Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মেয়ের সম্ভ্রম বাঁচাতে প্রাণ গেল মায়ের

তক্কে তক্কে থাকত জনা পাঁচেকের দলটি। বছর পনেরোর কিশোরী বাড়ির বাইরে বেরোলেই শুরু হতো কটূক্তি। কিশোরীর মা প্রতিবাদ করায় এসেছিল হুমকি, ‘‘বাড়ি থেকে তোর মেয়েকে তুলে আনব। কিস্যু করতে পারবি না।’’

.

.

বিমান হাজরা
সমশেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৮
Share: Save:

তক্কে তক্কে থাকত জনা পাঁচেকের দলটি। বছর পনেরোর কিশোরী বাড়ির বাইরে বেরোলেই শুরু হতো কটূক্তি। কিশোরীর মা প্রতিবাদ করায় এসেছিল হুমকি, ‘‘বাড়ি থেকে তোর মেয়েকে তুলে আনব। কিস্যু করতে পারবি না।’’

অভিযোগ, শুক্রবার সেই চেষ্টাই করে মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জের বাসিন্দা রাহেদ আনসারি ও তার চার সঙ্গী। পরিণামে মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হয়ে গেলেন মা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকতেন ওই মহিলা। তাঁর স্বামী সল্টলেকে একটি নির্মীয়মাণ আবাসনে রাজমিস্ত্রিদের জন্য রান্না করেন। শুক্রবার রাতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন মা। রাত এগারোটা নাগাদ মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতে ঢুকে রাহেদ ও তার সঙ্গীরা কিশোরীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দেন বছর একত্রিশের ওই মহিলা। একজন লাথি মেরে ফেলে দেয় তাঁকে। ফের উঠে মেয়েকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জবাবে রাহেদ তাঁর পেটে ভোজালির কোপ বসিয়ে দেয়।

কিশোরী পরে জানায়, রক্তে তখন ভেসে যাচ্ছিল গোটা ঘর। তারা তিন বোন ও এক ভাই ভয়ে সিঁটিয়ে ছিল। রাহেদরা ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের বাঁশবাগানে দাঁড়িয়ে শাসাচ্ছিল— ‘ঘর থেকে বেরোলেই কেটে ফেলব।’ ভোর তিনটে পর্যন্ত বাইরে বেরোতে কেউ সাহস পায়নি। পরে দুষ্কৃতীরা চলে গেলে সাহসে ভর করে ছোট ভাইকে নিয়ে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে যায় কিশোরী। সেখান থেকে কলকাতায় ফোন করে জানানো হয় কিশোরীর বাবাকে। তিনি ফোন করেন স্থানীয় হাতুড়েকে। ভোরের আলো ফুটতে তিনি এসে চিকিৎসা শুরু করেন। সকাল হলে প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মহিলাকে। সেখানেই শনিবার বিকেলে তিনি মারা যান।

জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল এ দিন বলেন, ‘‘প্রায় ন’ঘণ্টারও বেশি সময় ওই মহিলা বিনা চিকিৎসায় পড়েছিলেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’’ জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, “অভিযুক্তেরা পলাতক।’’ কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, রবিবার সকালেও রাহেদ শাসিয়ে গিয়েছে, পুলিশের কাছে মুখ খুললে ফল খারাপ হবে। রবিবার ময়নাতদন্তের পরে নিহতের দেহও গ্রামে আনতে সাহস পাননি তাঁর আত্মীয়েরা। ছেলেমেয়েরা রয়েছে পাশের গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে।

খবর পেয়ে ফরাক্কার অর্জুনপুর থেকে ছুটে এসেছেন ওই মহিলার মা। কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলছেন, ‘‘মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে ও শেষ হয়ে গেল। দুষ্কৃতীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Shamshergunj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE