Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রণক্ষেত্র এনজেপি, তুলকালাম গ্রুপ ডি পরীক্ষার্থীদের

পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার ট্রেন পাচ্ছিলেন না তাঁরা। তাই উত্তরবঙ্গের দুই স্টেশনে রবিবার সকালে তুলকালাম করলেন গ্রুপ ডি পরীক্ষার্থীরা। মালদহ টাউন স্টেশনে আধ ঘণ্টার ঝামেলায় ভাঙচুর চলে একটি ট্রেনে।

তাণ্ডব: ভাঙচুরের পরে লাইনের উপরেই ট্রেনের বাক্স ফেলে আগুন। এনজেপিতে রবিবার। বিশ্বরূপ বসাক

তাণ্ডব: ভাঙচুরের পরে লাইনের উপরেই ট্রেনের বাক্স ফেলে আগুন। এনজেপিতে রবিবার। বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০২:৫৩
Share: Save:

পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার ট্রেন পাচ্ছিলেন না তাঁরা। তাই উত্তরবঙ্গের দুই স্টেশনে রবিবার সকালে তুলকালাম করলেন গ্রুপ ডি পরীক্ষার্থীরা। মালদহ টাউন স্টেশনে আধ ঘণ্টার ঝামেলায় ভাঙচুর চলে একটি ট্রেনে। কিন্তু নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের অবস্থা ছিল অনেক বেশি সঙ্গীন। সেখানে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় গোলমাল চলে। একাধিক ইঞ্জিন ও কামরায় ভাঙচুর করা হয়। দীর্ঘক্ষণ অবরোধ চলে। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠি চালাতে হয় পুলিশকে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, শনিবার উত্তরবঙ্গের আট জেলায় পরীক্ষা দেন প্রায় সাত লক্ষ পরীক্ষার্থী। এদের অনেকেই এসেছিলেন বিহার থেকে। শনিবার সন্ধ্যা থেকেই তাঁরা ভিড় জমাতে শুরু করেন এনজেপি-তে। এক সময় সংখ্যাটা দাঁড়ায় বেশ কয়েক হাজার। সেই সন্ধ্যা থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত একমাত্র ট্রেন ব্রহ্মপুত্র মেল, যাতে কিছু পরীক্ষার্থী উঠতে পেরেছিলেন। বাদবাকি সময়ে যত ট্রেন এনজেপি হয়ে উত্তরপ্রদেশ ও বিহার গিয়েছে, তার কোনওটিতেই জায়গা করতে পারেননি ওই পরীক্ষার্থীরা। শেষে রবিবার সকালে তাঁদের ক্ষোভ আছড়ে পড়ে স্টেশনে।

সকাল সাতটায় অওধ অসম এক্সপ্রেস এসে দাঁড়ানোর পরপরই শুরু হয় অবরোধ। তার পরে যাবতীয় ক্ষোভ গিয়ে পড়ে ট্রেনের উপরে। রেলের দাবি, তিনটি ইঞ্জিনে ভাঙচুর হয়েছে, অওধ অসমের বাতানুকূল কামরার কাচ ভাঙা হয়েছে, উপড়ে ফেলা হয়েছে প্ল্যাটফর্মের একের পর এক কোচ ডিসপ্লে পোস্ট। শেষে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, লাঠি চালায় আরপিএফ, পাল্টা পাথর ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা।

এনজেপি শাখায় রেল চলাচল ততক্ষণে পুরোপুরি বিপর্যস্ত। দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেসের মতো ট্রেন এনজেপি ঢুকতে না পেরে বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে। বাতিল হয় প্যাসেঞ্জার ট্রেন। শেষে সকাল এগারোটা নাগাদ এনজেপি থেকে বারাউনি পর্যন্ত বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে রেল। তাতে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া সম্ভব হয়।

আরও পড়ুন: ‘এত সহজে আমার রাজনৈতিক জীবনে কালি লাগানো যাবে না’

বিহার, উত্তরপ্রদেশের হাজার কুড়ি পরীক্ষার্থী এসেছিলেন উত্তরবঙ্গে। এবং বেশির ভাগই এসেছেন ট্রেনে। অভিযোগ, সব জেনেও রাজ্য রেলকে কিছুই জানায়নি। শিলিগুড়ি-পাহাড় তো বটেই, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরাও এনজেপি এসে জড়ো হন। এনজেপি-র স্টেশন ডিরেক্টর পার্থসারথী শীলের দাবি, ‘‘শনিবার রাত থেকে স্টেশনে প্রায় ৭ হাজার পরীক্ষার্থী জড়ো হয়েছিলেন। একসঙ্গে এত পরীক্ষার্থী স্টেশনে চলে আসবেন, তা আমারা অনুমান করতে পারিনি। আগে জানলে দু’টি বিশেষ ট্রেনের বন্দোবস্ত করে রাখা যেত।’’ দার্জিলিঙের এক পদস্থ কর্তার মন্তব্য, ‘‘যত দূর জানি, নবান্ন থেকে রেল মন্ত্রকে বিষয়টি জানানো হয়।’’

অভিযোগ, রাতভর স্টেশনে থাকলেও জল-খাবার কিছুই জোটেনি পরীক্ষার্থীদের। বারাউনির বাসিন্দা সুনীল যাদব বলেন, ‘‘সারা রাত চোখের সামনে দিয়ে একের পর এক ট্রেন চলে গেল। সকালে কেউ আর ধৈর্য রাখতে পারেনি।’’ উল্টো দিকে, তাণ্ডবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। দিল্লির নিশা বলেন, ‘‘একদল ছেলেকে দেখলাম, পাথর নিয়ে এসে চুরমার করে দিচ্ছে আমাদের জানালার কাচ। সঙ্গে তিন বছরের মেয়ে ছিল। ভয়ে নেমে গিয়েছি।’’ এগারোটায় ঠাসাঠাসি ভিড় নিয়ে ছাড়ে স্পেশাল ট্রেন। সাড়ে এগারোটার পর ছাড়ে অওধ অসম। আটকে থাকা দূরপাল্লার ট্রেনগুলি বারোটা থেকে স্টেশনে ঢুকতে থাকে। স্বাভাবিক হতে শুরু করে এনজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NJP Station Train Vandalism Unrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE