Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কেন্দ্রের সঙ্গে আর নয়, একক কৃষি বিমা রাজ্যে

লোকসভার ভোট আগামী বছর। তার আগেই অন্তত কৃষি বিমার ক্ষেত্রে মোদী-সঙ্গ ছাড়তে চলেছে রাজ্য!

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২৪
Share: Save:

লোকসভার ভোট আগামী বছর। তার আগেই অন্তত কৃষি বিমার ক্ষেত্রে মোদী-সঙ্গ ছাড়তে চলেছে রাজ্য!

২০১৪ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যৌথ ভাবে কৃষকদের শস্য বিমা প্রকল্প চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। ওই প্রকল্পে বিমা বাবদ ২৫ শতাংশ প্রিমিয়াম দেয় কেন্দ্র আর রাজ্য সরকার দেয় বাকি ৭৫ শতাংশ। রাজ্য সরকার প্রিমিয়ামের ভার বহন করায় কৃষকেরা নিখরচায় বিমার সুবিধা পান। কিন্তু পাঁচ বছরের সেই যৌথ কৃষি বিমার পালা সাঙ্গ হতে চলেছে। এ বার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অংশীদারি ছেড়ে ১০০ শতাংশ প্রিমিয়াম দিয়েই কৃষকদের জন্য সম্পূর্ণ নিজস্ব বিমা প্রকল্প শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারই কৃষকদের বিমার পুরো সুবিধা দেবে। এই প্রশ্নে কেন্দ্রের সঙ্গে থাকার প্রয়োজন আর নেই। ইতিমধ্যেই সেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।’’

কেন এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের?

কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই ব্যাপারে কিছু অভিযোগের কথা বলছেন প্রশাসনিক কর্তারা। তাঁদের অভিযোগ প্রধানত দু’টি। প্রথমত, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসল নষ্ট হলেও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা কবে কত ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন, রাজ্য সরকার তা জানতে পারে না। দ্বিতীয়ত, নাম নথিভুক্তিতে প্রযুক্তিগত জটিলতায় বহু কৃষক বিমা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কার্যত অসহায় রাজ্য সেই কৃষকদের সঙ্গে সহযোগিতাও করতে পারছে না।

কেন্দ্রের ‘কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার’-এর মাধ্যমে বোরো মরসুমের জন্য বিমা প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করার সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। খরিফ মরসুমে নাম নথিভুক্ত করার শেষ দিন ছিল ৩১ জুলাই। প্রযুক্তিগত খামতির কারণে নাম নথিভুক্তির প্রক্রিয়া ২৬ জুলাই পর্যন্ত চলছিল ঢিমেতালে। ফলে রাজ্যের বেশির ভাগ কৃষক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পে নাম তুলতে পারেননি। তাই সময়সীমা অগস্ট পর্যন্ত বাড়াতে কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছিল রাজ্য। তাতে কেন্দ্র কর্ণপাত করেনি বলে রাজ্যের অভিযোগ। ফলে যে-সব কৃষক ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উৎকণ্ঠা।

প্রশাসনিক ব্যাখ্যা, ২০১৪ সাল থেকে পরবর্তী দু’-তিন বছর ধরে প্রিমিয়াম বাবদ আনুমানিক ১২০০ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য। এর বাইরে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক কৃষককে হেক্টর-পিছু সাড়ে ১৩ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৫ সাল থেকে এ-পর্যন্ত ৪২ লক্ষ পরিবারকে সেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। তার পরেও ২০১৫-’১৬ এবং ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত সব কৃষক ক্ষতিপূরণ বাবদ কেন্দ্রীয় বিমার অর্থ পাননি। সেই জন্য কেন্দ্রীয় বিমা প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে।

রাজ্য সরকারের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, প্রবল অনটনের মধ্যেও বিপুল অর্থ খরচ করা হচ্ছে এই সব খাতে। কিন্তু তার কার্যকারিতা নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। আবেদন গ্রহণ থেকে শুরু করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া পর্যন্ত অভাবনীয় গড়িমসি করে কেন্দ্রের অধীন বিমা সংস্থাগুলি। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না রাজ্য। ‘‘নিজেদের প্রকল্প হলে বিমা সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তাই কেন্দ্র-নির্ভরতার প্রয়োজন আর নেই,’’ বলেন ওই কর্তা।

এই বিষয়ে বিমা সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। সব পরিকল্পনামাফিক চললে লোকসভা নির্বাচনের আগেই রাজ্যের কৃষকদের জন্য নতুন শস্য বিমা ঘোষণা করতে পারে রাজ্য সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Insurance Farmer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE