সিবিআই কাণ্ডের পরিপ্রক্ষিতে বৃহস্পতিবার মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফবি পিটিআই
বিজেপি দেশ ও দশের বোঝা। ওরা যত দ্রুত সরে যায়, ততই মঙ্গল। সিবিআই কাণ্ডের পরিপ্রক্ষিতে বৃহস্পতিবার এই ভাবেই মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সিবিআইয়ের দুই শীর্ষকর্তার দ্বৈরথের পরিপ্রেক্ষিতে দু’জনকেই সরিয়ে দেওয়া এবং অন্য অফিসারকে ওই সংস্থার মাথায় বসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে বুধবার মমতা সিবিআইকে ‘বিবিআই’ (বিজেপি ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন) বলে টুইট করেছিলেন। বৃহস্পতিবার আরও একধাপ এগিয়ে তিনি বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতার অভিযোগ আনেন।
বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের একমঞ্চে আনতে ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মমতা। বিরোধী নেতাদের পাশে নিয়ে সেখান থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে লোকসভা নির্বাচনের ঢাক বাজাতে চান তিনি। তার আগে বিজেপি-বিরোধী উষ্মা বাড়াচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর এ দিনের বক্তব্য তারই প্রকাশ।
অন্যদিকে, সিবিআই-এর অভ্যন্তরীণ দ্বৈরথ এবং দুর্নীতি সামনে চলে আসার পরে অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে ২৯ ও ৩০ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে ‘সরকারি প্রশাসনযন্ত্রের পতন’ শীর্ষক একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। সংশ্লিষ্ট মু্খ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ শিশোদিয়া। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত খবর, মমতা সেখানে থাকবেন না। তৃণমূল নেত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা যায়, ওই সম্মেলনের ব্যাপারে তাঁর কাছে নির্দিষ্ট কোনও খবর ছিল না। তা ছাড়া, রাজ্যে উৎসবের মরসুম চলছে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বাইরে যেতে চান না।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, দিল্লির সম্মেলনটির মূল উদ্যোক্তা তেলুগু দেশম নেতা ও অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু। ২০১৯-এর নির্বাচনের আগে বিজেপি সরকারকে কোণঠাসা করার লক্ষ্যে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে রাহুলের সমঝোতাও হয়ে গিয়েছে বলে খবর। এক্ষেত্রে তাই অরবিন্দ কেজরীবালকে সামনে রেখে গোটা সম্মেলনটিই সাজাচ্ছেন চন্দ্রবাবু। জানা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও কেরল, পঞ্জাব, পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। অন্ধ্র তো আছেই।
অ-বিজেপি দলগুলির এই ধরনের ঐক্য তৈরির ক্ষেত্রে সাম্প্রতিককালে সংসদের ভিতরে ও বাইরে দৃশ্যত নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নোট বাতিলের পর তাঁর নির্দেশেই প্রথম দিল্লিতে পথে নামে তৃণমূল, সঙ্গে কতিপয় বিরোধী দল। এ বার তাঁকে কার্যত সরিয়ে রেখেই যা করার করছেন অরবিন্দ-চন্দ্রবাবু জুটি। যদিও মমতা যাতে এই উদ্যোগে সামিল হন, সেই জন্য শেষমুহূর্ত পর্যন্ত তাঁকে হাজির করানোর চেষ্টা চলছে। কেজরীবাল মমতাকে ফোন করে অনুরোধ জানাবেন বলে সূত্রের খবর। কিন্তু এখন পর্যন্ত মমতার তরফে তেমন কোনও সম্ভাবনার কথা জানা যাচ্ছে না। বরং ২৯ অক্টোবর তাঁর উত্তরবঙ্গ সফরের কর্মসূচি এখনও বহাল।
তবে বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর জেহাদ যে পুরোমাত্রায়, দিল্লির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার মমতা তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এ দিন কলকাতায় তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি দুর্নীতি করতে সিদ্ধহস্ত। অফিসারদের ভয় দেখিয়ে তাঁদের দিয়ে অন্যায় কাজ করিয়ে নিতে পারে। নোটবন্দির নামে নিজের তহবিলে টাকা তুলতে পারে। বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্থাকে প্রতিহিংসামূলক কাজে লাগাতে পারে। কিন্তু দেশ চালানোর যোগ্যতা বা ক্ষমতা কোনওটাই ওদের নেই।’’
সরাসরি মোদী এবং অমিত শাহের নাম না করলেও পরিস্থিতির দায় তাঁদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন মমতা। কেন বিজেপির সরকার চালানোর যোগ্যতা নেই, সেই প্রশ্নে মমতার ব্যাখ্যা, ‘‘সরকার বলেই তো কিছু নেই। সব চালাচ্ছেন দু’জন। একজন সাউথ ব্লকে বসেন, অন্য জন বিজেপির দফতরে। তিনি আবার সুপার গভর্নমেন্ট। দলীয় দফতর থেকে নির্দেশ যায়। সেই অনুযায়ী অফিসাররা ক্ষমতায় বসেন বা সরে যান। সেই খেলা এ বার শেষের পথে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, এই রাজ্যে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সিবিআই, ইডি-র মতো সংস্থাদের কাজে লাগানো হচ্ছে তাই নয়, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে মোদী সরকারের সমালোচনা কেন করা হচ্ছে, সে জন্য তৃণমূল আইটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের হুমকি দিয়ে ফোন পর্যন্ত করা হয়েছে। মমতার মন্তব্য, ‘‘একের পর এক ঘটনায় এখন প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে যে, দেশে এত বড় দুর্নীতিগ্রস্ত, অপদার্থ এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকার এর আগে কোনও দিন আসেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy