Advertisement
০২ মে ২০২৪

মনে হচ্ছে যেন জন্নতে ফিরলাম, বলছেন কাশ্মীর থেকে বেঁচে ফেরা সেই জহিরুদ্দিন

২৯ অক্টোবর কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় খুন হন মুর্শিদাবাদের পাঁচ শ্রমিক। গুলিবিদ্ধ হলেও প্রাণে বেঁচে যান জহিরুদ্দিন।

আপনজন: নিজের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে জহিরুদ্দিন সরকার। রবিবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির বাহালনগর গ্রামে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

আপনজন: নিজের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে জহিরুদ্দিন সরকার। রবিবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির বাহালনগর গ্রামে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

বিমান হাজরা
বাহালনগর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৪
Share: Save:

ডান হাতে প্লাস্টার। পায়ে গুলির ক্ষত। পেটে সেলাই। শরীর জুড়ে ব্যথা-যন্ত্রণা। তবুও ফুল-আঁকা বালিশে মাথা রেখে হাসছেন জহিরুদ্দিন সরকার। সে হাসিতে মিশে রয়েছে স্বস্তি আর প্রশান্তি। জহিরুদ্দিন বলছেন, ‘‘ভূস্বর্গ থেকে মনে হচ্ছে যেন জন্নতে ফিরলাম!’’

২৯ অক্টোবর কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় খুন হন মুর্শিদাবাদের পাঁচ শ্রমিক। গুলিবিদ্ধ হলেও প্রাণে বেঁচে যান জহিরুদ্দিন। শ্রীনগর হাসপাতালে বেশ কিছু দিন ভর্তি থাকার পরে বুধবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। শনিবার রাতে সেখান থেকেই মুর্শিদাবাদের বাহালনগরের বাড়িতে পৌঁছন তিনি।

জহিরুদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই আত্মীয় আহাদ সরকার ও দিলবর শেখ। গাড়িতে শুয়েই জহিরুদ্দিন তাঁদের কাছে কখনও জানতে চেয়েছেন, ‘‘কী রে, বর্ধমান পেরোলাম নাকি?’’ কখনও গাড়ির আলোয় চেনা এলাকা দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন, ‘‘ওরে, এ যে মোরগ্রামে চলে এলাম। বাড়িতে ফোন কর, এই এলাম বলে!’’

আরও পড়ুন: শোভনের বিচ্ছেদ মামলা স্থগিত

জহিরুদ্দিন বলছেন, ‘‘ভাবতেই পারিনি বেঁচে বাড়ি ফিরব। ফের স্ত্রী, বাবা, মাকে দেখতে পাব। কলকাতা থেকে গাড়িতে আসার সময় তাই আর তর সইছিল না।’’ জহিরুদ্দিন গ্রামে ফিরছেন— খবরটা শনিবার বিকেলেই গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিল। সেই মতো জহিরুদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে রাত জেগে অপেক্ষায় ছিল তামাম বাহালনগর। জহিরুদ্দিনের মা আতিয়ারা বিবি বলছেন, “এই ক’টা দিন আমাদের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছে। ছেলে যে প্রাণে বেঁচে আছে, এটাই আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি।” স্ত্রী পারমিতা বলছেন, “দুর্ঘটনার পরে আমিও ভেবেছিলাম, সব শেষ। কিন্তু তার দু’দিন পরে ফোনে স্বামীর গলা শুনে ধড়ে যেন প্রাণ ফিরে আসে। এখনও ও পুরোপুরি সুস্থ নয়। তবে ও বাড়ি ফেরায় আমরাও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি।”

প্লাস্টার না হওয়া ঘরের দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে জহিরুদ্দিন বলছেন, “ঘর-বাড়ির অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছেন। সে ভাবে কিছুই করতে পারিনি। একটা সময় ঘরদোরের এমন অবস্থা দেখে নিজেরই খারাপ লাগত। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, বাড়ি-ঘর শুধু ইট-সিমেন্টের নয়। তার সঙ্গে অনেক মায়াও লেপ্টে থাকে। শ্রীনগর ও কলকাতার হাসপাতালে শুয়ে সেটাই শুধু মনে হত। এখনও মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে, সত্যিই বাড়ি ফিরেছি নাকি স্বপ্ন দেখছি!’’

কথা বলতে বলতে অন্তত বার কয়েক জহিরুদ্দিন বললেন, ‘‘এ ভাবে পাঁচ জনকে মেরে কার কী লাভ হল, বলতে পারেন!’’ পেঁপে-কাঁচকলা সেদ্ধ দিয়ে গলা ভাত খাইয়ে দিতে দিতে আতিয়ারা বিবি প্রসঙ্গ ঘোরাতে চাইলেন, ‘‘ও সব কথা থাক বাপ। এ বার দু’গাল খেয়ে নে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad Kashmir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE