Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হরিদাস-ই এখন হরিহর আত্মা, সরব বিরোধীরা

কয়েক মাস আগেও দু’তরফের সম্পর্কে ছিল প্রবল শৈত্য! এখন বরফ গলে গভীর উষ্ণতা! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই নতুন সমীকরণ শোরগোল ফেলে দিয়েছে রাজ্য-রাজনীতিতে। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদীকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন মমতা। মোদীও সুযোগ পেলেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছেন।

মিছিলে অধীর চৌধুরী। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

মিছিলে অধীর চৌধুরী। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০৪:০৭
Share: Save:

কয়েক মাস আগেও দু’তরফের সম্পর্কে ছিল প্রবল শৈত্য! এখন বরফ গলে গভীর উষ্ণতা! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই নতুন সমীকরণ শোরগোল ফেলে দিয়েছে রাজ্য-রাজনীতিতে।

লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদীকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন মমতা। মোদীও সুযোগ পেলেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছেন। কিন্তু এ বার মোদীর দু’দিনের সফরে তার লেশমাত্র ছিল না! বিজেপি নেতারা বলছেন, সরকারি অনুষ্ঠান বলেই রাজনৈতিক মন্তব্য এড়াতে হয়েছে মোদীকে। আর তৃণমূল নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সমন্বয় করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রাজনীতির জল তাতে থেমে নেই! মোদী ও দিদির ‘অশুভ আঁতাঁতে’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রবিবারই কলকাতায় পথে নেমেছে কংগ্রেস। সিপিএম আরও একটু জল মেপে চলতে চাইলেও বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি-তৃণমূল দোস্তি যে নতুন পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে, তার জন্য কর্মীদের তৈরি থাকতে বলছে। কংগ্রেস-বামের লক্ষ্য আপাতত মমতার ঝুলি থেকে সংখ্যালঘু ভোট যতটা সম্ভব বার করে আনা।

দলের রাজ্য দফতর বিধান ভবন থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে এ দিন সেই লক্ষ্য গোপনও করেনি কংগ্রেস। মিছিল শেষে ম্যাটাডোর-মঞ্চ থেকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবেরা বোঝাতে চেয়েছেন, লোকসভা ভোটের আগে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ-প্রশ্নে তৃণমূল নেত্রী যখন কড়া ভাষায় মোদীকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, সংখ্যালঘুরা তখন মমতাকেই ত্রাতা ভেবেছিলেন। কিন্তু এর পর আর সংখ্যালঘুদের বোকা বানানো যাবে না বলে তাঁদের দাবি। অধীরদের মতে, রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু বিজেপি একের পর এক ‘জনবিরোধী বিল’ পাশ করাচ্ছে তৃণমূলের সমর্থনে। আর তৃণমূল নেত্রী মোদীকে বরণ করছেন সারদা কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচার তাগিদে। অধীরের কথায়, ‘‘সে দিন যিনি ছিলেন হরিদাস পাল, আজ তিনিই দিদির সঙ্গে হরিহর আত্মা! ভারতের হিন্দু সম্রাটের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলার মহারানি!’’

প্রবল গরমেও কংগ্রেসের মিছিলে লোক হয়েছিল ভালই। যা দেখে তৃপ্ত বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী, আবু তাহের, রবিউল আলম চৌধুরী বা দেবব্রত বসু, মহম্মদ খালেকের মতো কংগ্রেস নেতারা। মিছিল শেষে অধীরের প্রশ্ন, ‘‘বাংলায় এসে সারদা-কাণ্ডের কথা মোদীর এক বারও মনে পড়ল না? শুধু দিদিকে পেয়ে সব ভুলে গেলেন?’’ বার্নপুরে এ দিন মমতাকে মঞ্চে বসিয়েই ইউপিএ আমলে কেন্দ্রে কয়লা বা টু-জি কেলেঙ্কারি নিয়ে সরব হন মোদী। দলের মিছিলে না এলেও সেই প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হাসির খোরাক হয়েছেন! যাঁকে মঞ্চে বসিয়ে অন্যদের কেলেঙ্কারির কথা বলেছেন, তাঁর সর্বাঙ্গেই তো সারদা-দুর্নীতির কালি লেগে আছে!’’

সারদা, খাগড়াগড় বা পিংলা কোনও প্রসঙ্গই যে এ বার মোদী প্রকাশ্যে তোলেননি, তা নিয়ে সরব সিপিএমও। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, ‘‘বিধানসভা ভোটের আগে আরও কত কিছু হবে! বিজেপি-তৃণমূলের সমঝোতা হয়ে গেলেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না!’’ বিরোধীদের আক্রমণের জবাবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, তাঁরা মোটেও বিজেপির সঙ্গে ‘আপস’ করেননি। বাংলার উন্নয়নের স্বার্থে কেন্দ্র ও রাজ্য সমন্বয় রেখে কাজ করার কথা বলা হচ্ছে মাত্র। পার্থবাবুর কথায়, ‘‘একে যদি আপস বলে, রাজ্যের স্বার্থে এমন আপস বারবার হবে!’’

এই পরিস্থিতিতে সব চেয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্য বিজেপিই। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে রাহুল সিংহেরা যতই বলুন তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই চলবে, মোদীর এই সফরের বাতাবরণ যে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতায় ধাক্কা দিতে পারে, তা তাঁরাও বিলক্ষণ বুঝছেন। বিজেপির অন্দরের খবর, মোদীর কাছে বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বারবার অভিযোগ করে রাজ্য নেতারা চেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী এ দিন অন্তত দু’-একটি বাক্য যেন রাজ্যের সমালোচনায় খরচ করেন। কিন্তু শনিবার মোদী দলের রাজ্য প্রতিনিধিদলের কথায় বিশেষ উৎসাহ দেখাননি। বার্নপুরেও এ দিন রাজ্য বিজেপির আশাপূরণ হয়নি!

বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য যদিও বলছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যে সৌজন্য তাঁর দিক থেকে প্রাপ্য, সেটা এই মুখ্যমন্ত্রী আগে দেখাননি বলেই এখন অনেক কিছু অস্বাভাবিক লাগছে অনেকের! বিধানসভা ভোটটা কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই হবে আর সারদা তদন্তও সম্পূর্ণ হবে!’’ বাম-কংগ্রেস অবশ্য এতে ভুলছে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE