শ্রীকান্ত মাহাতোর স্ত্রী অঞ্জনা মাহাতো। নিজস্ব চিত্র
কয়েক মাস আগের কথা। শ্রীকান্ত মাহাতোকে ধমকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘তুই শালবনির বিধায়কও থাকবি, আবার ঝাড়খণ্ডের সাংসদও হবি, কী ভাবে হবে?’’
শ্রীকান্ত পারেননি। তবে সাংসদ হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, সেই ঝাড়খণ্ড থেকেই।
প্রার্থী হতে চেয়ে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলেন শ্রীকান্তর স্ত্রী অঞ্জনা মাহাতো। সায় দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর নির্দেশেই ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর লোকসভা কেন্দ্রে অঞ্জনা এ বার তৃণমূলের প্রার্থী। বিধায়ক ঘরণী ঝাড়খণ্ডের এই কেন্দ্রেই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কেন, তৃণমূলনেত্রীকে দেওয়া চিঠিতে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন অঞ্জনা।
কী সেই কারণ?
মমতাকে লেখা চিঠিতে অঞ্জনা জানিয়েছিলেন, ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূমে আদিবাসীদের ‘জমি রক্ষার’ আন্দোলনে তিনি ছিলেন। আদিবাসী নেতৃত্বের সঙ্গে নবান্নেও গিয়েছিলেন। অঞ্জনার কথায়, ‘‘সেই সময়ে দিদি আমাকে আশীর্বাদ করেছিলেন। কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন।’’ শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক কর্মসূচিতেও শামিল হয়েছেন তিনি। ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেডে ঝাড়খণ্ডের কর্মীদের নিয়ে এসেছিলেন। চিঠিতে অঞ্জনার দাবি ছিল, ‘পূর্ব সিংভূম জেলার মানুষ, বিশেষত মহিলারা আমাকে জামশেদপুর লোকসভার প্রার্থী হিসেবে চান। তাঁরা প্রতিনিয়ত ফোনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।’ এ-ও লিখেছিলেন, ‘নিরুপায় হয়ে আপনার (মমতার) শরণাপন্ন হলাম। তাঁদের ইচ্ছার কথা আপনাকে জানালাম।’ ইচ্ছেপূরণ হওয়ায় অঞ্জনা
খুশি। বলছেন, ‘‘দলনেত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’
শ্রীকান্তকে মাঝেমধ্যেই ধমক দেন মমতা। গত বছর জুনেও শালবনির বিধায়ককে নেত্রীর ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছিল। তৃণমূলের এক সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটের পরে কলকাতায় তৃণমূলের প্রথম পর্যালোচনা বৈঠকে নেত্রীর ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিলেন অনেকে। বাদ যাননি শ্রীকান্ত। কারণ, পঞ্চায়েতে শালবনিতে তৃণমূলের ফল তুলনায় খারাপ হয়েছিল। মমতার কাছে খবর ছিল, শ্রীকান্ত সাংসদ হওয়ার জন্য উৎসুক। নিজের এলাকায় নজর না দিয়ে তিনি সেই প্রার্থীপদের তদ্বির শুরু করেছেন।
শ্রীকান্তর উদ্দেশে মমতাকে সে দিন বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘তোর ব্লকে কী ভাবে খারাপ হল? তুই শালবনির বিধায়কও থাকবি আবার ঝাড়খণ্ডের সাংসদও হবি, কী ভাবে হবে? আগে নিজের ব্লকটা সামলা।’’ বছর ঘুরতে সাংসদ হওয়ার দৌড়ে শ্রীকান্তর স্ত্রী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই ঝাড়খণ্ড থেকেই। মমতার মুখে সে দিন যে রাজ্যের নাম শোনা গিয়েছিল।
অঞ্জনা বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্যাও। অঞ্জনা জানাচ্ছেন, তিনি মাহাতো (কুড়মি) সম্প্রদায়ের মেয়ে। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা করে বড় হয়েছেন। দরিদ্র, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষকে অনেক কাছ থেকে দেখেছেন। মমতাকে দেওয়া চিঠিতেও অঞ্জনা লিখেছিলেন, ‘ভোট আসে, ভোট যায়। ঝাড়খণ্ডের মানুষের জীবনযাত্রার কোনও পরিবর্তন হয় না। আমাকে যদি আপনি আশীর্বাদ করেন তাহলে জামশেদপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীকে পরাজিত করে জামশেদপুর আসনটি আপনার শ্রীচরণে অর্পণ করতে পারব।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আবেদনে সাড়া মিলেছে। প্রার্থী হয়েই প্রচারের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন অঞ্জনা। কাল, শনিবার থেকে তিনি প্রচারে ঝাঁপাচ্ছেন। অঞ্জনা বলছিলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডে হাতিখেদা মন্দির খুব জাগ্রত। ওই মন্দিরে পুজো দিয়েই আমি প্রচার শুরু করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy