কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌম্যজিৎ রজক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
যৌন হেনস্থা নিয়ে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। কেউ দলীয় শৃঙ্খলা মেনে নেতাদের কাছে অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছেন। কেউ প্রতিবাদের পথ বেছে নিয়েছেন। কেউ আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো প্রকাশ করে ‘ওঁদের মুখোশ’ খুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই এবং ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের নেতাদের বিরুদ্ধে যা জানা যাচ্ছে, তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এমন অভিযোগ, সংগঠনের একাংশের কর্মীদেরই। আর এ সবের পরেই যেন ঝাপটা দিচ্ছে #মিটুর ঝড়।
শুরুটা হয়েছিল ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে। তাঁর যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর দল থেকে বহিষ্কৃত করা হয় ঋতব্রতকে। তার এক বছরপর ফের একটি বিতর্কিত ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। আবার নাম জড়িয়েছে সিপিএমের এক যুব নেতার। তিনি গত বিধানসভা নির্বাচনে বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রের প্রার্থীও ছিলেন। কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে নাম জুড়েছে কলকাতা জেলা কমিটির সদস্য সৌম্যজিৎ রজকেরও।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যাদবপুরের এক এসএফআই কর্মীর দাবি, “এতো হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এমন আরও কয়েক জনের ভিডিয়ো রয়েছে। এখনই হয়তো তা প্রকাশ্যে আসছে না। পরে আসবে।”
তিনি বলছেন বটে, পরে আসবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জন সামনে এসে মুখ খুলছেন। তাঁদেরই এক জন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বছর তিনেক ধরে এসএফআইয়ের সদস্য।তাঁর কথায়: ‘‘সৌম্যজিৎ রজক আমাকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন। শারীরিক ভাবে আমাকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছিল ওঁর হাতে। গত মার্চ মাসেও পার্লামেন্ট মার্চে দিল্লিতে গিয়েছিলাম। তখনও ট্রেনে একই ঘটনা ঘটে। দলীয় নেতাদের জানিয়েছিলাম। এক-দু’বার নয়, বহুবার।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সৌম্যজিৎ আর আমি ভবানীপুর এরিয়া কমিটিতে ছিলাম। সেই কারণেই চুপ করে থাকতে বলা হয়েছিল। ছাত্র ফ্রন্টের দায়িত্বে রয়েছেন সৌম্যজিৎ। তাই সম্পর্ক রেখেই চলতে হবে।’’
ওই ছাত্রীর মতো অভিজ্ঞতা অনেকেরই। কিন্তু, তাঁরা কেউই দলীয় শৃঙ্খলা মেনে বাইরে মুখ খুলতে চান না। যেমন, আশুতোষ কলেজের প্রাক্তন এক ছাত্রী অভিযোগ করেছেন, ওই কলেজেরই এসএফআই নেতা,যিনি বর্তমানে সিপিএমের পরিচিত মুখ, তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন। সেই ঘটনার ভিডিয়ো রয়েছে বলেও ওই ছাত্রীর ঘনিষ্ঠ কয়েক জন দাবি করেছেন। তবে, তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
আরও পড়ুন: #মিটু অভিযোগ পেয়েই গুরসিমরান খাম্বাকে শো থেকে বাদ দিল আমাজন
এ সব শুনে বেহালার এক ডিওয়াইএফআই কর্মী বললেন, “নেতাদের বিরুদ্ধে ঘন ঘন এমন অভিযোগ উঠলে দল করতেই তো অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বছর দুয়েক আগে বেহালার এক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা জেলা কমিটি থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এখন অবশ্য দল বদলে তিনিবিজেপিতে।”
আরও পড়ুন: কেউ কেউ বলছেন এ বার আমাকে ভাতে মারা হবে, মারবে, রুটি খাব
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী যেমন বলছিলেন, ‘‘এই সংগঠনের কর্মীরা তো নিজেদের প্রগতিশীল বলে মনে করেন। কিন্তু, আমার এখন তা মনে হয় না। এই ধরনের এলিমেন্টদের সংগঠনে থাকা ঠিক নয়। আমি চাই যাঁদের সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তাঁরা সামনে আসুক।’’
তবে যাঁদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সেই কৌস্তভ এবং সৌম্যজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দু’জনেই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সংগঠনের মধ্যে খোলা হাওয়ার বাতাবরণ রয়েছে। এ ধরনের যে অভিযোগগুলি উঠছে, আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখতে শুরু করেছি। যাদবপুরের ওই ছাত্রীর অভিযোগও আমরা খতিয়ে দেখছি।’’
রাজনৈতিক মহলের একটা অংশের ব্যাখ্যা, যে ভাবে একের পর এক অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলছেন কর্মীরা, তাতে কোথাও আগ্নেয়গিরির মুখটা হয়তো খুলে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে যে ভাবে #মিটু ঝড় বইছে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এ বার তা উঠতে শুরু করল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy