Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আদিবাসীদের মনের খোঁজ নিন, নিদান মুখ্যমন্ত্রীর

পঞ্চায়েত ভোটে এই জেলায় বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু এলাকায় তৃণমূলের ফল খারাপ হলেও তৃণমূলকে বেশি ‘ধাক্কা’ দিয়েছে বলরামপুর। এখানে সাতটি পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি, এমনকী জেলা পরিষদের দু’টি আসনও বিজেপির কাছে হারতে হয়েছে তৃণমূলকে। পরাজিত হয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি থাকা সৃষ্টিধর মাহাতোও। 

সভার মঞ্চে শান্তিরাম মাহাতোর সঙ্গে মমতা। ছবি: সুজিত মাহাতো

সভার মঞ্চে শান্তিরাম মাহাতোর সঙ্গে মমতা। ছবি: সুজিত মাহাতো

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
বলরামপুর শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০০:১৯
Share: Save:

বলরামপুরের সংগঠন চাঙ্গা করতে ছাত্র-যৌবনকে তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে এগিয়ে আসতে বললেন দলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে আদিবাসী ও গ্রামাঞ্চলের মানুষদের কাছে যেতে, তাঁদের মনের খবর জানতে নেতা-মন্ত্রীদের যেতে বললেন। কর্মীদেরও দলের সম্পদ বলে উজ্জীবিত করার চেষ্টা চালালেন তিনি। সব মিলিয়ে বুধবার বলরামপুরের তৃণমূলের আয়োজিত ভরা সভায় মমতা দলের কর্মীদের চাঙ্গা করার সঙ্গে যাঁরা সরে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনতে বলে একটা সামঞ্জস্য বজায় রাখার কাজ করে গেলেন বলে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব। তাঁরা আশ্বাস, ‘‘বলরামপুরের যেটুকু জায়গায় হেরেছেন, চিন্তা করার কারণ নেই।’’

পঞ্চায়েত ভোটে এই জেলায় বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু এলাকায় তৃণমূলের ফল খারাপ হলেও তৃণমূলকে বেশি ‘ধাক্কা’ দিয়েছে বলরামপুর। এখানে সাতটি পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি, এমনকী জেলা পরিষদের দু’টি আসনও বিজেপির কাছে হারতে হয়েছে তৃণমূলকে। পরাজিত হয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি থাকা সৃষ্টিধর মাহাতোও।

এই পরাজয়ের জন্য সৃষ্টিধর ও তাঁর অনুগামীদের আচরণকে বারবার দুষে জনমত ফেরানোর আর্জি জানিয়ে আগেই সভা করেছেন তৃণমূল নেতারা। মমতাও এ দিন বলেন, ‘‘কারও বিরুদ্ধে কারও ক্ষোভ থাকতেই পারে। সৃষ্টির কাজকর্ম আমরাও পছন্দ করতাম না। তাই শুধু সৃষ্টির উপরে রাগ আছে বলে আমি কি বিজেপিকে ভোট দিয়ে দেব? কেন? বিজেপি আপনাকে কি খেতে-পরতে দেয়? এলাকায় শান্তি বজায় রাখে? কিছুই করে না। তাহলে কীসের জন্য ওদের ভোট দেবেন?’’

তৃণমূলের প্রতি বিভিন্ন কারণে বিরূপ হওয়া বাসিন্দাদের বুঝিয়ে ফের দলের প্রতি সমর্থন তৈরি করায় জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘যে জায়গাগুলোর মানুষ ভুল বুঝে বা অপপ্রচারে বা আমাদের কাউকে ভুল বুঝে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে, তাঁদের ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। তাঁদের নিয়ে কাজ করবেন।’’

দুই মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ও সন্ধ্যারানি টুডুকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘‘ঘরে বসে না থেকে মাঝেমধ্যে গরীব মানুষের কাছে যান। তাঁদের সঙ্গে বসে আড্ডা মারুন। মনের কথা জানুন। আমি যদি জেলায় জেলায় ছুটে যেতে পারি, বাড়ি থেকে বার হওয়ার সময় রোজ লোকের সঙ্গে দেখা করতে পারি, তাহলে আপনারা করবেন না কেন? চিকিৎসার ব্যবস্থা তো করে দিতে পারেন। এখন কত প্রকল্প। যার জন্য যা প্রকল্প রয়েছে, তাঁদের সেই ব্যবস্থাগুলি করে দিন।’’

সভার শুরুতে সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও বক্তৃতায় বলেন, ‘‘যে লোকটা বিভিন্ন কারণে আপনাকে পছন্দ করছেন না, তাঁর পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে বলতে হবে ‘আমাদের কী দোষ হয়েছে বলুন?” কর্মীদের উদ্দেশে মমতার আরও পরামর্শ, ‘‘দলের কর্মীরাই আমাদের সম্পদ। নেতারা নয়। কর্মীদের বলব, নিজেরা এলাকায় যান। নিজেরা তৈরি করুন। এমএলএ কখন আসবেন, তারপরে আপনি কাজ করবেন, অপেক্ষা করবেন না। আপনি নিজে এলাকার এমপি, এমএলএ, দলের সর্বোচ্চ নেতা। নিজেদের মতো ভাল করে করুন। ব্লকের কর্মীরা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্লক সভাপতিরা দলের সব থেকে বড় নেতা। তাদেরও বুথে বুথে গিয়ে সংগঠন করতে হবে। শাখা ও তৃণমূল এক সঙ্গে কাজ করবে।’’

একই সঙ্গে নতুন কর্মী তৈরিতেও তিনি জোর দেন। মমতা বলেন, ‘‘আমি ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েদের চাই। দামাল ছেলেমেয়েদের চাই। ছাত্র-যৌবন যারা আমাদের তেরঙ্গা ঝান্ডা নিয়ে ‘তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ’ বলবে, দল তাঁদের নেতৃত্ব দেবে। দল তাদের দেখবে। দল তাদের পাশে থাকবে। ওদের (বিজেপি) মোকাবিলা করার জন্য মা-বোন এবং আদিবাসীদের গুরুত্ব দিতে হবে। ছাত্র-যৌবন যারা ভয় পায় না, টাকা খায় না, যারা মাথা উঁচু করে চলে, যারা জীবন দেওয়ার জন্য তৈরি, আমি তাদেরই চাই। আমি কথা দিচ্ছি, আগামী দিনে যে সুযোগ আসবে, আপনারা সেই সুযোগ পাবেন।’’

বিজেপি আদিবাসী ও কুড়মিদের নিয়ে বিভাজনের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আদিবাসী ও কুড়মি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাগাভাগি করবেন না। আদিবাসীদের যা সুযোগ সুবিধা, তা আমি দেব। আদিবাসীদের আমরা বঞ্চিত করব না। বিজেপি আদিবাসীদের টাকা দিয়ে বলছে ভোট দাও আর মাহাতোদের দিল্লি ডেকে নিয়ে গিয়ে বলছে, এস এসটি করে দিচ্ছি। ওরা আদিবাসী ও কুড়মিদের নিয়ে খেলছে। আমরা কাউকে নিয়ে খেলি না।”

আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়নে রাজ্য সরকার বহু কাজ করছে দাবি করে সে সব বিষয় নিয়ে দলের কর্মীদের প্রচারে নামার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। সেই সঙ্গে পাশের বিজেপি শাসিত ঝাড়খণ্ডে আদিবাসীরা কী ভাবে বঞ্চিত তাও তুলে ধরতে বলেন।

একই সঙ্গে কর্মীদের বলেন, ‘‘আমি নিজে করব, আর কেউ পাবে না। এটা চলবে না।’’ অনেকের মতে, দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব ঠেকাতেই তিনি এ কথা মনে করান। তবে, এ দিনের ভিড় দেখে উচ্ছ্বসিত কর্মীরা। শান্তিরামবাবুর দাবি, ‘‘লক্ষাধিক মানুষ এসেছিলেন নেত্রীর কথা শুনতে। যত না মানুষ মাঠে ছিলেন, তারও বেশি মানুষ রাস্তাতেই ছিলেন।’’ পুলিশেরও দাবি, এক লক্ষ মানুষ এসেছিলেন।

যদিও জেলা বিজেপি সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী পাল্টা দাবি, ‘‘দু’বার যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলরামপুরে গিয়েছেন। তখনও লোক হয়নি। তাই এ বার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নামতে হয়েছে। বাইরের জেলা থেকে লোক এনে বলরামপুরের সভা ভরাতে হয়েছে। তবে বলরামপুরের মানুষ কত জন গিয়েছিলেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’’ তা মানতে নারাজ শান্তিরামবাবু। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক ভাবে দলীয় কর্মীদের নিয়ে সভা করতে চেয়েছিলেন। তিনি নেতা-কর্মীদের কাছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করতে এসেছিলেন। জেলার মানুষই তা শুনতে এসেছিলেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE