বর্ধমানে নিজের বাড়ির সামনে নিরুপম সেনকে শেষ বার দেখার ভিড়।
জীবদ্দশায় বারবাই বলতেন, সিঙ্গুরে গাড়ির কারখানা না হওয়ায় রাজ্যে শিল্পায়নের সম্ভাবনা অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। টাটা-বিদায়ের পরে নানা সভায় তাঁর মুখে আর্জি শোনা যেত, ‘‘শুধু একটা কারখানা বাঁচানোর লড়াই নয়। শিল্পের সঙ্গে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের প্রশ্ন জড়িত। রাজ্যের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ নিশ্চয়ই রাজ্যকে ধ্বংসের কিনারায় যেতে দেবেন না।’’ সেই সিঙ্গুরেই থমকে দাঁড়াল রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের শেষ যাত্রা!
কলকাতায় সিটুর রাজ্য দফতর এবং আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে শেষ শ্রদ্ধার পরে বুধবার নিরুপমবাবুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বর্ধমানে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যাওয়ার পথে সিঙ্গুরের সানাপাড়ায় পরিত্যক্ত গাড়ির কারখানার জমির সামনেই দাঁড় করানো হয়েছিল মরদেহবাহী গাড়ি। সিপিএম নেতাদের পাশাপাশিই সেখানে প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রীকে অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে বেরিয়ে এসেছিলেন সিঙ্গুরের বেশ কিছু স্থানীয় মানুষ। কৃষক সভার হুগলি জেলা সম্পাদক ভক্তরাম পানের কথায়, ‘‘যেখানে শিল্পায়নের স্বপ্ন ধাক্কা খেয়েছিল, সেখান থেকেই স্বপ্পপূরণের লড়াই নতুন করে শুরু করতে চাই। প্রয়াত নেতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই অঙ্গীকারই আমরা করেছি।’’ নিরুপমবাবুর দেহে মালা দিতে অশক্ত শরীরে হাজির হয়েছিলেন সিঙ্গুরের প্রাক্তন জোনাল সম্পাদক সুহৃদ দত্তও।
বর্ধমানে নিরুপমবাবুর বাড়ি হয়ে দলের জেলা দফতরে রাখা হয়েছিল মরদেহ। তার পরে শোক মিছিল করে নির্মল ঝিল শ্মশানে সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য। পথের দু’পাশে, বাড়ির ছাদে-বারান্দায় তখন তিলধারণের জায়গা ছিল না। দোকানপাট রেখে বেরিয়ে এসেছিলেন বহু ব্যবসায়ীও। নিরুপমবাবুকে ২০১১ সালে হারিয়ে যিনি বিধায়ক হয়েছিলেন, তৃণমূলের সেই রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে। শ্মশানেও শ্রদ্ধা জানান তৃণমূলের এক ঝাঁক কর্মী-সমর্থক।
আলিমুদ্দিনে প্রয়াত নেতার দেহ লাল পতাকায় মুড়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ ও বৃন্দা কারাট, সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু।
‘পিস ওয়ার্ল্ড’ থেকে বার করে এ দিন সকালে নিরুপমবাবুর দেহ প্রথমে আনা হয় সিটুর দফতরে। চিকিৎসকদের বিশেষ অনুমতি নিয়ে হাসপাতাল থেকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন শ্যামল চক্রবর্তী। এর পরে আলিমুদ্দিনে প্রয়াত নেতার দেহ লাল পতাকায় মুড়ে শ্রদ্ধা জানান সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, পলিটব্যুরোর সদস্য প্রকাশ ও বৃন্দা কারাট, সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে পুষ্পার্ঘ দিয়ে আলিমুদ্দিনেই শ্রদ্ধা জানান মার্শাল দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের দফতর থেকে ৭২টি অর্ধনমিত লাল পতাকাসমেত শোক মিছিলে নোনাপুকুর পর্যন্ত হাঁটেন ইয়েচুরি, কারাটেরা। বিমানবাবু, সূর্যবাবুরা তার পরে দেহ নিয়ে রওনা দেন বর্ধমানের দিকে। বিমানবাবু বলেন, ‘‘কী হারালাম, বলে বোঝানো যাবে না।’’
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy