অনীক দত্ত। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সে দিন নন্দনে গিয়েছিলাম এক বন্ধুর একটা সিনেমা দেখতে। সঙ্গে ওই আলোচনাসভাটাও ছিল। নন্দনে পৌঁছনোর আগে হোয়াটস্অ্যাপে একটা ছবি এল। দেখলাম চতুর্দিকে মুখ্যমন্ত্র্রীর ছবি। ভেবেছিলাম, ফোটোশপড। কিন্তু নন্দন চত্বরে পৌঁছতেই দেখি, ফোটোশপ-টপ নয়, ঘোর বাস্তব। সেটাই মনকে এমন পীড়া দিয়েছিল যে, কথাগুলো আলোচনাসভায় বলেই ফেললাম।
সিনেমা এখন আর পরিচালক, প্রযোজকদের বিষয় নয়, নন্দন প্রাঙ্গণে যাঁর ছবি ছড়িয়ে আছে, বাস্তবে তিনিই বোধহয় সিনেমার একমাত্র ব্যক্তিত্ব। খারাপলাগাটাকে একটু মস্করার মোড়কে পুরেই কথাগুলো বলেছিলাম। আমি আসলে এ রকমই। একটাই জীবন তো। দমবন্ধ অবস্থায় বাঁচতে পারি না। আমার অনেক বন্ধু এ শহর ছেড়ে চলে গেলেও, সুযোগ আসা সত্ত্বেও আমি যাইনি। থেকে গিয়েছি কলকাতায়। কিন্তু, শহরটার আমূল পরিবর্তন হিয়ে গিয়েছে। এ যেন কোনও অচেনা শহর!
একটা চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাঙ্গণে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছবি সর্বস্ব হোর্ডিং, কাট আউট লাগানো হবে কেন? এ তো কোনও ভাবেই দৃষ্টিনন্দন নয়! দৃষ্টিকটূ। বিশ্বের কোথাও এমনটা দেখিনি।
আরও পড়ুন: কে বড়, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি না চলচ্চিত্র, বিতর্কে তোলপাড় রাজ্য
কথাগুলো তো বলে ফেললাম। বলার সময় তো সামনে বসা মানুষজন করতালি দিলেন। কিন্তু, এখন কেমন বাধো বাধো লাগছে। কারণ, এটা নিয়ে জল এ ভাবে গড়াবে ভাবিনি। এ বিষয়ে বলতেও চাইছি না আর। কারণ, যা বলার আমি বলে দিয়েছি। কিন্তু, না বললে সকলে ভাববেন, আমি ভয় পেয়ে গিয়েছি। বা বিষয়টা নিয়ে পিছু হঠছি। আর সে কারণেই কথাগুলো আবারও বলতে হচ্ছে।
আসলে আমার মনে হয়, একটা বড় অংশের মানুষ এখানে কেমন দমবন্ধ অবস্থায় রয়েছেন। তাঁরা নিজেদের ভাবনা বা কথাগুলোকে ঠিক মতো করে উপস্থাপন করতে পারছেন না। হয়তো ভয় পাচ্ছেন। তাই আমার মেসেজবক্স ভরে উঠছে, তাঁদের শুভেচ্ছায়। বক্তব্য, সত্যিটা এ রকম ভাবে বলে ফেলার জন্য ধন্যবাদ। অথচ নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না। বিষয়টা তাঁদের কাছে খুব একটা সহজ বলে মনে হয়নি। ভাবছেন, আমি একটা বড় কিছু করে ফেলেছি।ওঁদের একটা ভীতি কাজ করছে, সেটা বুঝতে পারছি। অনেকের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেটাও জানি। কিন্তু, সত্যিটা ঠিক সময়ে না বললে তো বড় মুশকিল। সবটাই অধিকারের ব্যাপার। ওটা তাঁদের অধিকার। এটা আমার।
অনেকে প্রকাশ্যে অর্থাৎ ফেসবুকে আমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ ভর্ৎসনাও করছেন। নাম করে, নাম না করেও। আমি খুব খোলামেলা কথা পছন্দ করি। তাই আমার ফেসবুক পেজে যে সব মন্তব্য আসছে, কোনওটাই মুছে দিইনি। হোয়াটস্অ্যাপেও বার্তা আসছে। কেউ কেউ বলছেন, এ বার আপনাকে মারবে! হাতে না মারলেও, ভাতে। আমি হেসে বলেছি, মারলে মারবে, রুটি খাব।
আরও পড়ুন: কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে দেখুন ‘অসুখওয়ালা’
নন্দন চত্বর জুড়ে ফিল্ম উৎসবের পোস্টারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ঘিরেই বিতর্ক দানা বাঁধে।
সে দিনও অনেকে হেসেছিলেন। কিন্তু, একটা কথা খুব স্পষ্ট ভাবে বলি, আমি কোনও বিপ্লব ঘটাতে কিছু বলিনি। যেটা মনে হয়েছে সেটা বলেছি। সাধারণ মানুষের মনে হয়তো অনেক অস্বস্তি রয়েছে, সেগুলো বলতে পারছেন না। এই সুবাদে অনেকে নিজেদের মনের কথাগুলো বলতে পারছেন, অন্তত নিজেকে এক বার যাচাই করে নিচ্ছেন তাঁরা।
অনেকে আবার আমাকে হুমকিও দিয়েছেন। তাদের জানিয়েছি, আমি তো আপনার কোনও উপকার করিনি কখনও। আর যাঁরা বলছেন, আমি বিজেপি বা সিপিএম, তাঁদের বলি আগে ঠিক করুন, আমি ঠিক কী, তার পর কথা বলব! তবে সত্যিটা হল, কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক তো দূরের কথা পরিচয়ই নেই। আর নিজের মনের কথাটা বলতে, নিজের খারাপ লাগাটা বলতে কোনও রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রয়োজন হয় না আমার।
এত বিজেপি-সিপিএম বলছে! মনে হচ্ছে, ইশ, আলিমুদ্দিন স্ট্রিট চিনে উঠতে পারলাম না এখনও! আর বিজেপির কার্যালয়টা যে এ শহরে কোথায়, তা-ও জানি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy