ্রামীণ চিকিৎসকদের একাংশ দাবি করেছেন, বিজেপিকে ভোট দিলে তাঁদের বৈধ ভাবে প্র্যাক্টিসের ব্যবস্থা করার ‘টোপ’ দেওয়া হচ্ছে একাধিক জেলায়। বিজেপির চিকিৎসা সেলের আহ্বায়ক বিবেক মজুমদার যেমন বলছেন, ‘‘তৃণমূল গ্রামীণ পরিষেবকদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বোকা বানাচ্ছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে ওঁরা যাতে অন্তত নিজেদের চেম্বার খুলে স্যালাইন দেওয়া, কিছু ওষুধ দেওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসা, অতি জরুরি মুহূর্তে সদ্য প্রসূতির নাড়ি কাটা, সেলাই ও ড্রেসিংয়ের মতো কাজ করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। ওঁরাই গ্রামীণ চিকিৎসার মেরুদণ্ড। ওঁদের প্রকৃত কদর আমরাই করতে জানি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy