বাকি রাখা খাজনা, মোটে ভাল কাজ না!
আর্থিক অনটনে পড়ে হীরক রাজ্যের নীতিতে চলতে চাইছে সিপিএম।
ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার পরে দলের এখন ভাঁড়ে মা ভবানী। নেতা-কর্মীদের খরচ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্লেনামের খসড়া রিপোর্টেও তা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে আসন্ন প্লেনামের খসড়া রিপোর্টে সিপিএম স্পষ্ট জানিয়েছে, তিন মাসের বেশি লেভি বকেয়া থাকলে সংশ্লিষ্ট দলীয় কর্মীর সদস্যপদ খারিজ হবে।
দলের দৈনন্দিন খরচ চালানোর সমস্যা ছাড়াও সর্বক্ষণের কর্মীর অভাব এখন ভোগাচ্ছে সিপিএমকে। এই কর্মীদের যে ভাতা দেওয়া হয়, তা বাজার দরের তুলনায় খুবই কম। কয়েক দিন আগেই দলের প্রবীণ পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসু মুজফ্ফর আহমেদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, সর্বক্ষণের কর্মীদের বেঁচে থাকার মতো ভাতা দিতে হবে। বাকি সদস্যেরা প্রকৃত আয় গোপন না করে ঠিক হারে লেভি দিলে সর্বক্ষণের কর্মীদের ভাতা দিতে সুবিধা হয়। এ বার প্লেনামের খসড়া রিপোর্টেও বলা হয়েছে, ‘রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজে যোগ্য ও নিষ্ঠাবান, কঠিন সময়ে বলিষ্ঠ এবং নিজেরাই সমস্যার মোকাবিলা করতে দক্ষ, এমন সর্বক্ষণের কর্মী বাড়ানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং ভবিষ্যতের জন্যও অপরিহার্য। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো এবং সর্বক্ষণের কর্মীদের ভাতা বৃদ্ধির উপরে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট প্রস্তুত করা সর্বত্র চালু করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, সর্বক্ষণের কর্মীদের মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে দলই। যে টাকা স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য নেহাতই অপ্রতুল বলে সিপিএমে বহু বার বহু আলোচনা হয়েছে। দলের অন্য সদস্যেরা তাঁদের আয়ের অনুপাতে দলকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিয়ে থাকেন। যাকে বলে ‘লেভি’। সদস্যদের এই লেভিই দল চালানোর জন্য অন্যতম বড় ভরসা সিপিএমের। রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পরে আয়ের অন্যান্য উৎস শুকিয়ে আসায় লেভির উপরে নির্ভরতা স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে গিয়েছে সিপিএমের। তাই লেভি বকেয়া রাখলে শাস্তি দেওয়ার পথে হাঁটার কথা বলা হচ্ছে।
সঠিক সময়ে লেভি না দিলে সিপিএমে আগে মৌখিক আবেদন করা হতো। তাতে কাজ না হলে লিখিত ভাবে সংশ্লিষ্ট জেলা এবং রাজ্য কমিটি থেকে নির্দেশিকা পাঠানো হতো। তাতেও কাজ না হওয়ায় এক সময়ে প্রায় অধিকাংশ পার্টি চিঠিতে এই নিয়ে সতর্কতা জারি করা হতো। ক্ষমতায় থাকার সময়ে এই নিয়ে দলীয় নেতৃত্ব কেবল আবেদন-নিবেদনেই সীমাবদ্ধ থাকতেন। তখন বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলের নির্দিষ্ট করে দেওয়া অর্থ সংগ্রহ করে দেওয়া নিয়ে জেলা কমিটিগুলি রীতিমতো প্রতিযোগিতা চালাত! দলের ঠিক করে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি টাকা তুলে দিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের মন পাওয়ার চেষ্টা হতো তখন! কিন্তু এখন আর সে দিন নেই! দলের বিপুল খরচ এবং একাধিক দলীয় মুখপত্র চালানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। মুখপত্রের জন্য বিজ্ঞাপনও আসছে না। এই পরিস্থিতি মাথায় রেখেই সিপিএম লেভির বিষয়ে এ বার কড়া মনোভাব দেখাতে চাইছে।
দলের নির্ধারিত হিসাব মেনে লেভি দেওয়া নিয়ে সদস্যেরা যে কারচুপি করে থাকেন, তা-ও অজানা নয় শীর্ষ নেতৃত্বের। তাই প্লেনামের রিপোর্টে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্ধারিত হারেই লেভি দিতে হবে। সাধারণত কর্মীরা সদস্যপদ পুনর্নবীকরণের সময় বছরের শেষে লেভি দিতেন। কিন্তু এখন অনটনের বাজারে প্রতি মাসের লেভি সেই মাসেই আদায়ের পক্ষপাতী সিপিএম নেতৃত্ব। ঘাটতি মেটাতে তাই তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিতে চাইছেন নেতারা। ডিসেম্বর থেকে এই ব্যবস্থা কার্যকর করার প্রস্তাব রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy