এমন একটা শহর, যেখানে রাস্তার দু’ধার, পার্ক আর বাগান ভরে উঠবে সবুজে। এমন একটা শহর, যেখানে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা থাকবে। পানীয় জলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে থাকবে একাধিক জলাধার। এমন একটা শহর, যে সেজে উঠবে এলইডি আলোয়। এমন শহর, যেখানে প্রযুক্তির হাত ধরে বর্জ্য পরিশোধন হবে। এ হবে সেই শহর যার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দিনযাপন বন্দি থাকবে ক্যামেরার চোখে।
রাজ্যের প্রতিটি শহরকে এমনই এক পরিবেশ-বান্ধব চেহারা দিতে কোমর বেঁধে নেমেছে নবান্ন। ভাবনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘গ্রিন সিটি’। আক্ষরিক অর্থেই সবুজ শহর।
কেন্দ্র চেয়েছিল, কলকাতার উপকণ্ঠে থাকা পাশাপাশি দুই শহর নিউ টাউন ও সল্টলেককে ‘স্মার্ট সিটি’ হিসেবে ঘোষণা করুক রাজ্য সরকার। নবান্ন পাল্টা সিদ্ধান্ত নেয়, উন্নত পরিকাঠামোযুক্ত কয়েকটি পরিকল্পিত শহর নয়, স্মার্ট সিটির ভাবনা ছড়িয়ে পড়ুক গোটা রাজ্যের শহরাঞ্চলে। সেই ভাবনা থেকেই রাজ্যের প্রতিটি পুরসভা এবং শহরকে ‘গ্রিন সিটি’ করে তোলার পরিকল্পনাকে ‘পাখির চোখ’ করেছে রাজ্য। ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি কমিটি য়ে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) পেশ করেছে সরকারের কাছে, তাতে সিলমোহর দিয়েছে নবান্নের শীর্ষমহল। রাজ্যের নগরোন্নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দাবি, ‘‘ঢাকে কাঠি পড়েছে। কাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে।’’
গ্রিন সিটি
• পরিবেশের ভারসাম্য রাখতে নির্দিষ্ট আইন
• বনসৃজন হবে, সংস্কার হবে পুকুরের, কাটা যাবে না গাছ
• জীববৈচিত্রকে অটুট রাখার কাজে ব্রতী হবেন শহরের বাসিন্দারা
• যাঁরা বাইরে থেকে আসবেন, তাঁদেরও পরিবেশ বিধি মানতে হবে
• প্রচলিত বিদ্যুতের পরিবর্তে পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্যের ১২৫টি পুরসভার প্রধান শহর গ্রিন সিটি প্রকল্পের আওতায় থাকবে। মন্ত্রীর সংযোজন, এর বাইরেও বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার অধীনে থাকা শহরও এর আওতায় চলে আসবে। মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনাকে দ্রুত কার্যকর করতে বিভিন্ন পুরসভার প্রস্তাব মোতাবেক পাঁচশোরও বেশি প্রকল্প অনুমোদন করেছে নগরোন্নয়ন দফতর। কোথাও গাছ লাগানো, কোথাও রাস্তা সংস্কার, কোথাও আলো বা পার্ক সাজানোর প্রকল্প রয়েছে। বাজেট ৬০০ কোটি টাকা ছুঁয়েছে।
কিন্তু কেন্দ্রের অনুমোদিত স্মার্ট সিটি তৈরিতে আপত্তি কোথায়?
নবান্নের খবর, এক সময় দিল্লির কাছে রাজ্যের ৬টি শহরকে স্মার্ট সিটি তৈরির প্রস্তাব পাঠিয়েছিল নগরোন্নয়ন দফতর। কেন্দ্র মাত্র দু’টোর অনুমোদন দেয়। শর্ত ছিল, প্রতিটি স্মার্ট সিটি গড়তে কেন্দ্র দেবে ১০০ কোটি টাকা। রাজ্য দেবে ১০০ কোটি। সূত্রের খবর, এতেই বেঁকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘গ্রিন সিটিকে স্মার্ট সিটির পাল্টা বলা যায়।’’
মন্ত্রীর কথায়, ‘‘নিউ টাউন, সল্টলেক পরিকল্পিত শহর। ইতিমধ্যে দু’টি শহর পরিকাঠামো ও পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবলম্বি হয়ে উঠছে। তাই তার পিছনে স্মার্ট সিটির তকমা লাগাতে টাকা খরচের কোনও মানেই হয় না।’’ অতএব রাজ্যের সিদ্ধান্ত, প্রতিটি শহর হয়ে উঠুক পরিবেশ আর নাগরিক-বান্ধব। ফিরহাদের প্রশ্ন, ‘‘নিউ টাউন, সল্টলেক হতে পারলে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া কেন গ্রিন সিটি হবে না?’’
পরিবেশবিদদের একাংশ অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, সবুজ শহরের ভাবনাটি খুবই ভাল। কিন্তু রাস্তা বাড়ানো বা নগরোন্নয়নের অন্য প্রয়োজনে একশো-দেড়শো বছরের গাছ কেটে ফেলাও কি বন্ধ করা যায় না!
এই সব চ্যালেঞ্জ নিয়েই আপাতত গ্রিন সিটির বল গড়াতে শুরু করেছে। প্রতিটি শহরের আয়তন বাড়ছে। আড়ে-বহরে। তাই এই প্রকল্পের শেষ কবে — তা কেউ জানেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy