Advertisement
১১ মে ২০২৪

অশান্তি তৃতীয় পর্বেও, বুথ দখলের চেষ্টা মুর্শিদাবাদে, শূন্যে গুলি বিএসএফের

আগের দু’দফার মতো তৃতীয় দফার ভোটও অবশ্য ‘ভাল ও শান্তিপূর্ণ’ হয়েছে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। কংগ্রেস, সিপিএম গণ্ডগোল নিয়ে অভিযোগ করলেও বিজেপি মনে করছে, যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল, সেখানে গোলমাল হয়নি।

গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আহতদের চিকিৎসা চলছে।

গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আহতদের চিকিৎসা চলছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩১
Share: Save:

বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ উঠল বাংলায় তৃতীয় দফার লোকসভা ভোটেও। অভিযোগের বেশির ভাগই এসেছে মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলা থেকে। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলায় মৃত্যু হয়েছে টিয়ারুল শেখ (৬৫) নামে এক জনের। তিনি কংগ্রেস কর্মী হিসেবেই পরিচিত। আগের দু’দফার মতো তৃতীয় দফার ভোটও অবশ্য ‘ভাল ও শান্তিপূর্ণ’ হয়েছে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। কংগ্রেস, সিপিএম গণ্ডগোল নিয়ে অভিযোগ করলেও বিজেপি মনে করছে, যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল, সেখানে গোলমাল হয়নি।

শাসক দলের বাহিনার হাতে টিয়ারুলের খুনের অভিযোগ নিয়ে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাবের দফতরের বাইরে মঙ্গলবার বিকালে ধর্না-বিক্ষোভে বসেছিলেন কংগ্রেস কর্মীরা। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করেছেন, মৃত্যু হয়েছে পারিবারিক বিবাদে। ওই ঘটনার সঙ্গে ভোটের যোগ আছে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেলনি সিইও। তবে তাঁর পাশে বসেই রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত বলেছেন, বুথের তিনশো মিটার দূরে ঘটনা ঘটেছে। সব দিক খোলা রেখেই তদন্ত শুরু হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ভগবানগোলার বালিগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ এবং কংগ্রেস-সিপিএমের প্রতিবাদ থেকেই গোলমালের সূত্রপাত। সেক্টর অফিসার ঘটনাস্থলে এলে কিছু সময়ের জন্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়। কিন্তু পরে ফের একই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই ঘটনার জেরেই টিয়ারুলকে প্রথমে সজনে গাছের ডাল এবং পরে হেঁসো দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপ মারা হয়। দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তিতে তৃণমূলেরও তিন জন জখম হন। নশিপুর গ্রামীণ হাসপাতাল ঘুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যান টিয়ারুল। ওই ঘটনায় রানিতলা থানায় ৬ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভগবানগোলায় খুন এবং মালদহে গোলমালের ঘটনা উল্লেখ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের অভিযোগ, ‘‘বারবার কমিশনকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে নিরাপদ ও সুষ্ঠু ভোটের বন্দোবস্ত করার আর্জি জানানো সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে, সবই অরণ্যে রোদন! এই ভাবে গণতন্ত্র চলতে পারে কি না, বাংলার মানুষকেই ঠিক করতে হবে।’’ তৃণমূলের তরফে ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলেন, ‘‘আমি যত দূর খবর পেয়েছি, এটা পুরনো পারিবারিক বিবাদ। উভয় পক্ষের লোকই আহত হয়েছে। এর মধ্যে তৃণমূল, কংগ্রেস— যা দেখানো হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়। ভোটের দিন একটা উত্তেজনা থাকে, উত্তপ্ত হয়ে থাকে। পুরনো গ্রামীণ বিবাদ টেনে নিয়ে আসে লোকে ভোটের গরমের মধ্যে।’’

কিন্তু ভগবানগোলার ঘটনার পর কি বলা যায়, কমিশন ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ? জবাবে সিইও জানান, বিষয়টি বুথের অনেকটাই বাইরে হয়েছে। বালুরঘাটে মৃত ভোটকর্মী বাবুলাল মুর্মুর দেহের ময়না তদন্ত হবে আজ, বুধবার। তার পরে বিষয়টি স্পষ্ট হবে, তেমনই মত সিইও দফতরের।

মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে কিছু গোলমালের অভিযোগ এসেছে। চাঁচলের ধুমসাডাঙিতে স্থানীয় বাসিন্দারাই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ভোটকেন্দ্র থেকে এক কিলোমিটার দূরে মঙ্গলবার ভোরে তিনটি বোমা ফাটানো হয়। তার পরেও বুথে যাওয়ার সময় বাসিন্দারা দেখেন, একটি আমবাগানে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে রাস্তা আটকে রয়েছে এক দল দুষ্কৃতী। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা এর পরে জোট বেঁধে লাঠিসোটা হাতে দুষ্কৃতীদের তাড়া করেন। চাঁচলের এসডিপিও সজলকান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘‘বুথের বাইরে কিছু সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। তবে মানুষ সেখানে নির্বিঘ্নে, শান্তিতেই ভোট দিয়েছেন।’’ হরিশ্চন্দ্রপুরে বাইক বাহিনী ইভিএম ভেঙে গণ্ডগোল করেছে বলে দাবি। পুলিশ জানিয়েছে, সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বালুরঘাট কেন্দ্রের কুমারগঞ্জে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে বুথের সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে কমিশন। মাহমুদা দাবি করেছেন, ‘‘পুলিশকে হুমকি দেওয়া হয়নি। মিথ্যা অভিযোগ তুলে ভোট বানচালের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE