Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভোট পিছোতে হবে মহানগরে, সরব বিরোধীরা

রাজ্যে আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের দাবি বারে বারেই তুলছে তারা। বিরোধী দলগুলি এ বার দাবি তুলল, পরীক্ষার মধ্যে হুড়োহুড়ি না-করে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে তারা ফের দাবি জানাল, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের স্বার্থেই আধাসেনা চাই।

সর্বদল বৈঠক। রবিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

সর্বদল বৈঠক। রবিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৩
Share: Save:

রাজ্যে আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের দাবি বারে বারেই তুলছে তারা। বিরোধী দলগুলি এ বার দাবি তুলল, পরীক্ষার মধ্যে হুড়োহুড়ি না-করে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে তারা ফের দাবি জানাল, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের স্বার্থেই আধাসেনা চাই।

বিরোধীদের দু’টি দাবিই খারিজ করে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের কটাক্ষ, বিরোধীরা যে কলকাতায় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন, তার কারণ তাঁদের প্রস্তুতি নেই! সেই সঙ্গে শাসক দলের বক্তব্য, রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।

ভোটারদের স্বার্থেই পুরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার বলে রাজ্য সরকারকে বারবার জানিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারও। কলকাতা-সহ রাজ্যের ৯২টি পুরসভার ভোট নিয়ে কমিশন এ দিন সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিল। সেখানে বিরোধী দলগুলির প্রতিনিধিরা যে-সব দাবি জানান, তার ব্যাপারে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিরোধী দলগুলির দাবি শুনেছি। দু’-এক দিনের মধ্যে আমরা এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।”

বিরোধী শিবির কলকাতার পুরভোট পিছোতে চাইছে কেন?

সর্বদলীয় বৈঠকের পরে বিজেপির প্রতিনিধি অসীম সরকার জানান, কলকাতা পুরসভার বোর্ডের মেয়াদ রয়েছে ৩০ জুন পর্যন্ত। অথচ এপ্রিলে কমিশন যে-সময়ে নির্বাচন করতে চাইছে, তখন বেশ কয়েকটি পরীক্ষা চলবে। “পরীক্ষা চলাকালীন নির্বাচন করলে পড়ুয়ারা যে-অসুবিধেয় পড়বেন, তার জন্য কে দায়ী হবেন,” প্রশ্ন তুলেছেন ওই বিজেপি নেতা। একই প্রশ্ন সিপিএম নেতা রবীন দেবের। তাঁর মতে, “শাসক দলের চাপে কমিশন ১৮ এপ্রিল কলকাতা পুরসভার নির্বাচন করতে চাইছে। ওই সময় পরীক্ষা চলবে। তা ছাড়া বি আর অম্বেডকরের জন্মদিন এবং পয়লা বৈশাখও রয়েছে। আমরা তাই ১৮ এপ্রিলের নির্বাচন পিছোনোর দাবি জানিয়েছি।” রবীনবাবু জানান, আদালত যে-সব পুরসভার নির্বাচন ৩১ জানুয়ারির মধ্যে করার নির্দেশ দিয়েছিল, সেখানে ওই দিন কেন ভোট হল না, কমিশন জবাব দিতে পারেনি। যে-সব পুরসভায় বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রশাসক বসেছে, সেগুলোয় প্রশাসকের মেয়াদও ছ’মাস হয়ে গিয়েছে। অথচ তাদের নির্বাচন পরে হচ্ছে। কলকাতা পুরসভার নির্বাচন আগে হচ্ছে। “কেন? এর কোনও ব্যাখ্যাই নেই কমিশনের কাছে,” বলেন রবীনবাবু।

কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বিরোধী দলগুলি প্রস্তুত নয় বলেই নির্বাচন পিছোনোর অজুহাত খুঁজছে। তিনি বলেন, “বছরে এমন কোনও তারিখ পাবেন না, যে-দিন একটাও পরীক্ষা নেই। সব কিছু দেখেশুনেই পুরসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। নিজেদের প্রস্তুতির অভাব রয়েছে বলেই বিরোধীরা এই সব দাবি জানাচ্ছেন। তাঁরা আসলে মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।” মেয়র জানান, পূর্বনির্দিষ্ট ১৮ এপ্রিল কলকাতা এবং ২৫ এপ্রিল বাকি পুরসভাগুলিতে ভোট হবে। এই সিদ্ধান্তের নড়চড় হচ্ছে না।

শাসক দলের এই দাবির ব্যাপারে কমিশন সূত্রে অবশ্য কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে কমিশন সূত্রের ইঙ্গিত, তারা বিরোধীদের আপত্তির কথা সরকারকে জানাবে। তার পরেও সরকার ১৮ এপ্রিল ভোট করতে চাইলে আপত্তি করবে না কমিশন।

কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবির ব্যাপারেও একই অবস্থান নিচ্ছে কমিশন। এ দিনের বৈঠকেও বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে আধাসেনা এনে নির্বাচন করার দাবি জানানো হয়। গত শুক্রবার রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে কমিশনের তরফেও জানানো হয়েছিল, ৯২টি পুরসভায় সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তত ৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন। রাজের স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, অন্তত স্পর্শকাতর বুথগুলিতে আধাসেনার প্রয়োজন রয়েছে। এই মর্মে তিনি রাজ্য সরকারকে চিঠি দেবেন বলেও কমিশন সূত্রের খবর। তবে নবান্নের খবর, কমিশন চাইলেও সরকার আধাসেনা মোতায়েন করতে রাজি নয়। সে-ক্ষেত্রে অবশ্য সরকারের সঙ্গে কোনও সংঘাতের পথে না-যাওয়ারই ইঙ্গিত মিলেছে কমিশন সূত্রে।

কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্বাচন করানোর দাবি কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছে শাসক দল। “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন স্বচ্ছ। বিরোধীরা নিজেদের ইতিহাসের দিকে ফিরে দেখছেন না। তাঁরা তো এ রাজ্যে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিলেন,” বলেন মেয়র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE